সাড়ে ৩ মাস পর কারামুক্ত আলাল

আগের সংবাদ

নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের কোনো প্রশ্ন নেই : সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

দ্বিখণ্ডিত সূর্যমুখী

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নতুন অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করতেই পাশে এসে দাঁড়িয়ে যায় মাইনুল। উষার গা ঘেঁষে ওকে চমকে দিয়ে বলে- বাহ্ খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করেছ তো। দারুণ। তোমার পছন্দের জুড়ি নেই। মন্ত্রমুগ্ধের মতো উষা এর পায়ে পায়ে হেঁটে গৃহে প্রবেশ করে।
ড্রইংরুমের সোফা, পর্দা, ঝাড়বাতি, সোপিস সব কিছুর মধ্যেই একটা মার্জিত মানানসই রুচিসম্পন্নতার পরিচয় বহন করছে। যদিও তেমন আহামরি মূল্যবান সামগ্রী নয়। স্বল্প দামে সুন্দর কিছু করার প্রচেষ্টা থাকে উষার। বেডরুমে বড় বড় সূর্যমুখীর চাদর বিছানো বিছানা। ওই রঙে মিলিয়ে হাল্কা হলুদ আবিরের পর্দা। রুমটাকে উজ্জ্বল বর্ণের করে রেখেছে। মাইনুলের ভীষণ পছন্দের ফুল সূর্যমুখী। উষাই তার সূর্যমুখী। মাঝে মধ্যে ডাকত এই যে আমার সূর্যমুখী। উষা মুচকি হেসে বলত তুমি আমার সূর্য তাই তো আমি তোমার সূর্যমুখী। তোমাকে দেখে দেখে আলোর উৎস খুঁজি, আলোকিত হই। তাই দেখছ না বারে বারে তোমার দিকেই চেয়ে রই। তুমি আমার জীবনের আলোকিত ছায়া, আমার গতির উৎস। মাইনুল ওর কথা শোনে আর জোরে হেসে উঠে বলে- বাহ্ আজকাল দেখি বেশ ভাষা শিখেছ। মাইনুল ওর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ওকে আরো সোহাগী করে তোলে। উষার চোখে ভালোবাসার আনন্দ অশ্রæ। এই অশ্রæ বাধা মানে না, অযথাই যখন না তখন ঝাপসা করে দেয় চোখের পাতা।
বিদেশে অবস্থানরত দুই ছেলেমেয়ের পিছু পিছু এতক্ষণ হেঁটে চলেছে ঘরময়। মাকে বেডরুমে থমকে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখে ওদেরও চোখে জল এসে যায়। অনিকেত এবং ঋভু দুজনই মাকে ভীষণ কেয়ার করে। কাছে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে ভীষণই আপসেট হয়ে যায়। অনিকেত বলে মা আজকের দিনে মন খারাপ করো না। চলো আমরা পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখি। বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছ মা। তোমার রুচির প্রশংসা করতে হয়। মা মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে। নিজেকে নিজের মধ্য থেকে বেরিয়ে আনার পথ খুঁজে বলে- এর পরের বার আমার বউমা নাতিদের নিয়ে আসবি। সম্বিৎ ফিরে পাওয়া উষা আবার বলে- তোরা আমার দুই নয়নের মণি। তোরা সবাই মিলে এখানে থাকলে আমার এই ঘর সোনায় সোহাগা হয়ে উঠবে। এই বলে মা চুপ হয়ে যায়। অনিকেত মায়ের মুখের কথা টেনে নিয়ে বলে- মা তুমি দুঃখ করো না। এ বাড়িতে তোমার সঙ্গে বাবা আছেন। প্রতিটি ইট কাঠ সিমেন্টের সঙ্গে মিশে আছেন। তার সেই ইন্স্যুরেন্সের এতগুলো টাকার বিনিময়ে এই অ্যাপার্টমেন্ট। চলে গিয়েও তোমাকে সুখের চাদরে মুড়ে দিয়ে গেছেন। তোমাদের প্রেম অমরত্ব পেয়েছে মা।
