মিতু হত্যাকাণ্ড : আদালতে চার্জশিট দাখিল, শুনানি ১০ অক্টোবর

আগের সংবাদ

নতুন ৮ নদীর পানিবণ্টনে নজর : আলোচনায় সম্মত বাংলাদেশ ও ভারত, আগামী মার্চ এপ্রিলে ঢাকা সফরের সম্ভাবনা ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রীর

পরের সংবাদ

একজন সন্ত প্রকৃতির মানুষ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নিসর্গবিদ, উদ্ভিদবিজ্ঞানী, চিন্তাবিদ, লেখক দ্বিজেন শর্মা ছিলেন (১৯২৯-২০১৭) আমাদের বিজ্ঞানসাহিত্যের প্রাণপুরুষ। এক অনন্য সাধারণ মানুষ ছিলেন। শিক্ষকতা, লেখালেখি, অনুবাদ, শিক্ষাভাবনা, উদারতা, মানবতা- সর্বত্রই রেখে গেছেন তিনি স্বাতন্ত্র্যের ছাপ।
তিনি ছিলেন একজন সন্ত প্রকৃতির মানুষ। তিনি প্রকৃতি ও মানুষের জীবনের মধ্যে অবিরাম সুষম সংযোগ ঘটানোর জন্য চেষ্টা করেছেন। স্বপ্ন দেখেছেন মানুষের জন্য একটি সুষম সমাজের। এই স্বপ্নই তাকে ন্যায়পরায়ণ হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তিনি ছিলেন অসাধারণ মানবিক কর্মের আদর্শ। দ্বিজেন শর্মা নিসর্গের মধ্য দিয়ে জীবনের নতুন অর্থের সন্ধান করেছেন। তিনি প্রকৃতিকে আমাদের জীবন চলার একটি অংশ হিসেবে দেখতেন। দ্বিজেন শর্মার ধারণা ছিল বাংলাদেশের প্রকৃতি ও পরিবেশের বর্ণনা হয়তো আরো কয়েক দশক পর্যন্ত পাওয়া যাবে। তারপর থাকবে বইয়ে লেখা কিছু খণ্ডচিত্র আর বিমূর্ত পরিসংখ্যান।
প্রকৃতির নিবিড় ছায়াঘেরা পরিবেশে জন্ম হয়েছিল তার। তার পিতা এবং পিতামহ ছিলেন কবিরাজ। যার ফলে নানা প্রজাতির ঔষধি গাছের সাথে তার বেড়ে ওঠা। পাঠ গ্রহণ করেছেন প্রকৃতির কাছ থেকে। তিনি তার শৈশবের স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন- ‘… পাথারিয়া পাহাড়ের খুব কাছেই আমাদের বাড়ি। মৌলভীবাজারের বড়লেখার শিমুলিয়া গ্রামে। প্রত্যন্ত অঞ্চল। এখন অবশ্য অনেক বদলে গেছে। আমি বলছি ৭০ বছর আগের কথা। আমার বাবা ছিলেন কবিরাজ; তার বাবা এবং তার বাবাও তাই। ফলে আমাদের বাড়িটা ছিল গাছ-গাছালিতে ভরা। নানা প্রজাতির ফুল-ফলের গাছ তো ছিলই। বাড়তি ছিল ঔষধি গাছ। সেসব গাছ পাহাড় থেকে সংগ্রহ করে এনে লাগাতেন তারা। আমিতো ওইসব গাছের সঙ্গেই বড় হয়েছি। কত প্রজাতির গাছ যে ছিল সে পাহাড়ে! আর ছিল নানা জাতের পাখ-পাখালি। ময়না, টিয়া, ঝুঁটি শালিক, সরালীসহ নানা জাতের হাঁস। আমাদের ওই বাগানবাড়ি দেখাশোনা করতেন এক আদিবাসী, নাম সুবাবুড়া। কত রকম তীর, ধনুক আর শিকার করার অস্ত্র যে তার ছিল। বলতে পারো সেই-ই আমার প্রথম শিক্ষক। আর দ্বিতীয় শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ। বনে ফুল ফুটলে কত রকম পাখি যে আসত। ভীমরাজ নামের লম্বা লেজঅলা নীল রঙের পাখি আসত। কী যে মিষ্টি ছিল তার গানের গলা! এ ছাড়াও তিতির, বনমোরগ, মায়া হরিণ, সাম্বার, সজারু, বনরুই, রামকুত্তা, স্থল কচ্ছপ, শঙ্খচূড় সাপ আরো কত রকম জীবজন্ত। পাখি ধরা খুব কঠিন ছিল। আমরা বনরুই ধরতাম। ঢিল ছুড়লেই লম্বা লেজ গুটিয়ে গোল হয়ে যেত। একবার একটা বড় স্থল কচ্ছপও ধরেছিলাম। প্রকৃতির এই পরিবেশে আমার বেড়ে ওঠা, মানস গঠন। প্রকৃতি থেকে তাই কখনো বিচ্ছিন্ন হতে পারিনি আমি। নিজেকে আমার এখনো আদিবাসীই মনে হয়।’
