সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর ও রাশেদুল ইসলাম রনি, বকশীগঞ্জ থেকে : শত শত বছর আগে মুগলদের হাত ধরে এ অঞ্চলে আসে প্রাচীন মসলিনের উত্তরাধিকারী জামদানি শাড়ি। আর ২০০৫ সাল থেকে জামালপুরের বকশীগঞ্জের পাখিমারা গ্রামে তৈরি শুরু হয় এ বিখ্যাত পণ্যটি। ১৯ বছর পর এ গ্রামের প্রতিটি ঘর এখন জামদানি তৈরির কারখানা।
কারিগর হিসেবে কাজ করছে কিশোর থেকে শুরু করে বয়োজৈষ্ঠরাও। জামদানি তৈরির কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় আড়াইশ পরিবার। তাঁতীদের হাতে রেশম সুতার নিপুণ বুননে তৈরি হচ্ছে জামদানি শাড়ি, পাঞ্জাবি ও টু-পিস।
ঈদকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শাড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে জামদানি কারিগরেরা। হরেক রঙয়ের হরেক নকশার একেকটি শাড়ির পেছনে দুইজন শ্রমিকের সময় যাচ্ছে কমপক্ষে ৭ দিন।
৯ থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যের এ শাড়ি যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আর এ কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে পাখিমারা গ্রামের বাসিন্দারা। এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
জামদানি কারিগর সুমন মিয়া বলেন, আমরা এখানে ৭-৮ বছর ধরে কাজ করি। সাদা, লাল, কালো রঙয়ের জামদানি শাড়ি তৈরি করি। ঈদে কাজের চাপও বেশি। আশা করছি ভালোই উপার্জন হবে।
আরেক জামদানি কারিগর আক্কাস সোহান বলেন, আমি এখন যে শাড়িটা বানাচ্ছি এটা বানাতে এক সপ্তাহ সময় লাগে। ২ জন শ্রমিক পরিশ্রম করি। এ শাড়িটার দাম বিশ হাজার টাকা। এর চেয়ে আরো বেশি দামের শাড়ি আছে, কমও আছে। সর্বনি¤œ ৯ হাজার টাকা। এসব শাড়ি ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে যায়। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। আবার দেশের বাইরেও যায়।
কিশোর কারিগর শাওন বলেন, গ্রামের কিছু অল্প বয়সি ছেলে এ কাজে যোগ দিয়েছে। মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করে।
এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সবকিছুর দাম বাড়লেও বাড়েনি জামদানি পণ্যের মূল্য। এতে বাজার ধরে রাখতে বেগ পেতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। তাই ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তার কামনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। উদ্যেক্তা মো. হাসান সবুজ ভোরের কাগজকে বলেন, এখন সুতার দাম বাড়তি, কাঁচামালের দাম বাড়তি। সেই তুলনায় আমাদের শাড়ির দাম বাড়েনি। সরকারের যদি সুদৃষ্টি দেয় বা সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ দেয় তাহলে আমরা সুবিধা পেতাম।
এদিকে জামদানি পণ্যের ব্যবসাকে আরো সমৃদ্ধ করতে প্রশিক্ষণ, বাজারজাতকরণ সহ প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বিসিক। জামালপুর বিসিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক সম্রাট আকবর বলেন, উদ্যোক্তাদের যদি আর্থিক সহায়তা লাগে তাহলে আমরা বিসিকের পক্ষ থেকে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করব। তাদের কাঁচামাল আনতে কোনো সমস্যা হলে আমরা সহযোগিতা করব। এছাড়া বাজাজাতকরণের পাশাপাশি শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।