উষার মনের কষ্ট ধিম ধিম করে জ¦লে। মনকে বলে- তোমাকে ছাড়া এই সুখ। ওরে সুখ কাকে বলে! ওর মনে পড়ে যায়- সে ছিল আমি ছিলাম আর তার বন্ধু সিজান গাড়ি ড্রাইভ করছিল। নেই তারা, কেবল আমি একলা রয়ে গেলাম বেদনার ভার বইবার জন্য। সত্যি তো এই অ্যাপার্টমেন্ট কেনার যোগ্যতা আমার ছিল না। রোজ আনা রোজ খাওয়া মানুষ। মাইনুল ছিল একজন ক্রেজি মানুষ ‘ওহ্ আমেরিকার’ জন্য। ওর ধ্যানে জ্ঞানে স্বপ্ন বুননে কেবল আমেরিকার স্বপ্ন। উষার আটপৌরে জীবনে ছিল দুটো সন্তান- অনিকেত ও ঋভু, স্বামী মাইনুল। এতেই ছিল প্রচুর আনন্দ। কিন্তু সবার মতের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করে জয়ী হলো মাইনুল। তার স্বপ্ন সার্থকতা পেল ডিবি পেয়ে যাওয়াতে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল তার। চাওয়া পাওয়ায় রূপান্তরিত হলো। বাধ্য হয়েই স্বামীর সঙ্গেই চলল আমেরিকার জীবনে। অল্পেই তুষ্ট হওয়ার মতো গুণের একটি ছোট সংসারের স্বপ্ন বিলাসী মনের উষা। সোঁদা মাটির ঘ্রাণে মুগ্ধতা, শ্রাবণের বর্ষণে সবুজের নাইয়ে দেয়া গাছগাছালির সঙ্গে মিলেমিশে চলতেই পছন্দ ছিল ওর।
বড় বিলাসবহুল অট্টালিকায় কারাবাসী জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না উষা। সত্যি চলে এলো পরিচিত শহর ছেড়ে অচেনা রাজ্যে। আমেরিকার ব্রুকলিন শহরে। ছেলে দুটোর লেখাপড়ার ভালো ব্যবস্থা হলো। নিজের চাকরিও পেয়ে গেল সফটওয়্যার কম্পিউটার ফার্মে। ভালো সেলারিতে। নিজের যোগ্যতায় স্বপ্নের শহরে নিজেকে মানিয়ে চলায় অভ্যস্ত করে নিল মাইনুল। কেবল উষার সেই হেসেল টানা জীবনের নেই পরিবর্তন। নেই শিক্ষা, নেই যোগ্যতা কোথাও চাকরি পাওয়ার। এমন বিলাসিতা তারও পছন্দ না। এই জীবনেই হাতেখড়ি এই জীবনের আমৃত্যু সঙ্গী। তবুও কিছুটা রপ্ত তো করতেই হলো ঘরে-বাইরে। মেশিনের সঙ্গে। শপিং মলে গ্রোসারি শপে নিত্যদিনের কেনাকাটা। যদিও প্রথম প্রথম ভীষণ ভয় ছিল পথ ভুলে যাওয়ার। মোটামুটিভাবে নিজের আয়ত্তে এসে গেছে অনেক কিছু। চলে ফিরে খেয়ে বাঁচার মতো। তাতেই খুশি উষা। মাইনুল এবং তার দুই সন্তান তাকে সাহায্য করে। নুন পান্তার জীবন থেকে নিজেকে বদলে নেয় আধুনিকতার জীবনে। মাইনুলের সঙ্গে ওর কেবল এটুকুই দ্ব›দ্ব ফুল, পাখি, প্রজাপতি, বর্ষণমুখর দিন, পূর্ণিমার চাঁদ- এগুলোর মধ্যে নিজের জীবনে ডোর বাঁধা। ওই বলয়ে চলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে উষা। তবুও কোনো দিন প্রতিবাদ করেনি। মাইনুলের কাজের বিরোধিতা করেনি। মাথার ওপর ছাদ দিয়েছে মাইনুল। মাইনুলের কাছে মূল্যহীন শব্দ ভাণ্ডার উচ্চারণ করাই বৃথা, তাই সে চেষ্টা থেকে বিরতই থেকেছে উষা। নিজের ইচ্ছাকে নিজেই দাফন করেছে। সংসারে ছন্দপতন চায় না উষা। স্বশিক্ষিত মানুষ উষা সূর্যের দিকে চেয়ে চেয়ে সূর্যমুখী হয়েই বাঁচতে চায়। ঘরকন্যার কাজে কোথায়ও ব্যত্যয় ছিল না ওর। ওর মনের উষ্ণ বাতাস ব্রুকলিনের ঠাণ্ডা বাতাসের ডানায় উড়িয়ে পাঠিয়ে দেয় নিজের দেশের ঢাকা শহরে। মাইনুলের সাঁচে নিজেকে ঢেলে সাজিয়ে নিয়েছে উষা নিজেকে। ছেলেরা বড় হয়েছে। ওদের মতো ওরা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। মাইনুল আজকাল উষাকে নিয়ে প্রায়ই বেড়াতে বের হয় বন্ধুর বাসা, শপিং মল, পার্ক, আপেল বাগানে এমনি অনেক জায়গায়। সেই দিনটি ছিল তুষার পাতের দিন। বেশ বরফে জমে আছে পুরো দেশ। সবাই কি ঘরে বসে থাকে। তা তো থাকে না। রাস্তাঘাটে বড় বড় যান্ত্রিক মেশিন দিয়ে পরিষ্কার করেই চলেছে। এরই মধ্যে মাইনুল তার বন্ধু সিজান আর উষা লং ড্রাইভে বেরিয়ে পড়ল। দুই বন্ধু হাসি তামাশায় মত্ততায় গাড়ি ড্রাইভ করছে। উষা একলা পেছনে বসে কখনো ওদের কথা শুনছে কখনো তাল মেলাতে চেষ্টা করছে। মাঝে মাঝেই তাল কেটে যায় ওর। একটা আতঙ্ক কাজ করে ওর মধ্যে। অনবরত বরফ পরিষ্কার করেই চলেছে। কখনো রাস্তায় জমতে দেয় না বরফ, বেশ কতগুলো গাড়ি এই কাজই করে চলেছে। রাস্তার দুই ধারে জমা বরফে ঢিবি হয়ে উঠেছে। সেøাফল দেখতে দারুণ কিন্তু সীমাহীন বিপদও সামনে। দাঁত বের করে বসে আছে। তবুও এই পথ চলাতেই আনন্দ। দুই বন্ধু হো হো হা হা করে হৈ হৈ রৈ রৈ করে ছুটে চলেছে। সঙ্গী যদিও ওদের উষা তবুও নীরব দর্শক সে আজ। হঠাৎ আনন্দে ছেদ পড়ে। বিকট আওয়াজ, বীভৎস আর্তনাদ, তুমুল আতঙ্কে গগণভেদী চিৎকার। মুহূর্তেই দুমড়ে যায় গাড়ি। দশ ফিট লম্বা গাড়িটি চার ফিটে নেমে আসে। বাঁক বদলের সময় দ্রুত আসা উল্টো দিকের লরির সঙ্গে ওদের গাড়িটি প্রচণ্ড বেগে ক্রেশ হয়। ওদের আর্তনাদ, গাড়ির বিকট আওয়াজে মুড়মুড় করে ভেঙে পড়া মুহূর্তেই ঘটে যাওয়া ঘটনা। উষার চোখে সব ঝাপসা হয়ে আছে। সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিজেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। গাড়ির চাপে দম নিতে কষ্ট হচ্ছিল উষার। সামনের দিকে পুরোটাই চেপে পেছনে জমে গেছে। ওর আর কিছু মনে নেই।
