নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিএনজি চালক নিহত

আগের সংবাদ

এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে অগ্রগতি

পরের সংবাদ

ভূতের ডাক্তার

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গত কয়েক দিন ঠিকঠাক ঘুমাতে পারছে না মিতু। তার নানা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে। তাই মা অফিস শেষে হাসপাতালে ছোটাছুটি করে। গ্রাম থেকে মিতুর ছোট খালা এসেছে। মিতু এখন রাতে খালার সঙ্গেই ঘুমায়। ডিসেম্বর মাস, স্কুল ছুটি। জানুয়ারি মাসে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে। তাই খালার সঙ্গে মিতুর ভালোই সময় কাটছে।
গতকাল রাতে ছোট খালা মিতুকে এক দারুণ গল্প শুনিয়েছে। গল্পটা এরকম-
বাজারের পাশেই হাসপাতাল। সেখানে রাত বারোটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত শুধু ভূতের চিকিৎসা করা হয়।
রবিবার রাত বারোটা দশ মিনেটে এক মা বিড়াল ভূত এলো ডাক্তার ভূতের কাছে। ও বলে রাখা ভালো- সব রাতে আবার সব ভূতের চিকিৎসা এখানে হয় না। এখানেও রুটিন করা আছে। শনিবারে হয় হরিণ ভূতের চিকিৎসা। রবিবার বিড়াল ভূত। সোমবার অতিথি পাখি ভূত। মঙ্গলবার অফ ডে। বুধবার ডাকাত ভূত। বৃহস্পতিবার গৃহকর্মী ভূত আর শুক্রবারে বাঘ ভূতদের চিকিৎসা করা হয়।
বিড়াল ভূতকে প্রশ্ন করলেন ডাক্তার- কী সমস্যা তোমার?
বিড়াল ভূত- আমার ৪টা বাচ্চা হয়েছে। ওদের পেটে অনেক ক্ষুধা থাকে।
ডাক্তার- ক্ষুধা থাকলে খাবে, তাহলেই তো সমস্যা মিটে যায়।
বিড়াল ভূত- অনেক ক্ষুধা থাকায় বাসার সাহেবের প্লেট থেকে ইলিশ মাছ খেয়ে ফেলেছিলাম। আর তাতে ক্ষেপে গিয়ে লাঠি দিয়ে আমার পা ভেঙে দিয়েছেন তিনি।
ডাক্তার- বুঝতে পেরেছি। ওষুধ লিখে দিচ্ছি। এগুলো খাবে আর সাতদিন বিশ্রাম নেবে। আচ্ছা, তুমি ভূত হলে কীভাবে?
বিড়াল ভূত- আমি বাসা নোংরা করতাম বলে সাহেব একদিনে আমাকে বস্তায় ভরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে এলেন। তারপরই আমি বাসের নিচে চাপা পড়লাম। আমার পেটে থাকা বাচ্চারা সবাই বেরিয়ে এলো।
ডাক্তার- খুবই দুঃখজনক।
আজ সোমবার। রাত একটার সময় এক জোড়া অতিথি পাখি এলো।
ডাক্তার- কেমন আছ তোমরা এ দেশে?
পাখি ভূত- ভালোই ছিলাম, কিন্তু গত শুক্রবারে ঘটেছে বিপজ্জনক ঘটনা। একদল মাংসাশি শিকারি এসেছিল লেকে। তারা ঢাকা থেকে বন্দুক কিনেছে নতুন।
ডাক্তার- তাতে তোমাদের কি?
পাখি ভূত- ওই নতুন বন্দুকের প্রথম শিকার আমরা। আমাদের বুকে গুলি ঢুকেছে।
ডাক্তার- কেস তো আর্জেন্ট। দ্রুত ইমার্জেন্সিতে ভর্তি হও।
ভূতের ডাক্তারের আজ অফ ডে। মঙ্গলবার কোনো রোগী দেখেন না তিনি। নিজের রুমে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এমন সময় একটা কুকুর ভূত দৌড়ে এলো।
– ডাক্তার সাহেব আমার খুব বিপদ।
– আজতো আমার অফ ডে। এই দিন আমি রোগী দেখি না। তাছাড়া আমি কুকুর ভূতের কোনো চিকিৎসাও করি না।
কুকুর অনেক অনুনয়-বিনয় করায় ডাক্তারের মন নরম হলো।
– আচ্ছা, বলো তোমার কী সমস্যা?
কুকুর ভূত- গত রাতে আমি গেটে পাহারা দিচ্ছিলাম। এমন সময় গরু চোর আসে। আমি ঘেউ ঘেউ শুরু করতেই চোর আমার মাথায় বাঁশ দিয়ে জোরে আঘাত করে।
ডাক্তার- বাড়ির মালিক কিছু টের পায়নি?
