রাজধানীতে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

আগের সংবাদ

ঝুঁকির মধ্যেই অনিয়ম বহাল

পরের সংবাদ

রুবাই

প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নাস্তার পর্ব শেষ করে সকালের টুকিটাকি কাজ সেরে সোফায় এসে বসল ঐশী। টিভি ছেড়ে ক্লান্তি দূর করতে চাইল। খবর পড়ছে প্রায় সব চ্যানেলে। হঠাৎ মা দিবসের খবর শুনে আনমনা হয়ে গেল সে।
বিয়ের চার বছর পার হয়ে গেল, এখনো মা হতে পারেনি সে। এটা নিয়ে ঘরে-বাইরে সবখানে কথা শুনতে হয় তাকে।
ঐশীর স্বামী অবশ্য সেরকম মানুষ নন, কিন্তু সংসারে বাকিরা ভালো চোখে দেখেনি। বছরের শেষ দিকে একটা বিয়ে বাড়িতে গিয়ে আরো সংকটে পড়ল সে। চারদিকে নানা রকম মহিলা, শাশুড়ি মাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবার একই প্রশ্ন- বছর পার হয়ে গেল কোনো খবর আছে নাকি মাহাবুবের মা?
– সে কপাল এখনো হয়নি।
একজন ফোঁড়ন কাটল- আজকালের মেয়ে, তাই অমন।
উত্তর দেয়ার জন্য পাশের জন একেবারে তৈরি।
– কি বলো? আমাদের ঘরে ছেলের বউ নেই নাকি!
প্রথম দিকে ঠেস দেয়াটা বুঝতে পারেনি ঐশী। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ার কথায় তার টনক নড়ল- অমন কোল খালি থাকা ভালো নয় বউ। তুমি ডাক্তার দেখাও।
ঐশী অবাক হয়ে তাকাতেই তিনি চারদিকে তাকিয়ে আরো সরে এসে চাপাস্বরে বললেন- এরা ডাক্তার না দেখালে বাবার বাড়ি গিয়ে দেখাও!
এবারে বিরক্তিতে কান দুটো গরম হয়ে গেল ঐশীর। বেশ গায়েও লাগল। মহিলাটা বলে কী! তার শ্বশুরবাড়ির লোক আর যাই হোক, কৃপণ নয়। বাবার বাড়ি গেলেও একই আলোচনা। কেন বাচ্চা হচ্ছে না? সবাই ভাবছে সে সন্তান ধারণে অক্ষম। এমনি করে আরো একটি বছর কেটে গেল। মাহাবুব শহরে মেসে থাকায় সমস্যা হওয়ায় মাকে বলে বাসা ভাড়া নিল। পরের সপ্তাহে মাহাবুবের সঙ্গে নতুন বাসায় শহরে চলে এলো ঐশী। বাড়িওয়ালার বউ এসে সেই পুরনো বিষয়ে কথা তুলল।
– ছেলেপুলে না থাকলে ঘরের সুন্দর থাকে না। তোমরা কী করছ বলো তো? এত দেরি ভালো নয়!
সবদিকের আলোচনা আর সংসারে স্থিরতা আসায় মাহাবুবও সন্তানের অভাব অনুভব করল। কিছু দিন বাদেই আনন্দের বার্তা এলো ঘরে। টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ দেখে মহাখুশি ভর করল পুরো পরিবারে।
ঐশীর স্বামী মাহাবুব তার প্রতি যথেষ্ট যতœশীল হয়ে গেল। এদিকে মনে মনে সন্তানের নামও ঠিক করে ফেলেছে ঐশী। কবিতা ভীষণ ভালোবাসে, তাই ‘রুবাই’ নামটাই তার কাছে সেরা।
১৪ সপ্তাহ পার হতে চলেছে।
মা হবার এক বিচিত্র অনুভূতি কাজ করতে লাগল ঐশীর মনের ভেতর। হঠাৎ তার শরীর খারাপ লাগল। রাতে ব্লিডিং হতে দেখে ফোনে মাকে জানালো। মা কিছুটা চিন্তিত হয়ে পরদিনই এলেন ঐশীর বাসায়। বিকেলে ব্যথার চোটে সে মাথা ঘুরে পড়ে গেল, মা ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। গাইনি ডাক্তার মায়ের কাছে সবটা শুনে অনেকক্ষণ ধরে দেখে কিছু টেস্ট করাতে দিলেন। টেস্ট করিয়ে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেল। পরদিন মাহাবুব রিপোর্ট আনতে গেল। ডাক্তারের কথায় তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। ঐশীও জানতে পেরে জ্ঞান হারালো, কোনোমতেই কারো বিশ্বাস হচ্ছিল না যে বাচ্চাটা জীবিত নেই! জ্ঞান ফেরার পরও সহজ হতে পারল না ঐশী। তার স্বামী তখন আরো একটি খবর চেপে গেছে- ঐশীর আবার মা হওয়াটা খুব রিস্কি। একটা টিউমার দেখা গেছে জরায়ুর পাশে, আগে সেই চিকিৎসা করাতে হবে। মনে হয় সেজন্যই গর্ভের সন্তানের এই অবস্থা।
বিকেল থেকে কেঁদেই চলেছে ঐশী। সে তো অনেক ভালোবেসেছিল রুবাইকে, তাহলে কেন মা হতে পারল না? এমনি করে হা-হুতাশ করে দিন কাটতে থাকে ঐশীর।
একা হলেই রুবাইকে নিয়ে ভাবনাগুলো ঘিরে ধরে।
নিয়তির কাছে পরাজিত হতে চায় না ঐশী। সবকিছু পজিটিভ ভাবতে হবে এবার। বড় করে শ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। মনে পড়ল কবিতার ডায়েরির কথা। শ্বশুরবাড়ি এসে লেখার শখটা বাদ দিয়েছিল ঐশী। তাদের পরিবেশ, সংস্কৃতিতে এসবের চল ছিল না। লিখতে গেলে হয়তো গোলযোগ বাধত। ঘরের বউ ঘরের কাজ করবে। মেয়েমানুষের আবার লেখালিখি!
শ্বশুরবাড়িতে তার বদনাম হয়েই গেছে। আজ আর কোনো কিছুকেই ভয় করে না ঐশী। বই পড়তে অনেক ভালোবাসত। স্কুল-কলেজ জীবনে প্রচুর বই পড়েছিল। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেও লেখার জগতে প্রবেশ করে। ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াতের ভীষণ ভক্ত ছিল সে। তাই নিজের সন্তানের নামও রাখতে চেয়েছিল রুবাই।
গর্ভজাত সন্তান পৃথিবীতে না আনতে পারলেও মস্তিষ্কজাত অনেক সন্তানের মা হয়েছে সে। কবিতারাই তার রুবাই নামের সন্তান। তাদের লালন করেই মা হিসাবে বেঁচে থাকতে চায় ঐশী।
– নুশরাত রুমু : দাগনভূঁঞা, ফেনী

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়