৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরি : দুই রাজস্ব কর্মকর্তা ফের রিমান্ডে

আগের সংবাদ

নিরাপত্তার চাদরে পুরো দেশ : মাঠে সাড়ে ৯ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, মনিটরিং সেলে ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট

পরের সংবাদ

হ্যাপি নিউ ইয়ার টু এভরিবডি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খরগোশ চিন্তামগ্ন। ভাবছে নতুন বছরটা কেমন করে বিজয়, আনন্দ-উল্লাস, সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে শুরু করা যায়। ভেবে কোনো কূল পাচ্ছে না। ভাবতে ভাবতে ক্ষুধা লেগে যায়। খাওয়ার পরে ঘুম এসে যায়। ঘুমের পরে আবার ভাবনা। কিন্তু ফলাফল শূন্য। তাহলে কি নতুন বছরটা গতানুগতিকভাবেই শুরু হবে? কোনো বিশেষত্ব কি থাকবে না?
এ রকম ভাবনার সময় সে দেখে কচ্ছপ আসছে তার দিকে। খরগোশ মনে মনে ভাবল, ওকে আরেকবার অনুরোধ করে দেখবে। যদি রাজি করানো যায় তো বাজিমাত। আতশবাজির আলো ছড়িয়ে বিজয়ের আনন্দ করবে। নতুন বছর দারুণভাবে শুরু হবে।
কয়েক হাত পথ আসতে কচ্ছপের এত সময় লাগে! খরগোশ গলা ছেড়ে বলল- আরে ভায়া, একটু তাড়াতাড়ি পা চালাও। তোমার সঙ্গে কথা আছে।
কচ্ছপ এলে খরগোশ বলল- তোমাকে তো অনেক বার বলেছি, তবু তুমি রাজি হচ্ছো না। আগামীকাল নতুন বছর। এসো, নতুন বছরে দৌড় প্রতিযোগিতাটা হয়ে যাক। একটু আনন্দ-উল্লাস দিয়ে নতুন বছর শুরু করা উচিত। তোমার-আমার মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতা হলে বনের অন্য সবাইও আনন্দ পাবে। সেই কোনো কালে একবার খরগোশ আর কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতা হয়েছিল! এই আধুনিক যুগে তো হয়নি। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারের যুগে একবার প্রতিযোগিতা হওয়া দরকার। সাহস করে তুমি রাজি হয়ে যাও। তুমি আর আমি ইতিহাস হয়ে যাব।
কচ্ছপ খুব বিরক্ত ছিল খরগোশের ওপর। দেখা হলেই একই কথা- দৌড় প্রতিযোগিতা। কচ্ছপের কমপক্ষে ৩০০ বছরের আয়ু। খরগোশ যদি ৩০০ বছর বেঁচে থাকে, তাহলে পুরো সময়টাই একই ঘ্যানর ঘ্যানর করে যাবে। তার চেয়ে প্রতিযোগিতায় যাওয়াই ভালো। হারলে ক্ষতি নেই। খরগোশের মুখ তো বন্ধ হবে। এসব ভেবে কচ্ছপ রাজি হয়ে গেল।
খরগোশকে আর পায় কে? খুশিতে পাগল হয়ে পুরো বনে খবর ছড়িয়ে দিল।
নতুন বছরের প্রথম সকালে আয়োজন করা হলো খরগোশ আর কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতার। বনের সব পশু-পাখি এলো সেই প্রতিযোগিতা দেখতে। বনের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দৌড়ে যেতে হবে। দড়ির দুই প্রান্তে ঝুলানো হলো হ্যাপি নিউ ইয়ার লেখা রঙিন কাগজ। ব্যান্ড দলকে ডাকা হলো। শেয়াল পণ্ডিতের গলায় ঝুলানো বাঁশি। সে বাঁশিতে ফুঁ দিলেই দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হবে।
খরগোশ আর কচ্ছপ প্রস্তুত। শেয়াল পণ্ডিত বাঁশিতে ফুঁ দিল। শুরু হলো দৌড়। খরগোশ এক লাফেই চলে গেল অনেক দূর। একটু পর কচ্ছপের আর দেখাই নেই। কচ্ছপ পড়ে রইল অনেক পেছনে।
সামনে একটা বটগাছ। সেই গাছের নিচে গিয়ে খরগোশ বসল। পকেট থেকে সেলফোন বের করল। ভাবল, কচ্ছপের আসতে অনেক দেরি। একটু ফেসবুক করে নেই। বাকি পথটুকু কয়েক লাফেই পার হওয়া যাবে। সে একটা সেলফি তুলল। ক্যামেরার জুম বাড়িয়ে পেছনে পড়ে থাকা কচ্ছপেরও একটা ছবি তুলল। ছবির ক্যাপশনে লিখল- আর মাত্র একটু পথ। তারপরই সূচিত হবে আমার বিজয়গাথা। ওই যে দ্যাখো কচ্ছপ মিয়া কত্ত পেছনে পড়ে আছে! আমার নতুন বছর শুরু হবে বিজয়ের উল্লাস দিয়ে। হ্যাপি নিউ ইয়ার টু এভরিবডি।
ছবি পোস্ট করা মাত্রই অগ্রিম অভিনন্দন-অভিবাদন আসা শুরু হলো। অনেক প্রশংসা বাণী। খরগোশও ধন্যবাদ জানিয়ে সবার কমেন্টের রিপ্লাই দিতে লাগল। ইনবক্সেও অনেকের সঙ্গে কথা বলতে লাগল। মেসেঞ্জারে ভিডিও কল, অডিও কল করতে লাগল। সে মগ্ন হয়ে গেল মোবাইলে। ভুলে গেল দৌড় প্রতিযোগিতার কথা। কচ্ছপ যে সামনে দিয়ে তাকে অতিক্রম করে চলে গেল তা খেয়ালই করল না।
একসময় তার ফোনের চার্জ ফুরিয়ে গেল। ফোন বন্ধ হয়ে গেল। তখন খরগোশের হুশ হলো। পড়িমরি করে দৌড়াতে লাগল।
দৌড়াতে দৌড়াতে শেষ সীমানায় এসে দেখে কচ্ছপ আগেই সেখানে পৌঁছে গেছে। সবাই কচ্ছপকে ঘিরে বিজয় আনন্দ করছে।
দৌড় প্রতিযোগিতায় কচ্ছপের জয় হলো। প্রধান অতিথি আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল। সে কচ্ছপের গলায় বিজয়মালা পরিয়ে দিল। কিছু উপহারও দিল। সবাই খুব খুশি। খরগোশও কচ্ছপের পিঠ চাপড়ে দিল। বলল- তোমার ফেসবুক আইডিতে এই বিজয়ের ছবি পোস্ট করে দিও। তোমার নতুন বছরের শুরুটা সার্থক হলো।
কচ্ছপ বলল- আমার কোনো ফেসবুক আইডি নেই। আমার কোনো সেলফোনও নেই। আমি ঘরে গিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে বিজয় আনন্দ উপভোগ করব। হ্যাপি নিউ ইয়ার টু এভরিবডি।

– আবুল কালাম আজাদ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়