মার্কিন চার সিনেটরের বিবৃতি : সহিংসতার জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান

আগের সংবাদ

প্রাধান্য পাবে আর্থ-কূটনীতি

পরের সংবাদ

চাষী নজরুল ইসলাম : মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেছেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ১১ জানুয়ারি। ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ দিয়ে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। চলচ্চিত্র নির্মাণে তিনি ছিলেন স্বকীয়। তার চিন্তা ও চেতনাজুড়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেছেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। তার নির্মিত চলচ্চিত্র এখন বাংলাদেশের ইতিহাসের দলিল। নিজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধে। অভিজ্ঞতার বয়ানে যুদ্ধের দিনগুলোকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন নানানভাবে। তবে যুদ্ধের আগেই তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন নির্মাতা ফতেহ লোহানীর সঙ্গে। ১৯৬৪ সালে নির্মাতা ওবায়দুল হকের ‘দুই দিগন্ত’ চলচ্চিত্রেও সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। একাত্তরে রণাঙ্গন থেকে ফিরে হাত দেন নিজের প্রথম ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ নির্মাণে। রণাঙ্গনেই ঠিক করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র বানাবেন তিনি। তার মতে, আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধ করছি, সেই দুঃসময়গুলোতে বারবার নিজের কাছে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি- যদি সময়-সুযোগ মেলে তাহলে মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি ছবি বানাবই বানাব। সিনেমার ফিতেয় তুলে ধরব একটি জাতির সংগ্রামী জীবন। আর তাদের ওপর বর্বরতার কাহিনী।
কাজী আজিজ আহমেদের চিত্রনাট্যে যুদ্ধের দিনগুলোর সত্য ও বাস্তব ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করেন ‘ওরা ১১ জন’। ১৯৬৯ এর ১১ দফা, মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরে ১১ জন সেক্টর কমান্ডার এই ভাবনা থেকেই তিনি তার সিনেমায় ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার সংগ্রামকে ফুটিয়ে তুলেন। এক হিসাবে, দেশ স্বাধীনের পর এটিই বাংলাদেশের প্রথম মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৪ সালে মহান মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের ডায়েরি অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘সংগ্রাম’। তার চলচ্চিত্রগুলোতে বরাবরই ব্যতিক্রমী গল্প সাজিয়েছেন তিনি। সমাজ ও দেশের দিকে তাকিয়েছেন গভীর মমতায়। ১৯৯৭ সালে ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেনের ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’কে পর্দায় তুলে আনেন তিনি। উপন্যাসের মতোই তার হাতে সৃষ্টি হলো কালজয়ী এক চলচ্চিত্র। সুচরিতা ও সোহেল রানা অভিনীত এ চলচ্চিত্রের শেষ অংশে দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে গিয়ে এক মায়ের বাকপ্রতিবন্ধী সন্তানকে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দেয়া হয়। এ তো জীবনের নির্মম বাস্তবতা, একজন মুক্তিযোদ্ধার মায়ের আত্মত্যাগ। এ ছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘ধ্রæবতারা’ শিরোনামের আরো দুটি চলচ্চিত্র। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মাণ করেছেন বেশকিছু প্রামাণ্যচিত্র।
মুক্তিযুদ্ধের বাইরে গিয়ে যেসব চলচ্চিত্র বানিয়েছিলেন সেগুলোও তার সমাজ ও দেশ নিয়ে গভীর ভাবনার প্রকাশ। ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’ চলচ্চিত্রে তিনি দেখিয়েছেন গ্রামীণ সমাজের খণ্ডচিত্র। শ্রেণিবৈষম্যের আদলে ফুটিয়ে তুলেছেন নর-নারীর প্রেম ও জীবন-যন্ত্রণা। এ চলচ্চিত্রে ফুটে ওঠা চিত্রই যেন আমাদের সমাজের চিরচরিত রূপ। তাই হয়তো শেষ দৃশ্যে ‘সমাপ্ত’র বদলে ‘এখানেই শেষ নয়’। চাষীর চলচ্চিত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, এক ধরনের বিষয়ধর্মী চরিত্রের উপস্থাপন। যেসব চরিত্র এই সমাজে অবহেলিত অথবা প্রকৃতির এক রহস্য। নিছক কল্পনা নয়, মূলত জীবন ও সমাজ বাস্তবতা থেকেই ওঠে আসে তার চলচ্চিত্রের চরিত্ররা। মোট ৩৫টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। উপরোল্লিখিত চলচ্চিত্রগুলো ছাড়াও তার নির্মিত ‘সুভা’, ‘হাছন রাজা’, ‘শুভদা’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘লেডি স্মাগলার’, ‘শাস্তি’, ‘দুই পুরুষ’ চলচ্চিত্রগুলো উল্লেখযোগ্য। চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ২০০৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন এই নির্মাতা। পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে। চারবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য এবং জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৪১ সালের ২৩ অক্টোবর বিক্রমপুর জেলার শ্রীনগরের সমষপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন চাষী নজরুল ইসলাম। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ৭৩ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই গুণী নির্মাতা।

:: মেলা প্রতিবেদক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়