প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
চাঁদরাতে শার্ট-প্যান্ট কিনে দিয়েছেন বাবা। কী যে সুন্দর হয়েছে! এতদিন কিনে না দেয়ায় বাবার প্রতি যত অভিমান জমেছিল, তা নিমেষে মুছে গেল।
বাবার প্রতি অভিমান জমলেও জানতাম- বাবার কাছে টাকা ছিল না বলেই আরো আগে নতুন পোশাক কিনে দিতে পারেননি।
আমার তর সইছে না যেন! কখন সকাল হবে, আমি নতুন শার্ট-প্যান্ট পরে বের হব! বন্ধুরা দেখে অবাক হয়ে বলবে- ‘তোর নতুন পোশাক অনেক সুন্দর!’
মনে মনে বাবাকে ধন্যবাদ জানাই- বাবা, তুমি সত্যি আমাকে খুব ভালোবাস। তুমি খুব ভালো বাবা।
আমার খাটের একটু দূরে নতুন শার্ট-প্যান্ট হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রেখেছি। হ্যাঙ্গারের ক্লাম্পবারে প্যান্টটা ঝুলিয়ে অ্যাঙ্গেলে শার্টটাকে এমনভাবে রেখেছি, দেখে মনে হবে- প্যান্টটাকে পরম মমতায় জড়িয়ে আছে শার্টটা।
বিছানায় শুয়ে নতুন পোশাক দেখতে দেখতে ঘুমাব বলে আজ আলো নিভাইনি। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম! ঘুম ভেঙে জানালা গলিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি- এখনো রাত জেগে আছে।
নতুন পোশাকের দিকে চোখ পড়তেই মন আনন্দে ভরে উঠল। নতুন পোশাক পরে কাল কোথায় কোথায় বেড়াতে যাব ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, নাকি আধোঘুমে ছিলাম; মনে হলো- কারো ঝগড়া কানে আসছে!
‘যতই দামি হও না কেন, তোমাকে নিচেই থাকতে হয়! হা হা হা…’
‘আর তুমি উপরে থাকলেও, আমি না থাকলে তুমি বেমানান! হা হা হা…’
বুঝে উঠতে পারছি না, কারা এমন ঝগড়া করছে! হঠাৎ মনে হলো- আমার নতুন শার্ট-প্যান্ট ঝগড়া করছে!
শার্ট বলল, ‘বোকার মতো কী যে বলো না, তুমি না থাকলেও লুঙ্গির সঙ্গেও আমি ঠিক মানিয়ে যাই।’
‘হ্যাঁ, দেখেছি তো। তখন তোমাকে গেঁয়ো লাগে!’ বলে হে হে করে হাসল প্যান্ট।
প্যান্টের এমন আক্রমণে শার্ট যেন একটু হোঁচট খেল! পরক্ষণে নিজেকে সামলে বলল, ‘আর আমি না থাকলে তোমাকে তো গাঁধার ঠ্যাংয়ের মতো লাগে! হা হা হা…’
‘কী বললে, আমি গাঁধা!’ প্যান্ট বলল।
‘কম শোনো নাকি? গাঁধা বলিনি। বলেছি- গাঁধার ঠ্যাং।’
‘তা তো বলবেই। তোমাকে যখন ইন করে পরা হয়, তখন তো আমার ভেতরে চুপচাপ লুকিয়ে থাক। আমি কি তোমাকে কষ্ট দেই তখন?’
শার্ট বলল, ‘তা দাও না। তবে তুমি যেন মাথা তুলে থাকতে পার, তা ভেবেই তো আমি তোমার ভেতরে তখন চুপচাপ বসে থাকি। না-হলে তো তোমার মাথা ঢাকা পড়ে যায়। ঠিক বলেছি?’
প্যান্ট ভাবে- শার্ট তো ঠিকই বলেছে। তাকে ইন করে না পরলে আমার মাথা তো ঢেকেই থাকে!
একটুক্ষণ চুপ করে রইল প্যান্ট।
শার্ট আবার খোঁচা দিল- ‘কী, বেশ দমে গেছ মনে হচ্ছে! ঝগড়া করতে আসবে আর?’
প্যান্ট বলল, ‘কে ঝগড়া শুরু করেছে? তুমিই তো!’
‘করব না? আরাম করে ঘুমাচ্ছ। আর তোমার ভার বইতে হচ্ছে আমাকে!’
‘আমি কি আর তোমার হ্যাঙ্গারে ঝুলতে চেয়েছি? তোমার-আমার মালিকই তো রেখেছে। তা এত অহংকার কেন করছ তুমি? অহংকার পতনের মূল।’ প্যান্ট বলল।
শার্ট বলল, ‘অহংকারের কিছু নেই। বাস্তবতায় এসো, আমার অবস্থান সবসময় উপরেই থাকবে, আর তোমার অবস্থান নিচেই।’
‘তাই বলে কারো গুরুত্বই কম নয়। একবার ভাবোতো- কোনো লোক নিচে শার্ট পরেছে, উপরে প্যান্ট; কেমন লাগবে দেখতে!’ বলে হি হি করে হাসল প্যান্ট।
আধো ঘুমে আছি কিনা বুঝতে পারছি না। শার্ট-প্যান্টকে বললাম- ‘ভাইয়া আমাকে যে সুন্দর বেল্টটা কিনে দিয়েছে, সেটা দিয়ে তোমাদের দুজনকে কাল শক্তভাবে বেঁধে রাখব। দেখব কীভাবে ঝগড়া করো!’
জানালা গলিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি- ভোরের আলো উঁকি দেই দেই করছে। একটু পরেই সকাল হবে। খুশিতে মনটা কানায় কানায় ভরে উঠল।
নতুন শার্ট-প্যান্ট পরে বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে যাব। চটপটি, আইসক্রিম-চকোলেট খাব। কী যে মজা হবে!
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।