মোহাম্মদপুরে ২৫ দিন ধরে শিকলে বেঁধে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

আগের সংবাদ

পাল্টে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা : শিখনকালীন ৪০ শতাংশ, ৩০ নম্বর হাতেকলমে এবং ৩০ নম্বর সামষ্টিক মূল্যায়ন

পরের সংবাদ

নিরস্ত্র ৫ হাজার মানুষকে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী : কেরানীগঞ্জ গণহত্যা দিবস আজ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. শফিক চৌধুরী, কেরানীগঞ্জ থেকে : কেরানীগঞ্জে আজ মঙ্গলবার ২ এপ্রিল গণহত্যা দিবস। ১৯৭১-এর এই দিনে ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা শহরে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর পাকহানাদার বাহিনী দ্বিতীয় হামলা চালায় কেরানীগঞ্জে। এ হামলায় প্রায় ৫ হাজার নিরীহ-নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষকে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পাকহানাদার বাহিনী। কেরানীগঞ্জবাসীর জন্য এটি একটি ভয়াবহ স্মৃতিবিজড়িত দিন। দিবসটি উপলক্ষে কেরানীগঞ্জের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উপজেলা প্রশাসন, কেরানীগঞ্জ প্রেস ক্লাবসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিান নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। আজ প্রথম প্রহরে স্থানীয় মনু ব্যাপারীর ঢাল এলাকার স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করা হবে। ঢাকা শহরের নিকটবর্তী বুড়িগঙ্গা নদীর তীরঘেঁষে কেরানীগঞ্জ উপজেলার অবস্থান। ঢাকা শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় একাত্তরে কেরানীগঞ্জ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূূর্ণ আশ্রয়স্থল। ঢাকা শহরের আতঙ্কিত নিরস্ত্র লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দলে দলে কেরানীগঞ্জে আসতে শুরু করেন। এটি আঁচ করতে পেরেই ২৫ মার্চের কালরাতের পর ২ এপ্রিল কাক ডাকা ভোরে পাকবাহিনী দ্বিতীয় হামলা চালায় কেরানীগঞ্জের নিরীহ মানুষের ওপর। হামলায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ নিহত হয়। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া মানুষের মধ্যে ছিল শিশু, নারী-পুরুষ বৃদ্ধ। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে যে, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের তালিকা তৈরি করা হলেও ২ এপ্রিল পাক হানাদারদের হাতে কেরানীগঞ্জের শহীদদের তালিকা করা হয়নি। কোনো সরকার এতে উদ্যোগী হয়নি। কেরানীগঞ্জ গণহত্যা দিবসটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালনের জন্য সরকারের কাছে জোরাল দাবি করেছেন এলাকাবাসী ও শহীদ পরিবার। ২ এপ্রিল পাকহানাদার বাহিনীর হাতে কেরানীগঞ্জের যেসব নিরীহ লোক শহীদ হয়েছেন, সেসব শহীদদের পরিবার খেয়ে না খেয়ে কীভাবে বেঁচে আছে তার খোঁজখবর কেউ নেয়নি। এমনি একটি পরিবার নজরগঞ্জের সর্দারবাড়ি। সেদিন পরিবারের অন্যসব সদস্যের সামনেই হানাদার বাহিনী ৩ সহদর আফজালুল হক, এরফানুল হক, ফায়েকুল হক ও চাচাতো ভাই তৎকালীন ফুড ইন্সপেক্টর ওবায়দুল হককে ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ির উঠোনে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। কেরানীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. শাহজাহান বলেন, ৭১ এর ২ এপ্রিলের ঘটনার নির্মমতায় পাথর হয়ে গিয়েছিল সাধারণ মানুষ। সেদিন মানুষের কান্নায় কেরানীগঞ্জের আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। আশপাশের কবরস্থানগুলোতে গর্ত খুঁড়ে একই কবরে ১০-১২টি করে লাশ দাফন করতে হয়েছিল। শুধু নজরগঞ্জ কবরস্থানের একটি কবরেই কেরানীগঞ্জে আশ্রয় নিতে আসা নাম না জানা ৫৪ জনকে দাফন করা হয়েছিল। কেরানীগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের মূল সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসিন মন্টুর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সে রাতে পাকসেনাদের অতর্কিত গুলির প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি পাকসেনারা ঘুমন্ত কেরানীগঞ্জবাসীর ওপর অতর্কিত গুলি চালিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা ও ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান কেরানীগঞ্জে আশ্রয় নেয়া বর্ষীয়ান নেতা শাজাহান সিরাজ, নুরে আলম সিদ্দিকীসহ আরো অনেক নেতাকর্মী। সেদিনের সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডে, জিনজিরা, মনু ব্যাপারীর ঢাল, নজরগঞ্জ, গোলজারবাগ, মান্দাইল, কুশিয়ারবাগ, বড়িশুর, মাদারীপুর এলাকা লাশের স্তূপে পরিণত হয়েছিল। এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, দিবসটি উপলক্ষে প্রথম প্রহরে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জিনজিরা মনু ব্যাপারীর ঢাল এলাকায় স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। পরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন ও উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ও কাঙ্গালি ভোজের আয়োজন করা হবে। এছাড়া উপজেলার মসজিদ, মাদ্রাসাগুলোতে শহীদদের জন্য দোয়া প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়