৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরি : দুই রাজস্ব কর্মকর্তা ফের রিমান্ডে

আগের সংবাদ

নিরাপত্তার চাদরে পুরো দেশ : মাঠে সাড়ে ৯ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, মনিটরিং সেলে ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট

পরের সংবাদ

নভোদের নববর্ষ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কয়েকদিন ধরে একটি ছেলে প্রতিদিন বিকালে নভোদের কলোনির মাঠে ঘোরাঘুরি করে। উঁকিঝুঁকি দেয়। হয়তো সে খেলতে আসে। কিন্তু অপরিচিত বলে কেউ ওকে খেলতে নেয় না।
ছেলেটির নাম- তালাত। কলোনির পাশে কাঁঠালবাগান গ্রামে ওদের বাড়ি।
সব সময় তালাতের গায়ে থাকে ময়লা একটি হাফ শার্ট। প্রতিদিন সে এই জামাটি পরেই মাঠে আসে। শার্টের ওপর সোয়েটার বা জ্যাকেট থাকে না। তবে পায়ে প্লাস্টিকের একজোড়া স্যান্ডেল থাকে।
নভোরা যখন ব্যাডমিন্টন খেলে, সে তখন এক কোণে দাঁড়িয়ে ওদের খেলা দেখে। খেলা দেখার সময় চিকচিক করে তার চোখ দুটো।
কখনো শাটল-ককটি কোর্টের বাইরে চলে গেলে সে চট করে সেটি এনে দেয়।
সেদিন মাঠে পড়ে থাকা একটি র‌্যাকেট ধরতেই সাফোয়ান চিৎকার করে বলে উঠল, ‘এ্যাই! র‌্যাকেট ধরবে না।’
তালাত ভয় পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে র‌্যাকেটটি রেখে দিল।
সাফোয়ান বলল, ‘যাও। এখান থেকে চলে যাও। এটা আমাদের মাঠ। কখনো এখানে আসবে না।’
সাফোয়ানের কথা শুনে রুবাই এগিয়ে এসে বলল, ‘আরে তুমি ওর সঙ্গে রাগ করছ কেন?’
সাফোয়ান বলল, ‘কেন রাগ করছি জানো না? এই ছেলেটি তোমার র‌্যাকেট ধরেছিল।’
রুবাই বলল, ‘ও আচ্ছা। তাহলে ঠিক আছে। চলো খেলা শুরু করি।’
তালাত মন খারাপ করে চলে যাচ্ছিল।
নভো তাকে ডাকল, ‘এ্যাই তালাত শোনো!’
তালাত থামল। ফিরে তাকাল নভোর দিকে। তার গোমড়া মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল।
নভো বলল, ‘তুমি এখানে থাকো তালাত।’
সার্ফ করার সময় সাফোয়ান পা পিছলে পড়ে গেলে তালাত দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরে ওঠাল।
সাফোয়ান বলল, ‘এ্যাই, তুমি আমাকে ধরেছ কেন? ছাড়ো! ছাড়ো বলছি!’
তালাত তাকে ছেড়ে দিল।
রুবাই বলল, ‘তুমি তো পড়ে গিয়েছিলে। ও তোমাকে হেল্প করেছে। ওকে তোমার থ্যাঙ্ক ইউ বলা উচিত।’
সাফোয়ান বলল, ‘আরে ও তো গরিব। হাতে ময়লা। জামায় ময়লা। ওকে কেন থ্যাঙ্ক ইউ বলব?’
রুবাই বলল, ‘ও যখন বড় হবে তখন আর গরিব থাকবে না। প্রতিদিন বুথের মেশিনে কার্ড ঢুকিয়ে টাকা বের করবে। বুথে অনেক টাকা থাকে, জানো তো?’
সাফোয়ান বলল, ‘আরে জানি জানি।’
নভো বলল, ‘ঠিক বলেছ রুবাই। তালাত বুথের মেশিনে কার্ড ঢোকাবে। মেশিনের ভেতর শো শো শব্দ হবে। তারপর বেরিয়ে আসবে টাকা। তখন খুব মজা হবে।’
সাফোয়ান বলল, ‘সেটা যখন হওয়ার হবে। এখন ওকে চলে যেতে বল।’
নভো বলল, ‘ঠিক আছে তালাত! তুমি আজকে যাও। কাল আবার এসো।’
তালাত চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল।
নভো বলল, ‘কাল আসবে তো?’
তালাত খুশি হয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, আসব।’

২.
বাড়ি ফিরে ভীষণ অবাক হলো নভো। কারণ তার বাবা তার জন্য একটি র‌্যাকেট এবং এক বক্স শাটল-কক কিনে এনেছেন।
বাবা বললেন, ‘উপহার, বুঝলে? তোমার জন্য নববর্ষের উপহার।’
নভো বলল, ‘আরে, এগুলো তো আমার ছিলই।’
বাবা রহস্য করে বললেন, ‘নতুন বছরে নতুন জিনিস। তোমার জন্য আরো একটা উপহার আছে।’
নভো বলল, ‘কী, দেখাও।’
বাবা বললেন, ‘তার আগে তুমি চোখ বন্ধ কর।’
নভো চোখ বন্ধ করতেই বাবা সোফার নিচ থেকে একটি প্যাকেট টেনে বের করলেন।
নভো চোখ খুলেই দেখতে পেল লাল রঙের একটি জ্যাকেট। সে আনন্দিত হয়ে বলল, ‘ওরেব্বাহ! দারুণ তো!’
বাবা বললেন, ‘তোমার পছন্দ হয়েছে?’
এত আনন্দের মধ্যে হঠাৎ তালাতের কথা মনে পড়ল নভোর। ওর তো এসব কিছুই নেই। এই শীতে ওর না জানি কত কষ্ট হয়!
বাবা বললেন, ‘কী হলো নভো? কিছু বলছ না যে? জ্যাকেটটি কি তোমার পছন্দ হয়নি?’
নভো বলল, ‘না না। খুব পছন্দ হয়েছে।’

৩.
পরদিন খেলার মাঠের রোদের মতো তালাতের জন্য অপেক্ষা করছিল মুঠো মুঠো বিস্ময়।
যখন সে মাঠে এলো সবাই হাতে তালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানাল।
তালাত এসবের কিছুই বুঝতে পারল না। সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
শ্রেয়সী বলল, ‘শোনো তালাত। নভো তোমার জন্য এই গিফ্টগুলো এনেছে। এগুলো নাও।’
সে তালাতের হাতে একটি র‌্যাকেট, শাটল-কক এবং লাল রঙের জ্যাকেটটি তুলে দিল।
নভো, রুবাই, সাফোয়ানসহ আরো যারা মাঠে ছিল সবাই একযোগে হাততালি দিল। ওদের হাততালিতে মুখর হয়ে উঠল কলোনির মাঠ।

– মহিউদ্দীন আহ্মেদ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়