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শহরে উপোসী জীবনযাপন করতেন প্রকৃতির রং-রূপ-রস-গন্ধহীন হয়ে। এই আক্ষেপ ছিল তার। জানতেন গাছ, ফুল, ফল, পাখি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য- এসব শিশুদের মানস গঠনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রকৃতির বিপর্যয় সম্পর্কে যত জেনেছেন, কাতর হয়েছেন। বিষণ্ন হয়েছেন।
পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলেছেন, সিন্ধু সভ্যতার প্রাচীন নগরী মহেঞ্জোদারো লুপ্ত হয়েছিল পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে। মরুকরণ প্রক্রিয়া এ অঞ্চলকে গ্রাস করে ফেলেছিল। উর্বর জনপদ হয়ে পড়েছিল বন্ধ্যা। মৃত্তিকায় ছিল না ফসলের সম্ভাবনা। আমাদের চারপাশে কি বর্তমানে সেই ভয়াবহ লক্ষণটি প্রকট হয়ে ফুটে উঠেছে? আমরা তো সেই জনপদের বাসিন্দা, ‘এ দেশে শ্যামল রং রমণীর সুনাম শুনেছি’। এই জলজ দেশের কাজলকালো, ঘন মেঘের ছায়া কি তাহলে ধূসর স্মৃতি হয়ে যাবে? দিগন্তে মরীচিকাও থাকবে না। নির্বাক, নীল নির্মম মহাকাশ আমাদের এক কঠিন সত্যের সামনে মুখোমুখি দাঁড় করাবে। সোনালি ডানার চিলদের অবাধ ওড়াউড়িতে কাতর হয়ে থাকা ভিজে মেঘের দুপুরগুলোর স্নিগ্ধতা আর থাকবে না। খর রোদের তাপপ্রবাহে আমাদের অধিবাসীরা তামাটে জাতিতে পরিণত হবে। দ্বিজেন শর্মার মতো প্রকৃতিপুত্র মানুষেরা এ রকম উৎকণ্ঠিত প্রহরে আমাদের জন্য শুভকর বার্তা শোনানোর জন্য প্রয়াস নিয়েছেন। চাইছেন আমাদের মঙ্গলবোধকে জাগ্রত করতে। শুভ চেতনাকে উদ্দীপিত করতে। বিভ্রান্তির চোরাবালিতে যখন তলিয়ে যেতে বসেছি তখন তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। হারানো মূল্যবোধকে আবার একজন প্রকৃতিপুত্র গভীর বিশ্বাসে ফিরিয়ে আনতে চাইছেন। তিনি হৃদয়ের কথা কহিতে ব্যাকুল। আমরা কি দ্বিজেন শর্মার আহ্বানকে সত্যিকারভাবে অনুধাবন করতে পারছি? আমাদের দেশে প্রকৃতি ও বিবর্তনচর্চার পথিকৃৎ তিনি। সারা জীবন ধরে প্রবল এক মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে উদ্ভিদ জগতের অজানা, রহস্যময়, বিস্ময়কর তথ্যাবলি উন্মোচন করেছেন।
দ্বিজেন শর্মার লেখায়, ‘রবীন্দ্রনাথই তো চিনিয়ে দিলেন প্রকৃতির নিগূঢ় সৌন্দর্য। প্রকৃতির রূপ-রসের সঙ্গে যে আমাদের হৃদস্পন্দনের সম্পর্ক- এটাতো রবীন্দ্রনাথের কাছেই শিখলাম। রবীন্দ্রনাথ শুধু আমার কেন, আমাদের পুরো জাতির শিক্ষক। তিনি আমাদের মুখের ভাষা দিয়েছেন।’
