ফৌজদারি আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান চ্যালেঞ্জ করে রিট

আগের সংবাদ

রাতারাতি ডাবল সেঞ্চুরি : ফের টালমাটাল পেঁয়াজের বাজার > অভিযানে নেমেছে ভোক্তা অধিদপ্তর > দেশি পেঁয়াজ হাওয়া

পরের সংবাদ

‘ভালোবাসা ধর্ম-জাতি-ভাষার ঊর্ধ্বে’

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গত বছর বড়দিনে মুক্তি পেয়েছিল দেব-মিঠুনের ‘প্রজাপতি’। ২০২২ সালের সবচেয়ে বড় ব্লকবাস্টারের মধ্যে অন্যতম ছিল
সে ছবি। এ বছর বড়দিনেও আসছেন দুজন; দুটি ভিন্ন ছবি নিয়ে। দেবের ‘প্রধান’ এবং মিঠুনের ‘কাবুলিওয়ালা’। তবে বক্স অফিসের রেষারেষি দূরে রেখেই এগোতে চান তারা। ছবি মুক্তির আগে ভারতীয় গণমাধ্যমের মুখোমুখি সুমন ঘোষের ‘কাবুলিওয়ালা’। তারই চুম্বকাংশ মেলার পাঠকদের জন্য
‘প্রজাপতি’র সময় আপনি বলেছিলেন, চিত্রনাট্যে কোনো চমক না থাকলে আপনি এখন আর রাজি হন না।
৪০০টা ছবি করা হয়ে গিয়েছে। গল্পে একটু কাতুকুতু না থাকলে এখন আর অভিনয় করতে ভালো লাগে না। একঘেয়েমি চলে এসেছে। তবে শেষ যে ক’টা ছবি করেছি সব আলাদা স্বাদের। ‘কাশ্মির ফাইল্স’, ‘দ্য তাসকেন্ট ফাইল্স’, ‘রিওয়াজ’, ‘বেহিসাব’, ‘প্রজাপতি’ সবই আলাদা।
কিন্তু ‘কাবুলিওয়ালা’ তো সে অর্থে আলাদা নয়। বাঙালির খুব চেনা গল্প। তা হলে রাজি হলেন কেন?
৩০-এর বেশি যাদের বয়স, তারা হয়তো সবাই পড়েছেন। কিন্তু ২০ থেকে ২৫-এর মধ্যে যারা, তাদের নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। জানি না কত জন পড়েছেন। আমি তাদের অনুরোধ করব একবার দেখার। কারণ, এটা এমন একটা গল্প, যেখানে ধর্ম নির্বিশেষে আবেগ রয়েছে। সুমনকে (ঘোষ, পরিচালক) আমার কুর্নিশ যে, এই সময় দাঁড়িয়ে ও এই গল্পটা ভেবেছে। আমি মনে করি, সত্যিকারের অনুভূতির কাছে কোনো জাতি-ধর্ম বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
কম বয়সিদের কথা মাথায় রেখে ছবিটা করছেন। কিন্তু তাদের কাছে কি রবীন্দ্রনাথ এখন সত্যিই প্রাসঙ্গিক?
আমার তো মনে হয়, রবীন্দ্রনাথ চিরকাল প্রত্যেকের কাছে প্রাসঙ্গিক। কারণ রবীন্দ্রনাথ ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ করতে শেখান না। আমিও সে মতাদর্শেই বিশ্বাস করি। তবে কে কতটা মনোযোগ দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণ করবেন, তা তর্কসাপেক্ষ। বাবা-মায়েদের আগামী প্রজন্মকে শেখানো উচিত। আমি যেমন আমার ছেলেমেয়েদের শেখাই।
আপনাদের বাড়িতে রবীন্দ্রচর্চা হয়?
অবশ্যই। শুধু আমার ছেলেমেয়ে কেন, বাঙালি ঘরে সব বাচ্চাকেই এখনো শেখানো হয়। কিন্তু কে কতটা পড়াশোনা করে কবিগুরুর শিক্ষা নেয়, জানি না। নতুন প্রজন্মের কাছে সময় কোথায়! সকালে ফোন হাতে নিয়ে ঘুম থেকে উঠছে! রাতে ঘুমোনোর সময়ও তাই। কী যে এত দেখে, কতটা বোঝে, জানি না। জ্ঞান অর্জন করার ক্ষেত্রে আমার কাছে সমাজমাধ্যম শুধুই ট্র্যাশ। কারণ যা থেকে আমার জ্ঞান বাড়বে না, আমার কাছে তার কোনো মূল্য নেই। জ্ঞান না থাকলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
