আইনমন্ত্রী : জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য ৬৪৮ এমপির কথা বলা হচ্ছে

আগের সংবাদ

উপজেলা নির্বাচনের আগেই বিবাদ মেটাতে চায় আ.লীগ : ভোটের কোন্দল

পরের সংবাদ

‘তিক্ততা জিইয়ে রেখে কী লাভ!’

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অভিনয় তার পেশা। তবে সিনেমা নিয়ে আনন্দটা সাময়িক। ভালো থাকার জন্য আরো অনেক কারণ খুঁজে নিয়েছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। শেয়ার করেছেন ভারতীয় গণমাধ্যমের কাছে। তারই চুম্বকাংশ মেলার পাঠকদের জন্য-

বছরের শুরুতে ‘কী পারলাম, কী পারলাম না’-র হিসাব করার অভ্যাস আছে?
এখন সব বছরই আর পাঁচটা বছরের মতো। ছোটবেলায় খুব রেজোলিউশন নিতাম- নখ খাব না, ফাস্ট ফুড খাব না। এ বছর ভেবেছি, সিগারেট খাব না। তিন দিন পেরেছি, এক দিন পারিনি। পরের দিন আবার খুব সচেতন হয়ে নতুন করে চেষ্টা শুরু করলাম। শেষ দুই দিন খাইনি। পরদিন সকালে একটা খেয়ে ফেলেছি। এভাবেই যুদ্ধ করতে করতে পেরে যাব আশা করি।
আর পেশাগত জীবনে…
হিন্দিতে প্রায় চারটি কাজ ?এ বছর মুক্তি পাওয়ার কথা। এগুলো আগে করেছি। কিন্তু আমাদের এখানে যত তাড়াতাড়ি শুট শেষ হয়ে একটা ছবি মুক্তি পায়, মুম্বাইয়ে তা হয় না। কারণ, ওরা পোস্ট প্রোডাকশনে অনেকটা সময় নেয়। বাংলায় ‘নিখোঁজ’-এর দ্বিতীয় সিজন আসবে। ‘টেক্কা’র শুট শুরু হয়েছে। অনেক ভালো কাজের কথা চলছে। বাংলাদেশে অনেক দিন ধরে কাজ করার ইচ্ছা। একটা কাজের কথা চলছিল সেই কোভিডের সময় থেকে। এবার শেষমেশ হচ্ছে। এপ্রিলে যাব ঢাকা।
বছরের শুরুতেই মুক্তি পেয়েছে আপনার ছবি ‘বিজয়ার পরে’। সারা বছরের জন্য এটা কতটা আশা জাগায়?
অনেকটাই। এই ছবিটা এবার কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল। ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলাম। এখন ধীরে ধীরে মানুষ আবার হলে গিয়ে সিনেমা দেখছে। জানি, ওটিটিতেও দেখে। তবে গত কয়েক বছরে বাংলা সিনেমা বেশি গোয়েন্দাকেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে। পারিবারিক ছবি সেভাবে হয়নি। এটা একদমই সেরকম একটা ছবি। দর্শক যদি দেখে, ভালোই লাগবে।
আপনিও কি মেয়ে অন্বেষার ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকেন এখন?
মুম্বাইয়ের কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছিল মেয়ে। তখন আমি মূলত মুম্বাইয়ে কাজের জন্য যেতাম। কিন্তু ওখানে কাজ করতে পারলে যে মেয়ের সঙ্গেও দেখা হবে, সেই টান ছিল। এখন অবশ্য ও মাস্টার্সে পড়াশোনা করতে ইউকে চলে গেছে। ও যখন ফেরে, আমি চেষ্টা করি সে সময় কলকাতা ফিরতে। ওর ফেরার সময় আমি যদি মুম্বাইয়ে থাকি, ও ওখানে ফেরে। তারপর হয়তো ওখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে