×

ফিচার

ব্যর্থতার মাঝেও আশা জাগিয়েছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৩৫ পিএম

ব্যর্থতার মাঝেও আশা জাগিয়েছে

যৌন হয়রানির বিচার চাওয়ায় খুন হন ফেনী জেলার সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। গত ৬ এপ্রিল নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে নুসরাতের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় তাকে। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে পুরো দেশ। ১০ এপ্রিল ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নুসরাত। ৬ মে এক নার্সকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করে বাসচালক ও সহকারীরা। জুলাই মাসে নারায়ণগঞ্জের একটি মাদ্রাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এর আগে ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লায় খুন হয়েছিলেন কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু। একই বছরের ২৪ আগস্ট রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রিশাকে ছুরিকাঘাত করে বখাটে ওবায়দুল। চার দিনের মাথায় মারা গিয়েছিল রিশা। এসব ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছিল সারাদেশ। দাবি উঠেছিল দ্রুত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার।

তবে নুসরাত হত্যার মামলার দ্রুত রায় ঘোষণা এবং ত্রিশ বছর পর সগিরা মোর্শেদ হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। আসামিদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ জন আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। মামলার সাত মাসেরও কম সময়ের মধ্যে, ৬১ কার্যদিবস শুনানির পর এ রায় ঘোষণা করা হয়। আর ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের সামনে খুন হন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক সগিরা মোর্শেদ। ওই ঘটনায় মন্টু মণ্ডলকে আসামি করে চার্জশিট দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

এক নারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই মামলায় ১৯৯১ সালে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। ২০১৯ সালের ১১ জুলাই মামলার স্থগিতাদেশ তুলে নিয়ে পুনঃতদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেয় আদালত। এরপর ত্রিশ বছর আগের ঢাকার একটি চাঞ্চল্যকর খুনের মামলার প্রকৃত রহস্য উদ্ধার ?করে পিবিআই। গ্রেপ্তার হয় চারজন প্রকৃত আসামি। যারা ইতোমধ্যে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে সগিরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। দীর্ঘ ত্রিশ বছর পর জানা যায়, পারিবারিক প্রতিহিংসার শিকার হন সগিরা। ঘরোয়া নানা বিষয়-আশয় নিয়ে সগিরার সঙ্গে তার ছোট জা মাহমুদার মধ্যে দ্ব›দ্ব লেগেই থাকত। তাই সগিরাকে শায়েস্তা করতে স্বামী চিকিৎসক হাসান আলী চৌধুরীর সঙ্গে শলাপরামর্শ করেন মাহমুদা। সগিরাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তারা। ২৫ হাজার টাকায় খুনি মারুফ রেজাকে ভাড়া করা হয়। মারুফ রেজা ছিলেন ডা. হাসান আলীর রোগী।

জানা যায়, নারী নির্যাতন ও হত্যার দেড় লাখেরও বেশি মামলার বিচার বছরের পর বছর ঝুলে আছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থার এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, নারী নির্যাতনের ঘটনায় ৯৭ শতাংশ মামলায় কোনো সাজা নেই। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের হিসাব মতে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে হওয়া ১ লাখ ৬০ হাজার ৭৫১ মামলা বিচারাধীন। সেগুলোর মধ্যে ৩৬ হাজার ৪৬৭টি মামলা বিচারাধীন পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে। এর বাইরেও হাজারখানেক মামলার বিচার স্থগিত আছে উচ্চাদালতের আদেশে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন সব ঘটনায় সাধারণত মামলা হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করতে আইনে ১৮০ দিন সময় বেঁধে দেয়া আছে। কিন্তু বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না।

এক অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, এসব মামলার বিচারে বিলম্ব হওয়ার মূল কারণ হলো আসামিরা সব সময় প্রভাবশালী। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের ছত্রছায়ায় অপরাধীরা চলাফেরা করে। বছরের পর বছর ঝুলে থাকে তদন্ত। এ রকম মামলা সাধারণত পুলিশ তদন্ত করে থাকে। পুলিশের কাছে সব ধরনের তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। ফলে পুলিশ দায়িত্বভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ে। সদিচ্ছারও অভাব থাকে। আবার যদি বিচারালয়ের কথা বলি, সেখানেও অনেক বেশি মামলা থাকায় বিচারে বিলম্ব হয়। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচার করতে দেশে যতসংখ্যক ট্রাইব্যুনাল আছে, তা পর্যাপ্ত নয়। দায়িত্বে থাকা আইনজীবীদেরও গাফিলতি থাকে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিচালক (লিগ্যাল এইড) এডভোকেট মাকসুদা আক্তার লাইলি বলেন, আইন অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে এসব মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন করার কথা। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App