যখন জ্ঞান আসে উষার তখন কাছে পায় দুই সন্তান অনিকেত ও ঋভুতে। মায়ের সেবায় ওরা দুজন রাত দিন পার করছে। হাসপাতালের কেবিনে উষা। নিজের অবস্থান ভালো না। বুকে প্রচণ্ড ব্যথা, ডান হাতটায় ব্যান্ডেজ, ভেঙে গেছে এক পা এক হাতের হাড় কতদিন এভাবে কাটাতে হবে কে জানে। মায়ের জ্ঞান ফেরার পর থেকেই জানতে চাইছে তোমার বাবা ওনার বন্ধু কোথায়। অনিকেত বলে মা চিন্তা করো না। ওনাদের তোমার মতো অবস্থা। অন্য কেবিনে আছে। মিথ্যা বলেই মাকে সান্ত¡না দেয়া ছাড়া উপায় নেই। উষা এখনো সুস্থ হয়নি। এত বড় শোক সইতে পারবে না। দেখতে দেখতে বেশ অনেক দিন কেটে গেল। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সময় লাগছে। এবার বাড়ি ফেরার পালা। তীব্র জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে উষা ছেলেদের দিকে তাকায়। কই তাদের সঙ্গে তো দেখা হলো না। আমাকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছো আর তোমার বাবার কী অবস্থা, তাকে কবে বাড়ি নেবে। তিনি আমাকে দেখতে এলো না কেন একবারও।
অনিকেত ও ঋভু মায়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। কী বলবে? কীভাবে বলবে। সত্য বড় কঠিন আজ তাদের কাছে। উষার মনে সন্দেহ আরো গাঢ় হয়ে ওঠে। বলছ না কেন তোমার বাবা কি বেঁচে আছেন?
দুই ছেলে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে। মা, বাবা নেই। সেই মুহূর্তেই তাদের দুজনের একই পরিণতি। তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেছে আল্লাহ পাক আমাদের জন্য। তুমিও তো মা মারাত্মকভাবেই আহত হয়েছ। চিৎকার করে কেঁদে ওঠে উষা। ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলে- আহা তোমার বাবার স্বপ্নের শহর তাকে আর স্বপ্ন বিলাসী থাকতে দিল না। ক্ষণস্থায়ী এই জীবনের প্রতি এত আকর্ষণ ছিল তোমার বাবার। মৃত্যুই তাকে টেনে এনেছে স্বপ্নের শহরে। ছেলেরা মা কে সান্ত¡না দিয়ে বলে- মা মৃত্যু যার যেখানে হবে তা আগেই ঠিক করা ছিল আল্লাহ্তায়ালার তরফ থেকে। এটা নিজের দেশেও হতে পারত। মায়ের চোখ মুছিয়ে দেয় অনিকেত। ঋভু বলে- মা আজ তোমাকে রিলিজ করে দিয়েছে, চল বাড়ি যাই। উষা তার নিজের মধ্যে থিতিয়ে থাকে। কান্নার জল আঁচলে জমিয়ে চাবির গুচ্ছ বানায়। স্মৃতির পাতা হাতড়ে বেড়ানো যেন আজ থেকে ওর কাজ শুরু। কীভাবে কাটাবে এত লম্বা জীবন। চলে যেতাম তার সঙ্গেই সহযাত্রী হয়ে। কান্নারা ভুলে যায় গন্তব্য অবিরাম বয়ে যায় দুচোখের ধারায়। দুই ছেলে অষ্টপ্রহর কাজে ব্যস্ত। নিজেদের চাকরি, সঙ্গে বাবার ইন্স্যুরেন্সের কাগজপত্র রেডি করা, উকিলের পরামর্শ নেয়া।
