১০ সরকারি ব্যাংকে নতুন ২০ ডিএমডি

আগের সংবাদ

মাসসেরার দৌড়ে সাকিব

পরের সংবাদ

খাল-নালায় পড়ে মৃত্যুর দায় চউক-চসিকের : তদন্ত কমিটির রিপোর্ট

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : নগরীর মুরাদপুরে খালে পড়ে সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমদের নিখোঁজ হওয়ার দায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। এ ঘটনার তদন্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে তা উঠে এসেছে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত সাত সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি গত সোমবার প্রতিবেদন জমা দেয়। অথচ এই ঘটনাসহ এ রকম ঘটনায় চউক এবং চসিক একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করে নিজেদের দায়দায়িত্ব এড়াতে চেয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট জলাবদ্ধতার মধ্যে নগরীর মুরাদপুর মোড়ে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় চশমা খালে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হন সালেহ আহমেদ (৫৫)। এরপর তার সন্ধানে খালে অনেক তল্লাশি চালানো হলেও তার আর কোনো হদিস মেলেনি।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিবেদন বিভাগীয় কমিশনারের কাছে জমা দিয়েছি। তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রতিবেদনটি পাঠাবেন।’ তদন্তে সালেহ আহমদের নিখোঁজের ঘটনায় ‘কারা দায়ী’ তা চিহ্নিত করতে বলা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, চউক এবং সিটি করপোরেশন সেখানে কাজ করার ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত। সুতরাং দায়দায়িত্বও তাদের। সেখানে প্রকল্পের কাজ চলমান এবং এ জন্য স্ল্যাবগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। আশেপাশের দোকানদারদের কাছে জিজ্ঞাসা করে তদন্ত কমিটি জানতে পেরেছে যে, সেখানে (সড়ক সংলগ্ন খালের ওপর) আগে স্ল্যাব ছিল। স্ল্য্যাব ভাঙা হলেও কোনো রকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ওই ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়ার পর পাশ দিয়ে ফিতা দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়।
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, এটা খুব মর্মান্তিক একটা বিষয়। এখনো উনার সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজ ব্যক্তির ছেলের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী একটি তালিকা দিয়েছিলেন যে পাঁচ হাজারের মতো এরকম ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট আছে। সেখানে তারা দেড় হাজারের মতো স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। তারা দাবি করে বাকিগুলো সিডিএর ৩৬টি খালের সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায়।
তিনি বলেন, আগামী বর্ষার আগে অবশ্যই সব পয়েন্টকে নিরাপত্তার আওতায় আনতে হবে। আমরা বলেছি, সিডিএ কাজ করছে বলে- সিটি করপোরেশন চুপচাপ বসে থাকলে হবে না। কারণ তাদের মূল দায়িত্ব নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুযোগ নিশ্চিত করা যা তারা এড়িয়ে যেতে পারে না।
সালেহ আহমদের মৃত্যুর পর এই ঘটনায় দায় নিয়ে একে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে পার পেতে চেয়েছিল। গত ২৫ আগস্ট জলাবদ্ধতার মধ্যে নগরীর মুরাদপুর মোড়ে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় চশমা খালে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হন সালেহ আহমেদ (৫৫)। বর্জ্যে ভরা ওই খালে ও আশেপাশে কয়েকটি খালে টানা কয়েকদিন অভিযান চালিয়েও আর তার খোঁজ মেলেনি।
সালেহ আহমদ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের মনসা এলাকার বাসিন্দা। তিনি নগরীর চকবাজারে সবজি বিক্রি করতেন। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। তার ছেলে সাদেকুল্লাহ মাহিন চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবেন। সালেহ আহমদ ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সালেহ আহমদের খালে পড়ে যাওয়ার একদিন পর তার বাসায় গিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন মেয়র। পরে তার ছেলে মাহিনকে সিসিসিতে একটি অস্থায়ী পদে নিয়োগ দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন খালে বা নালায় পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। সালেহ আহমদের পর ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় নবী টাওয়ারের পাশের ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় নাছির ছড়া খালে পড়ে নিখোঁজ হন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া (১৯)। পরে গভীর রাতে তার লাশ উদ্ধার হয়। সাদিয়ার মৃত্যুর পরও খালে পড়ে মৃত্যুর দায় নিয়ে পরস্পরকেই দোষারোপে ব্যস্ত ছিল সিটি করপোরেশন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়