নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে ইফতার মেয়র আতিকের

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথেই বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

তারার জন্য শোকগাথা

প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মা হারানোর পর বিষণ্নতা ঝেঁকে বসেছিল শিল্পীর জীবনে। জীবনভর সংগীতের পেছনে ছুটে চলা মানুষটির নানা অপ্রাপ্তির ডায়েরি তৈরি হয়েছিল মনের মণিকোঠায়। সব যন্ত্রণা ভুলতে স্বেচ্ছামৃত্যুর পথই বেছে নিলেন গুণীশিল্পী সংগীত গুরু সাদী মহম্মদ। তার মৃত্যুতে সংস্কৃতির অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্মৃতিচারণ করলেন শোবিজের কয়েকজন তারকা

তার মতো সহজ মানুষ আমি দেখিনি
খুরশিদ আলম, কণ্ঠশিল্পী

সাদী যেখানেই থাকুক, শান্তিতে থাকুক, এটাই চাই। শিল্পীরা একটু অভিমানী হয়। তবে সেই অভিমান থেকে নিজেকে এভাবে শেষ করে দেয়ার মানে হয় না। আমরা একজন কিংবদন্তিকে হারালাম। আগামী ১০০ বছরেও তার অপূর্ণতা ঘুচবে না। মানুষ হিসেবে সাদী খুব সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। আমার ৭৯ বছর বয়স, এই দীর্ঘ জীবনে তার মতো সহজ মানুষ আমি দেখিনি।

সাদী যা দিয়েছে তার প্রতিদান আমরা দিতে পারিনি
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

আমাদের কাম্য ছিল না এটা। আমরা কখনো ভাবিনি সাদী মহম্মদ এভাবে চলে যাবে। তার এই চলে যাওয়ায় আমরা আতঙ্কিত ও শোকাহত। দেশে ও দেশের বাইরে যারা আছেন, যারা রবীন্দ্রসংগীত ও দেশাত্মবোধক গানের রসিক, শ্রোতা ও দর্শক আছেন, তারা শোকাহত, সাধারণ মানুষও শোকাহত। তার মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তার সেই ভরা গলা, দরাজ কণ্ঠের গান আর কোথায় পাব? কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? সাদী যা করেছিল, দিয়েছিল আমাদের, সে তুলনায় আমরা তার প্রতিদান দিতে পারিনি। সেই সত্তর দশকের শেষ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫ বছরের মতো কাজ করে গেছে সে। মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি সংস্কৃতি, বাংলা সংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, দেশাত্মবোধক, এসবের প্রতি তার যে মমতা, নিবেদন, শ্রম, চর্চা; সবকিছু মিলে সাদী একজন অনন্য মানুষ।

আমরা কেউ তার খবর রাখিনি!
অণিমা রায়, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী

আফসোস, যে বটবৃক্ষের ছায়ায় আমরা পথ চলতাম, যার সংগীত অনুরাগ, রবীন্দ্রনাথের প্রতি ভক্তি দেখে আমরা শিখতে শুরু করেছি; তার হৃদয়টা জুড়ে এত হতাশা, এত ক্ষরণ! আমরা কেউ তার খবর রাখিনি! তার শত শত ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারাই হয়তো এখন একুশে পদক পাচ্ছেন। অথচ সাদী মহম্মদ স্যার এখনো একটা রাষ্ট্রীয় পদক পাননি। এটা আমাদের লজ্জা! এটা কি মানা যায়? রবীন্দ্রসংগীত জগতে যে মানুষটার এত অবদান, এত এত শিল্পী যিনি তৈরি করেছেন, তার কোনো স্বীকৃতি নেই! স্বীকৃতি শুধু সাধারণ মানুষের ভালোবাসা। তাহলে বাকিদের সঙ্গে তার তুলনা কেন? কেন সাদী মহম্মদদের মতো মানুষকে খুঁজে নিয়ে আসতে হবে? যে মানুষকে সবাই চেনে? এই অভিমান স্যারের বুকভরা ছিল।

তার মধ্যে কোনো অহমিকা ছিল না
ফারুক আহমেদ, অভিনেতা

সাদী ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে আমি এককথায় বিধ্বস্ত। ১৯৬৮ সাল থেকে তাদের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক। তিনি এত ভালো মানুষ ছিলেন যে রাগ করেও কাউকে কিছু বলেছেন, এমনটা কখনোই দেখিনি। এত বড় একজন শিল্পী, কিন্তু তার মধ্যে কোনো অহমিকা ছিল না। তিনি চলে গেলেন। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করি। সর্বশেষ বাংলাদেশ টেলিভিশনে আমাদের দেখা হয়। সেই সময় তাদের অতীতের নানা প্রসঙ্গে কথা হয়। মজার ছলে সেদিন সাদী মহম্মদ বলেছিলেন, ‘তোমাকে হাফপ্যান্ট পরা অবস্থায় দেখতাম, সেই তুমি কত বড় হয়ে গেছো। নাম করেছ অভিনয়ে।’ তিনি ছিলেন আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু। সেই হিসেবে আমাকে সব সময় স্নেহ করতেন। পছন্দ করতেন। আমাদের যে কোনো আনুষ্ঠানিকতায় সাদী ভাই থাকতেন। অমায়িক ব্যবহার। কিন্তু মানুষটা হঠাৎই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। তার পর থেকেই সাদী ভাই এতটা একা হয়ে পড়েছিলেন, সেটা কেউই বুঝতে পারেনি।

: মেলা প্রতিবেদক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়