‘কাবুলিওয়ালা’-এ রহমত যে মানুষদের প্রতিনিধি, বর্তমানে ভারতীয়দের যে ভারতের স্বপ্ন দেখানো হয়, সেখানে কি সেই শ্রেণির মানুষরা ব্রাত্য?
এটাই সুমনের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। পরিচালক এমন একটা গল্প বলছে, যা দেখে বর্তমান সময় একদমই হয়তো অসম্ভব মনে হতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি, সেটা সম্ভব। ভালোবাসা সত্যি হলে দুটো ধর্মের যে সব বাধা ভেঙে যেতে পারে, ‘কাবুলিওয়ালা’ তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। আজকের দিনে সবচেয়ে বড় সত্য হবে ‘কাবুলিওয়ালা’। তাই আমার জন্য দেখার দরকার নেই। কিন্তু নিজে সচেতন হওয়ার জন্য ছবিটা দেখা খুব প্রয়োজন। কারণ এই ছবিটা এই সময়ে খুব প্রাসঙ্গিক।
এখন তো সব রাজ্যেই বহিরাগত নিয়ে নানারকম আলোচনা হয়। সেখানে আফগানিস্তান থেকে আসা একজন ব্যবসায়ীকে মানুষ বাস্তবে মেনে নেবেন বলে মনে হয়?
এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। যেখানে স্বার্থ জড়িয়ে থাকে, সেখানে এই ধরনের আলোচনা হবেই। যে দিন স্বার্থ ফুরিয়ে যাবে, তখন এই ন্যায়-অন্যায়ের প্রশ্নগুলো তোলা সম্ভব। বাইরে থেকে কেউ এসে যদি আপনাকে এক কোটি টাকা দেয়, আপনি ঠিক গলা জড়িয়ে আত্মীয়তা তৈরি করবেন। এক বছর নিজের বাড়িতে রেখে খাইয়ে-দাইয়ে সেই আত্মীয়তা পালন করবেন। কিন্তু কোনো স্বার্থ না থাকলেই সে ‘বহিরাগত’ হয়ে যাবে, তাই না?
সুমন ঘোষের সঙ্গে আপনি আগেও ‘নোবেল চোর’ ছবিটা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আপনার যোগটা তার হাত ধরে বরাবরই?
সুমনের রবীন্দ্রযোগ খুব বেশি। কারণ, ও ঝুঁকি নিতে জানে। নোবেল চুরি হয়েছিল। কিন্তু ক’জন তা নিয়ে ছবি করার কথা ভেবেছে! কিন্তু ও সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়ে খুব বিশ্বাসযোগ্যভাবে কাজটা করতে পেরেছিল। গত পাঁচ বছর ধরে ও ভাবছিল, কী করে দাদাকে বলি যে তোমায় ছাড়া ‘কাবুলিওয়ালা’ করব না। এই সব ভেবে দেড় বছর আগে ও সাহস করে মুম্বাই এসে আমায় এক দিন বলল, ‘দাদা একটা কথা বলে চলে যাব’। আমি তখন ‘হুনারবাজ’-এর শুটিং করছি। ওর প্রস্তাব শুনে আমি বললাম, ‘তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস! দু-দুজন মহারথী (বলরাজ সাহনি এবং ছবি বিশ্বাস) যে চরিত্র করেছেন, আমি তা করব! সরি, তুই চলে যা। পরে কথা হবে।’ তারপর ও হতাশ হয়ে চলে গেল। আবার ফোন করে এক দিন বলল, ‘তুমি কোথায়? আমি একটা অন্য বিষয় ভেবেছি।’ সব মিথ্যা কথা! সেই ঘুরেফিরে ও বারবার ‘কাবুলিওয়ালা’র কথাই বলে। এই সব কথা হতে হতে আমি জানতে চাইলাম, প্রযোজক কে। কারণ, সাহসী প্রযোজক না হলে এই ছবি হবে না।