তিনি কি কবিগুরুর সেই ‘বলাই’, যে কিশোর গাছ কাটলে দারুণ রকমের কষ্ট পায়। তিনি সেই সরল বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, উদ্ভিদের সঙ্গে মানুষের কত নিবিড় সখ্য রয়েছে।
প্রকৃতিপুত্র দ্বিজেন শর্মাকে আমার কাছে সব সময় মনে হতো রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত গল্পের চরিত্র বলাইয়ের মতো। তিনি যেন তার চিত্ত-চেতনায় অবিরাম ধারণ করে রেখেছেন বলাইর বৃক্ষ সম্পর্কিত বোধশক্তিকে। তার জীবনবোধে সক্রিয় ছিল বলাইর সেই বিশ্বাস। তার জীবনের প্রধান অবলম্বনই ছিল বলাইয়ের অনুভূতি।
আমি বহুবার দ্বিজেন শর্মাকে আমার এই ধারণার কথাটি জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আপনিতো বড় হয়ে যাওয়া বলাই। তিনি আমার কথা শুনে স্মিত হাসতেন। আমার কাছে তখন মনে হতো যে তিনি তা সমর্থন করছেন।
রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত বলাই গল্পের অংশবিশেষ থেকে বলাইয়ের চিন্তা- চেতনার নমুনা আমরা পেতে পারি- ‘… মাঘের শেষে আমের বোল ধরে, তার একটা নিবিড় আনন্দ জেগে ওঠে ওর রক্তের মধ্যে, একটা কিসের অব্যক্ত স্মৃতিতে, ফাল্গুনে পুষ্পিত শালবনের মতোই ওর অন্তর প্রকৃতিটা চারদিকে বিস্তৃত হয়ে ওঠে, ভরে ওঠে, তাতে একটা ঘন রঙ লাগে।’
বলাই গল্পে বলাইয়ের জীবনে গাছপালার মূল সুরগুলোই প্রবল হয়ে উঠেছে। ছেলেবেলা থেকে চুপচাপ চেয়ে চেয়ে দেখাই তার অভ্যাস, নড়েচড়ে বেড়ানো নয়। পুব দিকের আকাশে কালো মেঘ স্তরে স্তরে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়ায়, ওর সমস্ত মনটাতে ভিজে হাওয়া যেমন শ্রাবণ-অরণ্যের গন্ধ নিয়ে ঘনিয়ে ওঠে, ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ে, ওর সমস্ত গা যেন শুনতে পায় সেই বৃষ্টির শব্দ। ছাদের ওপর বিকেলবেলার রোদ্দুর পড়ে আসে। বলাই গা খুলে আকাশ থেকে কী একটা সংগ্রহ করে নেয়। আর দ্বিজেন শর্মা বলতেন, আমরা প্রকৃতিকে শোষণ করে চলেছি বলেই প্রকৃতি আমাদের প্রত্যাখ্যান করছে।
আমাদের পরিবেশ এখন ভয়াবহভাবে বিপর্যয়ের মুখে। চারপাশে অশনি সংকেত পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতের লোকেরা কি গাঙ্গেয় অববাহিকায় এ অঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া বিষয়ে গবেষণা করবে? মহেঞ্জোদারোর মতো বিপন্ন এক অঞ্চলের করুণ ইতিহাস রচনা করবে? রচনা করবে কীভাবে তামাটে জাতির অধিবাসীরা তাদের বনাঞ্চলের সমূহ বিনাশ করেছিল। উদ্ভিদ জগৎকে বিপন্ন করেছিল। নদীর স্বচ্ছ পানিপ্রবাহকে বর্জ্য ফেলে দূষিত করেছিল। তারা রুপালি শস্য মৎস্য প্রজাতিকে লুপ্ত করেছিল। পরিবেশ বিপর্যয়ের মূল কারণ যে উদ্ভিদের যথেচ্ছ নিধন প্রক্রিয়া, এ সতর্কবাণী দ্বিজেন শর্মা বহুভাবে আমাদের কাছে উচ্চারণ করেছেন। নষ্ট মানুষের চিৎকারের জন্য তার বিনম্র কণ্ঠের উচ্চারণকে আমরা শুনতে পাইনি। আমি কান পেতে রই।
