রোগী মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টের তদন্ত কমিটি গঠন : ল্যাবএইড হাসপাতাল

আগের সংবাদ

জলদস্যুদের সাড়ার অপেক্ষা : জাহাজে খাবার আছে ২০-২৫ দিনের > অতীত অভিজ্ঞতায় জিম্মিদশা থেকে মুক্তির আশা

পরের সংবাদ

যা কিছু প্রিয় বঙ্গবন্ধুর

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রিয় খাবার

অনেক ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু অতি সাধারণ চালের সাদা ভাত খেতে ভালোবাসতেন। ভাতের সঙ্গে বিভিন্ন মাছের ঝোল ছিল তার খুব পছন্দনীয়। মাছের মধ্যে বেশি পছন্দ করতেন কৈ মাছ। কৈ মাছ ভাজা ছিল তার খুব প্রিয়। এছাড়া টেংরা, পুঁটি, মলা, পাবদা, ফলি- এ ধরনের ছোট আকারের মাছও তার প্রিয় ছিল। সবজির মধ্যে প্রিয় ছিল করলা, পটোল ভাজি। ইলিশ মাছ তার প্রিয় হলেও রান্না ইলিশের চেয়ে ভাজা ইলিশের স্বাদ কখনো তিনি ভুলতে পারতেন না। যেমন ভুলতে পারতেন না মুড়িমাখা। ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতে মুড়ি খাবার অভ্যাস। …কাঁচা মরিচ, পিঁয়াজ, আদা আর সরিষার তৈল দিয়ে একবার মাখালে যে কি মজা তাহা আমি প্রকাশ করিতে পারি না।’ যখন তিনি কারাগারে ছিলেন নিজ হাতে এসব উপকরণ দিয়ে মুড়ি মাখাতেন। নিজে খেতেন এবং অন্যদের খাওয়াতেন। অর্থাৎ একজন অতি সাধারণ বাঙালি যেসব খাবার খেতে পছন্দ করে- আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রিয় খাবার ছিল সেগুলোই।

প্রিয় গান

বিভিন্ন ধরনের গান পছন্দ করলেও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ এবং দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের লেখা ‘ধনধান্য পুষ্পভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা’- এ দুটি গান ছিল বঙ্গবন্ধুর খুব প্রিয়। তবে শেষ পর্যন্ত ‘আমার সোনার বাংলা’কে তিনি আমাদের জাতীয় সংগীত হিসিবে নির্বাচিত করেন। এছাড়া সব ধরনের দেশাত্মবোধক গানই তিনি পছন্দ করতেন।

প্রিয় গায়ক

গান কে না ভালোবাসে? ভালোবাসতেন আমাদের প্রিয় নেতাও। বিশেষ করে ভালোবাসতেন এ দেশের মাটি ও মানুষের গান। তাই জনপ্রিয় লোকসংগীত শিল্পী আব্বাসউদ্দীন ছিলেন তার অতি প্রিয় সংগীতশিল্পী। তারপর বেদারউদ্দীন আহমদ ও সোহরাব হোসেন। আব্বাসউদ্দীনের গানে তিনি এত মুগ্ধ হতেন যে, তার গান শুনে নিজকে যেন হারিয়ে ফেলতেন। তার সম্পর্কে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলার গ্রামে আব্বাসউদ্দীন জনপ্রিয়। জনসাধারণ তার গান শোনার জন্য পাগল। তার গান ছিল বাংলার জনগণের প্রাণের গান। বাংলার মাটির সঙ্গে ছিল তার নাড়ির সম্পর্ক।’
একই গ্রন্থের আরেকটি বর্ণনায়, ‘আব্বাসউদ্দীন সাহেব, সোহরাব হোসেন ও বেদারউদ্দীন সাহেব গান গাইলেন। অধিক রাত পর্যন্ত আসর চলল। পরের দিন নৌকায় আমরা রওনা করলাম। পথে পথে গান চলল। নদীতে বসে আব্বাসউদ্দীন সাহেবের ভাটিয়ালি তার নিজের গলায় না শুনলে জীবনের একটা দিক অপূর্ণ থেকে যেত। তিনি যখন আস্তে আস্তে গাইছিলেন মনে হচ্ছিল, নদীর ঢেউগুলো যেন তার গান শুনছে। আমি আব্বাসউদ্দীন সাহেবের ভক্ত হয়ে পড়েছিলাম।’
আরো দুজন সংগীতশিল্পী বঙ্গবন্ধুর অতি প্রিয় ছিলেন। তাদের একজন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী জাহিদুর রহিম, অপরজন আধুনিক গানের শিল্পী মোহাম্মদ আবদুল জব্বার। বঙ্গবন্ধু তাকে আদর করে ‘পাগলা’ বলে ডাকতেন। আবদুল জব্বারের ভরাট কণ্ঠে গাওয়া আধুনিক গান তিনি খুব পছন্দ করতেন। আবদুল জব্বারকে তিনি ‘বাংলাদেশের হেমন্ত মুখোপাধ্যায়’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তার প্রায় প্রতিটি জনসভায় গান গাওয়ার জন্য আবদুল জব্বারকে নিয়ে যেতেন। তার কণ্ঠে ফজল-এ খোদার লেখা ‘সালাম সালাম হাজার সালাম, সকল শহীদ স্মরণে’ গানটি শুনে তিনি আবেগে আত্মহারা হয়ে যেতেন। জানা যায়, আবদুল জব্বারের কণ্ঠে প্রথম যেদিন তিনি গানটি শুনেছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে তিনি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আবদুল জব্বারকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। আবেগ আপ্লুতভাবে বলেছিলেন, ‘পাগলারে, এমনিভাবে সারা জীবন তুই গান গেয়ে যা।’
প্রিয় কবি