আমরা একসঙ্গে কলকাতা ফিরি। তাই ওর ঘরে ফেরার সময় অনুযায়ী আমি আমার কাজগুলো গুছিয়ে ফেলার চেষ্টা করি। একটা সময়ের পর তো বাবা-মায়েদের সন্তানদের জন্য অপেক্ষা করাটা জীবনের একটা অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। কারো বেশি বয়সে হয়, কারো কম বয়সে। আমার ক্ষেত্রে সেটা এখনই শুরু হয়ে গেছে। এখন কলকাতায় আছে। কিন্তু যত ওর যাওয়ার দিন এগিয়ে আসে, মাথার মধ্যে একটা ঘড়ির কাঁটা চলতে থাকে। দেশের মধ্যে থাকলে তাও ঘণ্টা দুই-তিনের মধ্যে পৌঁছানো যায়। বিদেশ হলেই মনে হয়, কত দূরে চলে গেল!
মুম্বাই কি অন্বেষার টানেই যাওয়া? নাকি ওখানে কাজ করার অন্য রকম অভিজ্ঞতাই আসল?
আলাদা করে হিন্দি আর বাংলায় অভিনয়ে কোনো পার্থক্য নেই। ওখানে পার্থক্যটা বাজেটের। এখানকার মতো খুব তাড়াহুড়ায় কাজ হয় না। তবে এখানে যে বাজেটের জন্যই তাড়াহুড়ায় কাজ হয়, তা নয়। পরিচালকের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। ‘নিখোঁজ’ কিন্তু খুব তাড়াহুড়া করে বানানো নয়। খুব যতœ নিয়ে তৈরি কাজ। হয়তো সেই কারণেই এত দর্শকের পছন্দ হয়েছে। তবে হিন্দি সিনেমার কাজের ক্ষেত্রে আমার পরিশ্রম চার গুণ হয়। যতটা সাবলীল নিজের মাতৃভাষা বলতে পারি, ততটা সহজে তো হিন্দি পারি না। সংলাপ ভুলে গেলে নিজে বানিয়ে বলে দেওয়ার মতো পারদর্শী এখনো আমি হইনি।
ইনটেন্স চরিত্র না হলে কি এখন আর কাজ করেন না?
এমন কোনো কাজ করতে চাই না, যা দর্শক পপকর্ন খেতে খেতে দেখে ভুলে যাবে। কোনো দিনই চাইনি। এখন চল্লিশের বেশি বয়স হয়ে গেল। এখন তো আরো চাই না। ছোট থেকে স্কুল-কলেজে পড়েছি, পৃথিবীতে সাতটাই গল্প রয়েছে। সেই সাতটার মধ্যেই ঘোরাফেরা করে বাকি সব গল্প। তাই কীভাবে গল্পটা বলা হচ্ছে, সেটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। আর সেই গল্পে আমার চরিত্রটা কী করছে, সেটাও দেখি। পর্দায় কতক্ষণ থাকলাম, তার ওপর কিছু নির্ভর করে না। কিন্তু যতক্ষণ থাকলাম, ততক্ষণ কী করছি, সেটাই আসল। দর্শক যেন আমায় মনে রাখে।
অভিনয়ের জন্য দর্শক যেমন মনে রাখে, আজকাল মানুষের স্মৃতিতে থাকার জন্য সমাজমাধ্যমেরও একটা বড় ভূমিকা থাকে। আপনার ক্যারিয়ারের শুরুতে সেটা ছিল না। সময়টা মিস করেন?
সেই সময়ের একটা আলাদা মূল্যবোধ ছিল। এখনকার সময়ের একটা আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। সমাজমাধ্যমের জন্য তারকাদের প্রতি মানুষের ধারণা অনেকটা বদলে গেছে। আগে সংবাদমাধ্যম আমাদের নিয়ে যা লিখত, মানুষ তাই বিশ্বাস করতেন। এখন তাদের একটা সুযোগ রয়েছে আমাদের বাস্তবটা জানার। আমরা পর্দার বাইরে কেমন থাকি, সেটা বুঝতে পারেন। বা কোথাও আমায় নিয়ে কোনো ভুল খবর বেরোলে আমার সেই ধারণা