আমাদের দেশের পরিবেশ ক্রমাগতভাবে দূষণের শিকার হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে শক্তিশালী গোষ্ঠীর অশুভ তৎপরতায় এই দূষিতকরণ প্রক্রিয়াটি প্রসারিত হচ্ছে। বিপন্ন পরিবেশের জন্য আমাদের অস্তিত্ব এখন ভয়াবহ সংকটের মুখে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য হয়েছে ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন। জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন। পরিবেশ দূষণের মাত্রা কোথাও এতটাই বিস্তৃত মনে হয় যে, ‘নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস’। যেন এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে আমরা ক্রমাগত ঘুরপাক খাচ্ছি। আমাদের নদী, বন, মাটি বিপন্ন হয়েছে। নদীগুলো তরল বর্জ্যরে স্রোতে কম্পমান। ইটখোলায় মাত্রাতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, দ্রুত কমে যাচ্ছে ফলদ গাছের ফলন। ফসলি জমিতে অবাধে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। আর এভাবে আমাদের জনপদগুলোতে মৃত্যুর ঘণ্টা বেজে চলেছে। উর্বরতা শক্তির ক্ষয় ঘটছে। প্রধান সমস্যা হচ্ছে পরিবেশ দূষণের এ প্রক্রিয়ায় সামাজিকভাবে শক্তিশালী গোষ্ঠীরা জড়িত। বেনিয়াগোষ্ঠী লোভে এবং অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য তাদের অশুভ তৎপরতা অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা তাদের অবৈধ কার্যক্রমকে বৈধতা দিতে সক্ষম হয়েছে।
দ্বিজেন শর্মা তার সমস্ত জীবনের বিশ্বাস, বোধ, স্বপ্ন, আশা-আকাক্সক্ষা আর লেখনি দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন যে তিনি সার্বিক অর্থেই একজন প্রকৃতি পুত্র। নিসর্গ কথক তিনি। তার হাতে নতুন এক মাত্রা লাভ করেছিল নিসর্গ সাহিত্য। তিনি তার জীবন দর্শনকে আমাদের মাঝে সুচারুরূপে সঞ্চারিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার রচিত ‘গাছের কথা’, ‘ফুলের কথা’, ‘গহন কোন বনের ধারে’, ‘কুড়চি তোমার লাগি’ ‘প্রকৃতিমঙ্গল’, ‘ফুলগুলো যেন কথা’, ‘এমি নামের দুরন্ত মেয়েটি’, ‘নিসর্গ নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা’, ‘জীবনের শেষ নেই’, ‘হিমালয়ের উদ্ভিদ রাজ্যে ডাল্টন হুকার’, ‘ডারউইন ও প্রজাতির উৎপত্তি’, ‘বিগল যাত্রীর ভ্রমণকথা’, ‘বিজ্ঞান ও শিক্ষা : দায়বদ্ধতার নিরীক্ষা’ ইত্যাদি গ্রন্থ নতুন ভাবনারীতির পরিচয় দিয়েছে। সৃষ্টি করেছে অপূর্ব এক গদ্যশৈলী। উদ্ভিদ ও প্রকৃতি নিয়ে তার লেখা ‘শ্যামলী নিসর্গ’কে বিবেচনা করা হয় আকরগ্রন্থ হিসেবে। তার লেখায় গাছ, ফুল বা ফলের বর্ণনায় ফিরে ফিরে এসেছে মৈমনসিংহ গীতিকা, জীবনানন্দ দাশ, জসীমউদ্দীন, সিলেটের লোকগীতি কিংবা মধ্যযুগের কাব্যগাথা।