বঙ্গবন্ধু কবিতা ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন কবিতা আবৃত্তি করতে। বৈঠকি মজলিশে তো বটেই, প্রায় প্রতিটি জনসভাতে তিনি কিছু কিছু কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তৃতা করতেন। তার মধ্যে কখনো রবীন্দ্রনাথের কবিতা, কখনো নজরুলের অথবা অন্য কারো। তবে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ছিলেন তার সবচেয়ে প্রিয় কবি। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল জনসভায় বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বঙ্গমাতা’ কবিতার একটি অংশ ‘সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করোনি’ লাইনটি উল্লেখ করে বলেন, ‘কবিগুরু, আজ তোমার কথা মিথ্যা প্রমাণ হয়ে গেছে। তুমি দেখে যাও, আজ তোমার বাঙালি মানুষ হয়ে গেছে।’ এরপর আবেগে অভিভূত হয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথের ‘দুইবিঘা জমি’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে দেশে প্রত্যাবর্তনের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘নমঃ নমঃ নমঃ, সুন্দরী মম জননী জন্মভূমি। গঙ্গার তীর সিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি।’ রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতাকে তিনি আমাদের জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন, সে কথা তো একটু আগেই বলা হয়েছে।
নজরুলের মানবতার চেতনামূলক সব কবিতাই ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রিয়। বিশেষ করে নজরুলের ‘সর্বহারা’ গ্রন্থের সব কবিতাই ছিল তার অতি প্রিয়। নজরুলের ‘চল চল চল’ কবিতাটিকে তিনি বাংলাদেশের ‘রণসংগীত’-এর মর্যাদা দিয়েছেন। ১৯৭২ সালে অসুস্থ কবিকে বঙ্গবন্ধু কলকাতা থেকে ঢাকাতে এনেছিলেন এবং তাকে বাংলাদেশের ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে মর্যাদা প্রদান করেন।

প্রিয় কবিতা
‘বিপদে মোরে রক্ষা করো- এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়।’- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতার এই চরণটি ছিল বঙ্গবন্ধুর সর্বক্ষণের সান্ত¡না। সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুক্তির আন্দোলনে তাকে সব সময় তৎকালীন শাসকদের কোপানলে পড়তে হয়েছে। শিকার হতে হয়েছে নির্মম নির্যাতনের। কারাগারে যেতে হয়েছে বারবার। জীবনের এইসব কষ্টকর মুহূর্তে রবীন্দ্রনাথের এই কবিতাটি পরম করুণাময়ের উদ্দেশে স্মরণ করে তিনি পরম সাহসে বুক বেঁধেছেন। জীবন সংগ্রামের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই কবিতাটি ছিল তার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেরণা।

প্রিয় লেখক

বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র ছিলেন তার প্রিয় লেখকদের তালিকাভুক্ত। এছাড়াও তার পছন্দের সমসাময়িক লেখকদের অন্যতম ছিলেন সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, শহীদুল্লাহ কায়সার, আবুল ফজল প্রমুখ। দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, দৈনিক সংবাদ সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরীর পত্রিকা-কলাম তিনি নিয়মিত পড়তেন। এছাড়া সাংবাদিক আবুল গাফফার চৌধুরীর লেখা সংবাদ-কলাম তিনি অতি আগ্রহের সঙ্গে পড়তেন। বিদেশি লেখকদের মধ্যে চার্লস ডিকেন্স, মার্ক টোয়েন, টম সয়্যার প্রমুখ ছিলেন তার প্রিয় লেখকদের অন্যতম। সময় পেলেই তিনি তাদের লেখা বই পড়তেন।
প্রিয় খেলা

শৈশব থেকেই খেলাধুলার প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বিভিন্ন খেলায় পারদর্শী হলেও ফুটবলের প্রতি তার ঝোঁক ছিল বেশি। খুব ছোটবেলায় জাম্বুরাকে ফুটবল বানিয়ে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে খেলতেন। কৈশোরে নিজের উদ্যোগে ফুটবল টিম তৈরি করে বিভিন্ন এলাকার ফুটবল দলের বিরুদ্ধে খেলতেন। তিনি ছিলেন দলের একজন উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ফুটবল প্রীতির কথা তিনি ভুলতে পারেননি। ১৯৭২ সালে নিজের উদ্যোগে ঢাকা স্টেডিয়ামে তিনি একটি মজার প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করেন। সেখানে একদিকে ছিল মুজিবনগর একাদশ আর অপরদিকে ছিল প্রেসিডেন্ট একাদশ। মুজিবনগর একাদশে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীনবাংলা একাদশের খেলোয়াড়েরা। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট একাদশে ছিলেন দেশে থেকে যেসব খেলোয়াড় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তারা। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং বিশেষ ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি এ খেলাটি উপভোগ করেন। পরবর্তীতে নিজের উদ্যোগেই আবাহনী ফুটবল ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়