আপনি সব ছবির ক্ষেত্রে আগে প্রযোজক দেখে নেন?
না, তেমন নয়। এ ক্ষেত্রে দেখেছিলাম। কারণ ১৯৬৫ সালে এমন ছবি করার সাহস প্রযোজকরা সহজেই দেখাতে পারতেন। এখন বাংলা সিনেমার সেই সাহস কম। কোনো ছবির ওপর প্রযোজকের আস্থা না থাকলে সেই ছবি করে লাভ কী!
বাঙালির কাছে ‘কাবুলিওয়ালা’ বলতেই এখনো ছবি বিশ্বাসের মুখ ভেসে ওঠে। এমন একটি চরিত্রের প্রস্তুতি নিলেন কী করে?
আমার জীবনে যে ক’টা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আমি করেছি, বাস্তবে কাউকে না কাউকে পেয়ে গিয়েছিলাম যাকে দেখে আমি অনুপ্রাণিত হতে পারি। বারবার আমার সঙ্গে এমন হয়েছে। কোথাও না কোথাও আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং পর্যবেক্ষণ কাজে লেগে গিয়েছে। আমার এক রুমমেট ছিল যে এক দিন খুব রেগে গিয়ে আমায় গালাগালি করেছিল। ‘অগ্নিপথ’-এ আমি ওর কথা বলার ধরন অনুকরণ করেছিলাম। যদি ‘দ্য তাসকেন্ট ফাইলস’ ভালো করে দেখেন, তা হলেই বুঝতে পারবেন, কাকে অনুকরণ করেছি। খুব বড় নেতা, কিন্তু তার নাম নিলে এখন কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে (হাসি)! তেমনই ‘ওহ্?! মাই গড’ করার সময় আমি তিনজন সদ?গুরুকে অনুকরণ করেছি। তাদের নাম বললে লোকে তেড়ে আসবে (হাসি)। ‘কাবুলিওয়ালা’র ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আফগানিস্তানের এক পাঠান আমার বন্ধু ছিল জামাল। যে আমায় রান্না করা শিখিয়েছে। ওর হাঁপানির রোগ ছিল। ১৯৮৩-৮৪ সালের কথা হবে। আমি যেখানেই শুটিং করতাম, ও ঠিক ওর ছোট্ট একটা ডাব্বা নিয়ে আমার জন্য কিছু না কিছু রান্না করে নিয়ে যেত। শুটিংয়ে বলা থাকত সব জায়গায়, যাতে ওকে ভিআইপি ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়। ও ‘মিঠুন’ বলতে পারত না। বলত, ‘মঠন’। ও কিন্তু আমায় বরাবর বলত, ‘আমি আল্লাহকে বলেছি, তুই এক দিন নম্বর ওয়ান হবিই’। ও সত্যিই আমার পাশে ছিল। যখন আমি এক নম্বর হতে পেরেছিলাম, তখন ও দেশে ফিরে যায়। মেয়ের বিয়ে দেয়। আমি সে সময় ওকে কিছু আর্থিক সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ও কিছুতেই নেয়নি। ওর চরিত্র এতটাই দৃঢ় ছিল। যদি ও আজ বেঁচে থাকে, তা হলে এই ছবিটা আমি ওকে উৎসর্গ করতে চাই। আমি শুধু পরিচালককে ওর কথা বলার ধরনটা দেখিয়েছিলাম। সুমন বলল, ‘আমার এটাই চাই। আমার কাবুলিওয়ালা এ রকমই হবে।’
গত বছর ‘প্রজাপতি’ দারুণ হিট হয়েছিল। এ বছরও বড়দিনে আপনার ছবি আসছে। কী মনে হয়, আবার বক্স অফিসে একই রকম জাদু করা যাবে?
এ আমি বলতে পারব না। প্রযোজকরা বুঝে নেবেন। আবার সেই ডেসটিনির কথাই চলে আসবে।
আপনি নিজেও তো দীর্ঘ সময় ধরে অন্য রকমের ছোট বাজেটের ছবি প্রযোজনা করেছেন। আপনারও তো নিশ্চয়ই এক ধরনের দূরদর্শিতা রয়েছে…।
এই ছবির মধ্যে খুব সুন্দর একটা বার্তা রয়েছে। অনেক অনুভূতি জড়িয়ে রয়েছে। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে তো মনে হয় এই ছবিও বড়সড় হিট হবে। সবার ভালো লাগা উচিত। কারণ সত্যিকারের ভালোবাসা তো ধর্ম-জাতি-ভাষার ঊর্ধ্বে।

:: মেলা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়