এভাবে তার রচনা মাধুর্যের ভেতর দিয়ে তিনি তার চিন্তা ও কর্মের প্রবাহকে উত্তর প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
তার মূল্যায়ন করেছেন প্রাবন্ধিক মফিদুল হক এভাবে- আমরা মেতে থাকি দৃশ্যমান বস্তুসামগ্রী নিয়ে আর দ্বিজেন শর্মা খুঁজে ফিরেছেন গাছের পাতার কম্পন, বুঝতে চেয়েছেন কী কথা বলে ফুলদল, জীবন মিলিয়ে নিতে চেয়েছেন প্রকৃতি ও নিসর্গের সঙ্গে এবং অদৃশ্যমান সম্পদের সন্ধান দিতে চেয়েছেন সবাইকে, বিশেষভাবে তরুণদের…।
প্রকৃতি সংরক্ষণে বিশেষ অবদান রাখার জন্য দ্বিজেন শর্মা ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ২০০২ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১১ সালে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন থেকে প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক পান।
দ্বিজেন শর্মার প্রকৃতিবিষয়ক ধ্যানধারণা ফুটে উঠেছে ‘পরিবেশপত্র’ পত্রিকার সম্পাদকীয় রচনায়- ‘… আমরা গাছ ও মাছকে তাদের নিজ নিজ ইকোসিস্টেম বা বাস্তুসংস্থানিক প্রণালির অংশ হিসেবে দেখি না, দেখি সাধারণ পণ্য হিসেবে। এটা স্পষ্টতই বাজার অর্থনীতির প্রভাব বা কুপ্রভাব। মানুষ যতদিন নিজেকে গাছ-মাছসহ সমগ্র জীবতুল ও ভৌত পরিবেশের সঙ্গে মিশিয়ে না দেখতে শিখবে, ততদিন তাঁর দৃষ্টি খণ্ডিতই থেকে যাবে, প্রকৃতির মধ্যে তাঁর যথার্থ অবস্থান নির্ণয়ে সে ব্যর্থ হবে এবং পরিপোষক উন্নয়নের পথটিও আর খুঁজে পাবে না।’
তরুণদের পরিবেশপ্রেমী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাওয়া সংগঠক দ্বিজেন শর্মা বলেছিলেন, প্রতি শহীদের স্মরণে অন্তত একটি করে গাছ লাগান।
দ্বিজেন শর্মার একান্ত প্রিয় বই ছিল ফরাসি লেখক সাঁৎ ঝুপেরির ‘দ্য লিটল প্রিন্স’। খুদে রাজপুত্র, যে বলেছিল- ‘কেবল হৃদয় দিয়েই দেখা যায় সঠিকভাবে। জীবনে যা প্রয়োজনীয় সেসব চোখে দেখা যায় না।’
জীবিকার তাড়না জীবনকে যেখানেই নিয়ে যাক, দ্বিজেন শর্মা নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন প্রাণ ও প্রকৃতির রূপের সন্ধানে। দ্বিজেন শর্মা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় নানা প্রজাতির গাছ লাগিয়েছেন, তৈরি করেছেন উদ্যান ও বাগান। গাছের পরিচর্যা ও সংরক্ষণ এবং প্রকৃতিবান্ধব শহর গড়ার জন্য আজীবন প্রচার চালিয়ে গেছেন। শেষের দিকে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একদিন থাকব না, কিন্তু গাছগুলো থাকবে। মানুষকে অক্সিজেন বিলাবে। জীবনে এর চেয়ে আনন্দ আর কিছুতে নেই।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়