শুধরে দেয়ার একটা জায়গা রয়েছে। তবে এটা ঠিক, এমনও অনেক মানুষ রয়েছে, যারা বাস্তবে যেমন, সমাজমাধ্যমে একদম তার বিপরীত একটা ছবি তুলে ধরেন। তেমন অনেককেই আমি চিনি। তবে আমি আমার কথা বলতে পারি, মানুষ নিশ্চয়ই আমার কাজের জন্য আমায় মনে রাখবেন। কিন্তু আমি মানুষ হিসেবে কেমন, সেটার জন্যও যাতে আমায় মনে রাখেন, সেটাই চাইব। তাছাড়া সমাজমাধ্যমের জন্য অনেক ধরনের সাহায্য এখন পাওয়া যায়।
আপনি তো পথকুকুরদের নিয়ে সমাজমাধ্যমে খুব সক্রিয়…
আগে শুধুই কুকুর ছিল। এখন বেড়াল, গাধা, ঘোড়া, হাতি সব হয়ে গেছে। দেশজুড়ে নানা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পশুপাখি নিয়ে কাজ করে। সমাজমাধ্যম না থাকলে এদের সঙ্গে যোগাযোগ হতো না। আমি আর আমার ম্যানেজার রোজ কত পশুপাখির জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করে দিই। সেটা দুর্গাপুর হোক বা আন্দামান, কলকাতায় বসে সমাজমাধ্যম ছাড়া এই সাহায্যটা পেতাম কীভাবে!
আর সমাজমাধ্যমের খারাপ দিকগুলো?
সেগুলো তো আছেই। জানি, দশটা লোকে দশটা বাজে কথা বলে। গুচ্ছের ট্রল হয়, ভুল খবর বেরোয়। কিন্তু ট্রল করুক, আমার কিছু যায়-আসে না। আগে দরকার মনে হলে জবাব দিতাম। এখন সেটাও কমিয়ে দিয়েছি। একটা ছবি হিট হলে খুব আনন্দ হয়। কিন্তু সেটা সাময়িক। আমায় ভালো থাকতে সাহায্য করে কিন্তু সমাজমাধ্যমের এই কাজগুলো। আমার ম্যানেজারকে বলা আছে, কাজের পাঁচটা ফোন মিস হলে কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু পশুপাখির দরকারি ফোনগুলো যেন অবশ্যই দেখা হয়। আমি বেশ কিছু কুকুরকে ভার্চুয়ালি দত্তক নিয়েছি। তাদের যাবতীয় খরচ মাসে মাসে আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে যায়। সমাজমাধ্যমে আমি নিজেই আমার সব ডিএম চেক করি। দেখে নিই, কুকুর-বেড়াল নিয়ে কারো কোনো মেসেজ আছে কিনা। উল্টাপাল্টা জিনিস হলে একদম পাত্তা দিই না।
ট্রলিং কখনো খুব সমস্যা তৈরি করেছে?
এগুলোকে আর সমস্যাই ভাবি না। এ বছর আমার ৪৩ হলো। জীবনের অর্ধেকের বেশি বাঁচা হয়ে গেছে। যেগুলো অপ্রয়োজনীয়, সেগুলো নিয়ে আর কেন ভাবব বলুন তো! বাবা-মা না থাকাটা সবচেয়ে ভয়ের জায়গা। বাবা-মায়ের বয়স হয়ে গেলে সব সময় মাথায় চলে, আমি কী করে একা থাকব, কী করে একা সংসার চালাব। আমার বাবা-মা দু’জনেই বয়সের এত আগে চলে গিয়েছেন যে, সেই ভয়গুলো আমি পেরিয়ে এসেছি। তাই কিছু নিয়েই আর মাথা ঘামাই না।
মাথার ওপর থেকে অভিভাবকরা চলে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই দিশাহীন লাগে। আপনার কোনো ক্রাইসিসে কার কাছ থেকে উপদেশ নেন?
