ভোটকেন্দ্রে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করা শামীম গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভার শপথ আজ : পূর্ণ মন্ত্রী ২৫, প্রতিমন্ত্রী ১১ > বাদ পড়েছেন ১৪ জন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী > নতুন মুখ ১৯

পরের সংবাদ

১টা ৪১ মিনিট, ১৯৭২

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘স্বাধীন হয়েও আমরা যেন নিঃস্ব, এমন মনে হচ্ছিল!’
‘কেন চাচা? যে স্বাধীনতার জন্য এত রক্ত, এত ত্যাগ বাঙালির; সেই স্বাধীনতা পেয়ে নিঃস্ব মনে হবে কেন?’
আকবর চাচা মুচকি হেসে বললেন, ‘স্বাধীনতা আমাদের হতে হতে আমরা যা হারিয়েছি, তাতে নিঃস্ব না হয়ে উপায় কী! আমরা অনেকে যেমন অভিভাবক হারিয়েছি, বাংলাদেশও ছিল অভিভাবকহীন।’
‘কেন চাচা, বাংলাদেশ অভিভাবকহীন হয়েছিল কেন?’ আদ্রিনা ফেরদৌস জানতে চাইল।
‘যিনি দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি পাকিস্তানে বন্দি। তার মানে কি বাংলাদেশ অভিভাবকহীন ছিল না?’
‘তাই তো। ঠিক বলেছেন চাচা।’
‘এই তো, অল্পতে বুঝতে পেরেছ মা। আর বুঝবে না কেন? আমি জানি, তুমি পড়াশোনা করো। পাঠ্য বইয়ের বাইরে পড়ার নেশা ছিল তোমার। তাই তো অনেক কিছু জানো। ভবিষ্যতে আরো জানবে। দেশ, দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে তোমাদের। তাহলেই তো বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
‘তা সদ্য স্বাধীন দেশে আপনারা মনোবল ফিরে পেলেন কীভাবে চাচা?’ আদ্রিনা জানতে চাইল।
‘মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিরা আত্মীয়-পরিজন, সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব। তারা সান্ত¡না পাবে, এমন অবস্থাও ছিল না। কিন্তু এভাবে কতদিন? বাঙালিদের নতুন চিন্তা দেশের নেতৃত্ব নিয়ে। দেশ তো স্বাধীন হলো, বিধ্বস্ত দেশের হাল ধরার মানুষটি কেমন আছেন; কে জানে! আদৌ বেঁচে আছেন কিনা তাও তো জানে না বাঙালি!’
মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছে আদ্রিনা।
আকবর চাচাও প্রবল আগ্রহ নিয়ে বলে চলেছেন, যেন সেদিনে ফিরে গেছেন! “আত্মীয়-পরিজন, সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব, অসহায় বাঙালিরা তাদের আশ্রয়ের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু সেই মানুষটি তাদের কাছে নেই! অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত বাঙালিরা জানতে পারল- তাদের নেতা বেঁচে আছেন। শিগগিরই তিনি ফিরে আসবেন। তারপর এলো সেই আনন্দমুখর দিন। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সাল সোমবার ১টা ৪১ মিনিটে নিজের জীবনের চেয়ে প্রিয় বাংলাদেশে পা রাখলেন তিনি। পেছনে ফেলে এলেন পাকিস্তানে ২৯০ দিনের কারাজীবন, অসহ্য নির্যাতন আর ফাঁসির মঞ্চ। বাংলার মাটিতে পা রাখতেই বাংলাদেশের তিন বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান করে। একত্রিশবার তোপধ্বনি করা হয়। তারপর তাকে বহনকারী একটি খোলা ট্রাক এগিয়ে চলে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের দিকে। জনতার জোয়ারের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চললেন প্রিয় নেতা।
চারদিক লোকারণ্য। প্রিয় নেতাকে একবার দেখার আশায় দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসেছে। দেশজুড়ে রাস্তাঘাট অচল, ব্রিজ-কালভার্ট ভাঙা। এখানে-সেখানে লাশ পড়ে আছে কিংবা পড়ে আছে পরিত্যক্ত যুদ্ধাস্ত্র অথবা ভয়ানক মাইন। সেসব ডিঙিয়ে মানুষ এসেছে প্রিয় নেতাকে একনজর দেখতে। তাদের মুখে সেøাগান- ‘শেখ মুজিব জিন্দাবাদ’। ‘জয়বাংলা’। পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে নেতার সঙ্গে একটু হাত মেলানো কিংবা নেতাকে জড়িয়ে ধরার আবেগে উদ্বেল ছিল জনতা। লক্ষ লক্ষ জনতার স্রোত পেরিয়ে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্সের পাঁচ কিলোমিটার পথ পেরোতে প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে যায়! যেখান থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়ে ছিলেন, সেই রেসকোর্স ময়দানেই জনতার সঙ্গে বৃহৎ মোলাকাত হয় তার। ৯টি মাস পরে নিজ পরিবার নয়, জনগণের কাছেই ফেরেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২ সালের দুপুর ১টা ৪১ মিনিট থেকে আবার উজ্জীবিত আমরা। নিঃস্ব বাঙালিরা আবার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করল।”
মন্ত্রমুগ্ধের মতো আকবর চাচার কথাগুলো শুনছিল আদ্রিনা। তারপর বলল, ‘কোন বিষয়টিতে অবাক ও মুগ্ধ হয়েছি জানেন চাচা?’
‘কোন বিষয়ে মা?’
‘দীর্ঘ ৯টি মাস পরে নিজ পরিবার নয়, প্রথমে জনগণের কাছেই ফেরেন তিনি। অসাধারণ মানুষ না হলে এমন আত্মত্যাগ কজন পারে! এ কারণেই তিনি বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশের প্রচ্ছদমুখ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়