উষা নিজেকে সচল রাখার চেষ্টা করে। দুই ছেলের জন্য রান্না করে রাখে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে জীবনের রশি টেনে চলে। ওখানেই মাইনুলকে সমাহিত করা হয়। মসজিদে মিলাদ পড়ানো হয়। নিজেদের বাঙালি কমিউনিটির আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কুরআন খতম, দোয়া, মিলাদ মাহফিলের ব্যবস্থা হয়। সময় গড়িয়ে যায়। বেশ সময় লেগে যায় টাকা-পয়সা পেতে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আইন অনুযায়ী প্রাপ্তির প্রক্রিয়া চলে। টাকার অঙ্কও অনেক। নিজের অফিস আর রোড অ্যাক্সিডেন্টের ইন্স্যুরেন্সের টাকা। বছর দুই লেগে যায় সব পাওনা বুঝে পেতে।
ছেলেরা বলেছে এই টাকা নিয়ে মা তুমি দেশে আমাদের জন্য ঠিকানা তৈরি কর। মাঝে মধ্যে দেশে গেলে মামা খালাদের বাড়িতে থাকতে হয়। আমাদের একটা ঠিকানা নেই। উষারও মনোপুত হয় ছেলেদের কথা। সত্যি তো, মা চায় দেশের আলো হাওয়া। লাল সবুজের রঙে মিলে মিশে সোঁদা মাটির ঘ্রাণ। যদিও মনের কষ্টগুলো তোলপাড় করে ওঠে। তোমার মৃত্যুর দামে কিনেছি ঠিকানা, মাথার ওপরে একটি ছাদ। অফুরান ভালোবাসা। আহা এ জীবন ছিল না কাম্য। দুই চোখে জলেরা খেই হারিয়ে ফেলে। তুমি নেই তোমার সূর্যমুখী সূর্যের দিকে চেয়ে চেয়ে কাটাবে বাকি জীবন। তুমি তো আমাকে সোনার চামচে নতুন জীবন দিয়ে গেছ। তুমিহীন এ জীবন অর্থহীন বয়ে চলা সময়ের কাঁটায় কাঁটায়।
অনিকেত আর ঋভু পিঠাপিঠি দুই ভাই। বেশ মিল ওদের একেবারে জমজ ভাইয়ের মতো। একই মতে একই পথে চলার মতো আদর্শ সন্তান। মায়ের জন্য চিন্তামুক্ত জীবনের প্রত্যাশায় মায়ের পছন্দমতো মেয়ে দুজনই বিয়ে করে। ওর বাবার বন্ধু তৈয়ব সাহেবের দুই মেয়ে ব্রুকলিনসের পাশেই কুইনসে ওরা থাকে। দুই পরিবারের মেলামেশা আগে থেকেই ছিল। তেমন ঝামেলা পোহাতে হয়নি উষাকে। ওদের দুটোকে সংসারী জীবনে অভ্যস্ত করেই মা উষার নিষ্কৃতি। পাড়ি জমায় দেশের পথে। চিরস্থায়ীভাবে তো নয়। ভাবতেই পারে না এখন উষা, কারণ জীবনসঙ্গীটি এ দেশে রয়ে গেছে চিরশয্যায়। তার মাটি ছুঁয়ে আসতেই হবে বারবার।
এই সেই অ্যাপার্টমেন্ট। এই তো তুমি প্রতিটি কক্ষে প্রতিটি কোণে তোমার স্পর্শে শ্রাবণ ঝরা চোখে। আমার পাশে তুমি দাঁড়িয়ে এই বসতভিটায়। নির্ঘুমা রাত যদিও রূপালী জ্যোছনার রঙে আমাকে নাইয়ে দেয়। সকালের সূর্য, সূর্যমুখী আমি চেয়ে থাকব তোমারই দিকে। তোমাকে খুঁজি প্রতিটি মুহূর্ত এই বসতিতে। মহামূল্যবান তুমি ছিলে আমারই হীরক খণ্ডের পরিবর্তে দিয়ে গেলে ইট সিমেন্টের নির্মাণ করা একটি ছাদ। এই বোঝা ভার সইবার ক্ষমতা নেই তো আমার। দু’চোখের লোনা জলে ঝাপসা পরিবেশ। দুই ছেলে মাকে জড়িয়ে লোনা জলে সমুদ্দুর উত্তাল করে।
ধীরগতিতে পরিস্থিতি কিছুটা স্থির হয়ে আসে। হঠাৎ করেই বাইরের দরজার কলিং বেল বেজে ওঠে। উষা উচাটন হয়ে বলে- দেখ দেখ তোর বাবা এলো বলে। এই সময় দরজায় কলিং বেল কে আর দেবে বল? খোল খোল দরজাটা খোল তোর বাবা এসেছে…..

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়