নিজের একটা ইকো সিস্টেম তৈরি করে ফেলেছি। যারা আমায় নিয়ে সমাজমাধ্যমে আদিখ্যেতা করে না, আমিও করি না। কিন্তু যে কোনো বিপদে দাদার মতো কাউকে পেয়ে যাই। জানি, যে কোনো সময় তারা আমার ফোন তুলবে। সমস্যার একটা সুরাহা বেরোবে। ওই মানুষগুলোকে না ভগবানই আপনাকে জোগাড় করে দেবে। এ রকম দু-তিনজন আশপাশে থাকলেই তো হয়ে যায়। শরীর খারাপ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাবে, আইনি জটিলতা হলে থানা-পুলিশ করতে পারবে- এই তো দরকার জীবনে। এমন মানুষ ঠিক জুটে যায়। আর আমি খুব ছোট থেকেই ধার্মিক। বাড়িতে পূজা-আচ্চার চল ছিল। আমি রোজ স্নান করে পূজা করি। কোথাও থেকে তো মানুষকে একটা জোর পেতে হবে। ঈশ্বরের প্রতি ভরসা-ভক্তি একটা জোর আনে।
প্রাক্তনদের সঙ্গে আপনার সহজ বন্ধুত্ব নিয়েও লোকে অনেক সময় প্রশংসা করেন…
কূটকচালিও করে। শুধু সমাজমাধ্যম নয়, আমাদের চারপাশেও তো প্রচুর আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী- সব জায়গাতেই নানা রকম লোক থাকে। তবে তাদের আমরা জীবনে সেই জায়গাটা দিই না যে, মুখের ওপর কিছু বলতে পারবে। সব আত্মীয়কে কি আপনার ভালো লাগে? জানি, পেছন ঘুরলেই চারটে বাজে কথা বলবে! আগে ফিসফিস করে বলত, এখন সমাজমাধ্যমে জোর গলায় বলে। এসব নিয়ে আমি ব্যস্ত হই না। এই তো আমি নববর্ষের পার্টির পর সৃজিত (মুখোপাধ্যায়) আর পরমের (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে একটা ছবি দিয়ে লিখেছিলাম, ‘প্রাক্তন বলে কিছুই হয় না’। কারণ, আমরা তো বলি পাঁচ-ছয় বছর বিয়ে হলে স্বামী-স্ত্রীও ভাই-বোন হয়ে যায়। আর ১৫ বছরে প্রাক্তন কি প্রাক্তনই থেকে যাবে? একই জায়গায় কাজ করি সবাই। তাদের ভালো-মন্দের মধ্যে মিশে আছি আমিও। অনেক বছর হয়ে গেলে কোনো ব্যক্তির মন্দগুলো আর মনে থাকে না। পরম বা সৃজিত যেই হোক, তাদের কথা যখন ভাবি, আমার কিন্তু ভালোগুলোই মনে পড়ে। খারাপ মনে রাখলে আমাদেরই ক্ষতি। তিক্ততা জিইয়ে রেখে কী লাভ! পরমের কথা ভাবলে, ওর সঙ্গে কাটানো ভালো সময়টাই মনে পড়ে। সেই জন্য হয়তো সে দিন বাড়ি ফেরার সময় ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারলাম যে, ভালো থাকিস। ও বলল, বাড়িতে ডাকবে। পিয়াকে (চক্রবর্তী) আমি অনেক বছর ধরে চিনি। আমার খুব ভালো লাগে ওকে। পরমকে বললাম, ‘ডাকিস, তোর জন্য না হলেও পিয়ার জন্য যাব।’ কারণ, পিয়ার স্বামী কে, সেটা আমার কাছে জরুরি নয়। আমি আসলে তেমন মানুষই নই যে, কাউকে জড়িয়ে ধরে ‘ভালো থাকিস’ বলতে পারব না। কারো ভালো চাইতে কেন পারব না বলুন তো? আর কারো সঙ্গেই তো আমার মুখ দেখাদেখি বন্ধ বা যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়নি। আমাদের পেশায় সেটা সম্ভবও নয়। কতজনের সঙ্গে তা হলে কাজ করব না বলুন? বাড়িতে বসে থাকতে হয় তাহলে।

:: মেলা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়