কুকুর ভূত- না। আমার ঘেউ ঘেউ শব্দ তার কানে পৌঁছানোর আগেই তো চোর মাথায় আঘাত করে।
ডাক্তার- চোর কয়টা গরু নিয়ে গেল?
কুকুর ভূত- সেটা দেখার আগেই আমি মারা গেছি।
ডাক্তার- বুঝেছি। তুমি অপারেশন থিয়েটারে যাও। তোমার অবস্থা গুরুতর।
বুধবার রাত দুইটার সময় ভূতের হাসপাতালে এলো তিনজন ডাকাত ভূত।
ডাক্তার- তোমাদের সারা গায়ে ব্যান্ডেজ কেন?
ডাকাত ভূত- আমরা সেদিন অনেক রাতে বাজার থেকে ফিরছিলাম। গ্রামের লোকজন আমাদের ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে মেরেছে।
ডাক্তার- তোমাদের কেন ডাকাত হিসেবে সন্দেহ করল?
ডাকাত ভূত- আমাদের খুব পানি তেষ্টা লেগেছিল। আমরা গ্রামের সিকদার বাড়িতে গিয়ে একটু পানি চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমাদের বিশ্বাস করেনি।
ডাক্তার- ঠিক আছে, আমি ব্যথানাশক ওষুধ দিচ্ছি।
বৃহস্পতিবার ভোরে একজন কিশোরী গৃহকর্মী এলো।
ডাক্তার- তোমার কী হয়েছে?
গৃহকর্মী ভূত- আমার শরীরটা খারাপ ছিল। যে বাসায় কাজ করি সেই আপাকে বললাম, আমার ছুটি লাগবে।
ডাক্তার- তারপর?
গৃহকর্মী ভূত- ছুটিও পেয়েছিলাম। কিন্তু বস্তির ঘরে পাঁচ দিন ডেঙ্গু জ¦রে ভুগে অযতেœ-অবহেলায় আমি মারা গেলাম।
ডাক্তার- আপাতত বেশি করে লিকুইড খাবে। আর প্লাটিলেট কমে গেলে রক্ত দিতে হতে পারে।
শুক্রবার রাতে হুংকার দিয়ে এলো এক বাঘ।
ডাক্তার- তোমার কী সমস্যা?
বাঘ ভূত- বনদস্যুরা আমাকে মেরে চামড়া বিক্রি করে দিয়েছে। আমি দলছুট হয়ে পড়েছি। আমার শরীরে চামড়া না থাকায় অনেক যন্ত্রণা ভোগ করছি।
ডাক্তার- তোমার সমস্যাটা একটু ভিন্ন। মেডিকেল বোর্ড না বসিয়ে আমি সিদ্ধান্ত দিতে পারছি না। তোমাকে আপাতত হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে।
শনিবার রাত ৪টার সময় একটি মায়া হরিণ এলো।
ডাক্তার- কী হয়েছে হরিণ?
হরিণ ভূত- সুন্দরবনে বেড়াতে আসা একদল পর্যটক আমার সঙ্গে দূর থেকে সেলফি তুলল।
ডাক্তার- তারপর?
হরিণ ভূত- হঠাৎ আমাকে ধাওয়া করল ওরা। আমি ক্লান্ত হয়ে কাঁদায় আটকে গেলাম।
ডাক্তার- এরপর?
হরিণ ভূত- আমার মাংস দিয়ে তারা বনভোজন করল। কত নিষ্ঠুর!
ডাক্তার- তোমার সৌন্দর্য দেখেও কি একটু মায়া করল না তারা?
হরিণ ভূত- না ডাক্তার সাহেব।
ডাক্তার- আসলেই পৃথিবী থেকে দিন দিন মায়া-মমতা উঠে যাচ্ছে।
ছোট খালার ভূতের গল্প শুনতে শুনতে রাত শেষ হয়ে গেল। ভূতদের কষ্টে অনেক মন খারাপ হলো মিতুর। মানুষ এত নিষ্ঠুর কেন? এসব ভাবতে ভাবতেই ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়ল সে।
আজ দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় ফিরে এসেছে নানা। বাসায় তাই একটা উৎসব উৎসব ভাব। এরই মধ্যে ছোট খালাকে জিজ্ঞাসা করল মিতু- ভূতের ডাক্তারের সঙ্গে কি আমারও দেখা হবে। আমিও কি এমন বিপদে পড়ব?
ছোট খালা এক ধমকে মিতুকে থামিয়ে দেয়। তারপর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে- এরকম অলুক্ষুণে কথা বলতে নেই মামণি।
ধমকে মিতুর মন খারাপ হলো খুব। সেটা বুঝেই ছোট খালা মুচকি হাসি দিয়ে বলল- চলো আমরা পার্কে বেড়াতে যাই।
মাথা থেকে ভূতের চিন্তা ঝেরে ফেলে ছোট খালার সঙ্গে পার্কে ঘুরতে গেল মিতু। পার্কের মনোরম পরিবেশে ঘুরে আর ফুচকা খেয়ে মন ভালো হয়ে গেল ওর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়