গ্রামীণ ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা : অর্থ আত্মসাৎ

আগের সংবাদ

মন্ত্রী-এমপির হস্তক্ষেপে লাগাম

পরের সংবাদ

রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা : পণ্যের বৈচিত্রকরণই প্রধান বাধা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ শেষ। অথচ দেশের প্রধান রপ্তানিযোগ্য পণ্যগুলো এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে- পোশাক, হিমায়িত পণ্য, চিংড়ি, চামড়া, পাট ইত্যাদি পণ্য রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা সরকারের ছিল তা পূরণ হয়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষেও রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার শঙ্কাই বেশি। দেশে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা থাকলেও ব্যবসার পরিবেশ অনুকূলে নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, দেশের রপ্তানিমুখী পণ্যে বৈচিত্র্য নেই। এতে বিদেশি ক্রেতা হারাচ্ছে দেশ। এদিকে পণ্য রপ্তানির যে ঘাটতি রয়েছে তা অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই পূরণ হবে বলে আশাবাদী সরকার।
২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে বাংলাদেশ। কিন্তু বেশকিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদিত পণ্য ও বাণিজ্যিক সেবা রপ্তানির শতকরা হিসাবে গত কয়েক বছর ধরে স্বল্পোন্নত বা এলডিসির ৪৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের সারিতে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ বলছে, স্বল্পোন্নত ৪৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি-জিডিপি অনুপাত ৩০তম। অর্থনীতিবিদরা বার বার পণ্যের বৈচিত্র ও বহুমুখীকরণের তাগিদ দিলেও এ বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে।
বলা হয়, এক পণ্যে নির্ভরতা দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিকে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে দেশের অন্য কোনো খাতও এখন পর্যন্ত নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে তৈরি পোশাক শিল্পের কাছাকাছিও আসতে পারেনি। রপ্তানি ঝুড়িতে বৈচিত্র্য আনার সম্ভাবনা আছে, এমন খাতগুলোর মধ্যে আছে- চামড়া ও জুতা, হালকা প্রকৌশল এবং প্লাস্টিক। কিন্তু রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই উৎপাদিত পণ্যগুলোর কোনোটিই এক নম্বর অবস্থানে থাকা খাতটির ধারেকাছেও নেই। পোশাক খাতের রপ্তানির হিসাব বিলিয়নে করা হলেও অন্যগুলোর হিসাব এখনও কয়েক মিলিয়নেই আটকে আছে। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে- যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে খুবই কম। যদি আমি রেডিমেড গার্মেন্টসের কথা বলি, সব মিলিয়ে বললে ৩ শতাংশের কাছাকাছি। বিশেষ করে রেডিমেড গার্মেন্টসের ৮৪ থেকে ৮৫ শতাংশ আমদানিকারক দেশ। সার্বিকভাবে আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়িয়ে চাহিদামাফিক রপ্তানিমুখী পণ্যে বৈচিত্র্য নেই বলে রপ্তানির ওপর একটা প্রভাব পড়েছে।
এফবিসিসিআই ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল হুদা চপল বলেন, চেম্বার কানাডার কর্মকর্তারা আসছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য তারা খুব আগ্রহী। আমরা এফবিসিসিআইওয়ের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার। এক্সপোর্ট না বাড়লে দেশের অর্থনীতি ভালো হবে না।
বাংলাদেশ বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির প্রেসিডেন্ট রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, আমার মনে হয় না লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। কারণ সেলস ভ্যালু ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা যেহেতু পাট খাত থেকে ম্যাটেরিয়াল এক্সপোর্ট করে থাকি এখানে যারা ম্যানুফ্যাকচার আছে তাদের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে।
এদিকে পণ্য রপ্তানির যে ঘাটতি রয়েছে তা অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই পূরণ হবে বলে আশাবাদী সরকার। এছাড়া পিছিয়ে পড়া পণ্যগুলোকে কীভাবে আরো বেশি রপ্তানিযোগ্য করা যায় তা নিয়েও কাজ চলছে বলে জানালেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিন মাসে ৫ বিলিয়নের উপরে গার্মেন্টস রপ্তানি করা হয়েছে। গত বছর শেষ তিন মাসের থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি হয়েছে। তাই গার্মেন্টস শর্টফল হওয়ার কোনো কারণ নেই। যদি হয়েও থাকে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। এছাড়া রপ্তানি বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কমার্শিয়াল উইং সম্প্রসারণে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ শেষ হলেও দেশের প্রধান রপ্তানিযোগ্য পণ্যগুলো এখনো লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে অন্য খাতগুলগুলোর মধ্যে শুধু চামড়া খাতের রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করতে পেরেছে। প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি আধ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। আর প্লাস্টিক ২০০ মিলিয়ন ডলারও ছুঁতে পারেনি। বিদায়ি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়কালে তৈরি পোশাক একাই দেশে এনেছে ৩৭ বিলিয়ন ডলার।
সামগ্রিক রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের হিস্যা ৮৪ শতাংশের বেশি। আর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের হিস্যা ২ দশমিক ২ শতাংশ, প্লাস্টিকের হিস্যা মাত্র ০ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং প্রকৌশল পণ্যের হিস্যা ১ শতাংশ। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সরকার এলডিসি থেকে টেকসই উত্তরণের জন্য রপ্তানি খাতের বহুমুখীকরণকে শীর্ষ অগ্রাধিকার দিয়েছে। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশের মোট রপ্তানিতে চামড়া, প্রকৌশল, জাহাজ নির্মাণ, ওষুধ, সিরামিক ও প্লাস্টিকের মতো শিল্পগুলোর হিস্যা হবে ২৫ শতাংশ। সর্বশেষ রপ্তানির তথ্য অনুসারে, এই অনুপাত এখন মাত্র ৪ শতাংশ।
শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধান নীতি সহায়তাগুলোতে এখনো মূলত পোশাক খাতের ওপরই গুরুত্ব দেয়া হয়। যার ফলে পোশাক খাত এখনো অপরাজেয় এবং অন্য সম্ভাবনাময় খাতগুলো পেছনে পড়ে রয়েছে। অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরের মতে, রপ্তানি প্রণোদনা বৈষম্যমূলক, এখনো একটি একক পণ্যের প্রতি পক্ষপাতমূলক। লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি নাসিম মঞ্জুর বলেন, সরকারের উচিত চামড়া শিল্পসহ বৈচিত্র্যময় রপ্তানি খাতগুলোর জন্য প্রণোদনাসহ বিদ্যমান সহায়তা অব্যাহত রাখা, যাতে খাতগুলো শক্তিশালী হয়ে নিজেদের রপ্তানি বাজার বড় করে দেশের মসৃণ এলডিসি উত্তরণে অবদান রাখতে পারে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের রপ্তানি ঝুড়িতে বৈচিত্র্য আনতে হলে অন্তত চারটি সম্ভাবনাময় খাত নিয়ে বসতে হবে- হালকা প্রকৌশল, চামড়া, জুতা এবং প্লাস্টিক। শুধু এই চারটি খাতই নয়, ওষুধ শিল্পসহ মোট ১২টি খাতের রপ্তানি বাজার বড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়