×

পুরনো খবর

কোন্দলে জর্জরিত আ.লীগ, বিএনপির ভরসা জামায়াত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ০৩:৩৬ পিএম

কোন্দলে জর্জরিত আ.লীগ, বিএনপির ভরসা জামায়াত
মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত বাগেরহাট-৪ আসনে স্বাধীনতার পর থেকে বেশির ভাগ সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরাই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে এবার অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত দলটির নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে হামলা-মামলা, হতাহতের ঘটনার নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। অপরদিকে নিজেদের অবস্থা দুর্বল হলেও জামায়াতের ভোটব্যাংকই বিএনপির ভরসা এ আসনে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের শেখ আবদুল আজিজ, ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতা আ. লতিফ খান, ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এডভোকেট আলতাফ হোসেন, ১৯৮৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মিয়া আব্বাস উদ্দিন, ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর মুফতি মাওলানা আব্দুস সাত্তার আকন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারির নির্বাচনে বিএনপির আরশাদুজ্জামান, ১৯৯৬ সালের ১২ জুনে আওয়ামী লীগের ডা. মোজাম্মেল হোসেন ও ২০০১ সালে জামায়াতে ইসলামীর মুফতি মাওলানা আব্দুস সাত্তার আকন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ ও সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসনে আবারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন। আগামী নির্বাচনে এ আসনে তিনি ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাবেক মোরেলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট প্রবীর হালদার, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক এইচ এম মিজানূর রহমান জনি সম্ভাব্য প্রার্থী। এদের মধ্যে ডা. মোজাম্মেল হোসেন, এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন ও এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ দুই উপজেলায় গণসংযোগ করে সরকারের উন্নয়নের কথা ভোটারদের মাঝে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টাসহ মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে জোর লবিং চালাচ্ছেন তারা। ২০১৪ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর ডা. মোজাম্মেল হোসেনের অনুসারীদের সঙ্গে মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন ও শরণখোলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কামাল উদ্দিন আকনের অনুসারীদের কোন্দল শুরু হয়। সম্প্রতি মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৌবঞ্জহাটি ইউনিয়নের ২ নেতা নিহত হওয়াকে কেন্দ্র কোন্দলের মাত্রা চরমে পৌঁছায়। কোন্দল এখনো বিদ্যমান রয়েছে। নির্বাচনের আগে কোন্দল নিরসন না হলে আর বিএনপি-জামায়াত ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে এলে এ আসনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির আশঙ্কা করছে নেতাকর্মীসহ সচেতন মহল। বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বিএনপি জোট সরকারের সময় এলাকায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। মোরেলগঞ্জ-শরণখোলায় আঞ্চলিক মহাসড়ক, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, রায়েন্দাখালে সেতু, অসংখ্য রাস্তা পাকাকরণ, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শতাধিক ভবন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ ২টি কলেজ জাতীয়করণ এবং ঘরে ঘরে বিদ্যুতায়নসহ ব্যাপক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায়। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু করেছিলাম যার সুফল এখন দেশের মানুষ পাচ্ছে। সিডরে বিধ্বস্ত এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করেছি। নেত্রী আমাকে ৫ বার মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি ৪ বার নৌকা উপহার দিয়েছি। একবার আমাকে হারানো হয়েছে। আশা করি নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে এবারো তাকে নৌকা উপহার দিতে পারব। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ৪৫ বছর ধরে আছি। আশির দশকে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। সেখানে অধ্যয়নরত অবস্থায় আমিসহ ১১ জনকে এক শিবির কর্মী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। তখন ১৫ দলের নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তায় মামলা থেকে খালাস পাই। নাটোরে ছাত্রদলের হামলার সময় মানবঢাল দিয়ে নেত্রীকে রক্ষা করতে গিয়ে আমিসহ অর্ধশত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আহত হই। আমি এরশাদ সরকারের সময় ডিটেনশন খেটেছি। মোরেলগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের ১৫ বছর সাধারণ সম্পাদক ও ২০০৩ সাল থেকে সভাপতি হিসেবে সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। এলাকার গণমানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি দলের মনোনয়ন পাব। এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দল ও গণমানুষের জন্য কাজ করছি। নেত্রীর নির্দেশে সারা দেশে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করেছি। ২০১৪ সালের নির্বাচনকালে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের তাÐবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিহত করেছি। আমি মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছি। দুই উপজেলার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ আমাকে গ্র্রহণ করেছেন, তাদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। তারা আমার সঙ্গে আছেন। আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। অপরদিকে ঘরোয়া পরিবেশে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করা ছাড়া মাঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের দেখা যায় না বললেই চলে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা বেশ সক্রিয়। এ ছাড়া এলাকা তাদের পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে। এ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও সাদা দলের আহবায়ক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, বাগেরহাট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মো. মনিরুল হক ফরাজী, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহসভাপতি কাজী খাইরুজ্জামান শিপন, মোরেলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল হক বাবুল। এর মধ্যে ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, বর্তমানে সাদা দলের আহবায়ক। আমাকে দল যোগ্য মনে করে যদি মনোনয়ন দেয় তবে আমি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন করব। মো. মনিরুল হক ফরাজী বলেন, ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। ১/১১-এর পর থেকে মিথ্যা মামলার শিকার নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সাহায্য-সহযোগিতা দিয়েছি। ২০১৩ সাল থেকে কেন্দ্রের সব আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেতে গিয়ে ১২টি মামলার আসামি হয়েছি। আশা করি, দল এ বিষয় বিবেচনা করে মনোনয়ন দেবে। খায়রুজ্জামান শিপন বলেন, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতৃত্ব থেকে জেলা বিএনপির সহসভাপতি হয়েছি। গত ১০ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। দল যদি নির্বাচনে যায় তবে মনোনয়নের ক্ষেত্রে আমি শতভাগ আশাবাদী। শহিদুল হক বাবুল বলেন, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে ৩৮ বছর ধরে আছি। আশির দশকে ছাত্রদলের রাজনীতির মধ্য দিয়ে দলে প্রবেশ করে জেলা যুবদল ও বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং সদস্য সচিব হয়েছিলাম। বর্তমানে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি মনোনয়ন প্রত্যাশা করি। আশা করি দল বিবেচনা করবে। এদিকে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর তেমন কোনো তৎপরতা না থাকলেও নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে দলের নেতাদের। মাঠ পর্যায়ে নিজস্ব কৌশলে তারা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। আগামী নির্বাচনে এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী তালিকায় বাগেরহাট কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুল আলীমকে রেখেছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সংখ্যালঘুবিষয়ক উপদেষ্টা সোমনাথ দে গণসংযোগ করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App