জীবন নামক নদীর স্রোত আমাদের প্রতিকূলে হতে পারে; স্বপ্নেরা সব মিথ্যা হয়ে যেতে পারে। তবে তুমি কখনো ছলনাময়ী হয়ো না, কারণ আমি তোমার সঙ্গে সারাটা জীবন ভালোবেসে কাটাতে চাই। মনের মানুষকে কাছে পেয়ে হারানোর বেদনায় পরাভূত না হতে সবার মনস্কামনা এমনই হয়। তারপরও হারানোর বেদনা কাউকে কাউকে গ্রাস করে। ‘এত ভালোবাসা পেয়ে, ভেতরে ভীষণ লাজে, বেদনারা লাল হয়ে গেছে’ কবি হেলাল হাফিজ ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার উচ্ছ¡াসটা এমনইভাবে ‘লজ্জা’ কবিতায় তুলে ধরেন। তারপরই আবার ‘অবেলার খেলা’ কবিতায় হাহাকার করেন ‘প্লিজ অবেলায়, তরঙ্গ তুলিয়া রঙ্গে ভঙ্গ দিও না, ওগো, বাঁচিবো না, মরিয়া যাইবো আমি মরণের আগে।’
বাংলা সিনেমার জগতে রোমান্টিক জুটি উত্তম কুমার-সুচিত্রা সেন। আরো কাছের বললে নায়ক রাজ্জাক-কবরী। তারা শত শত রোমান্টিক সিনেমা দর্শককে উপহার দিয়েছেন। তখনকার দিনে বাংলার ঘরে ঘরে তরুণ-তরুণীরা নায়ক রাজ্জাক-কবরী, কিংবা উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের পোস্টার সাঁটাত। এখনো রোমান্টিক সিনেমা তৈরি হয়, তবে তা হাতেগোনা। কিন্তু নায়ক-নায়িকারা এখন রোমান্টিক সিনেমা নিয়ে যতটা না ব্যস্ত, তার থেকে বেশি ব্যস্ত তারা ব্যক্তিগত রোমান্টিকতা ও রোমাঞ্চ নিয়ে।
ঢাকাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সুপারস্টার শাকিব খান বিভিন্ন সময় খবরের শিরোনাম হন। ২০১৭ সালের এপ্রিলে হঠাৎ বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বিয়ে ও সন্তানের খবর জনসমক্ষে প্রকাশ করেন তখনকার গøামার গার্ল অপু বিশ্বাস। তিনি জানান, ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু শাকিবের ক্যারিয়ারের কথা বিবেচনা করে ওই বিয়ের খবরটি সে সময় গোপন রাখা হয়। প্রায় ৯ বছর পর এই সম্পর্কের কথা প্রকাশ করার সময় অপু বিশ্বাস জানান, তিনি শাকিবের ভালো চিন্তা করে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের ছেলের নাম আব্রাহাম খান জয়। এ ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় পড়ে যায়। কিন্তু এর কিছুদিন পরই উকিলের মাধ্যমে অপুকে তালাকনামা পাঠান শাকিব খান।
এরপর শাকিব-বুবলী সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয় ঢালিউডপাড়ায়। নানাজন নানা মুখরোচক গল্প সাজাতে থাকেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পায় শাকিব-বুবলীর ‘বীর’ সিনেমা। ছবি মুক্তির আগে থেকেই বুবলী লাপাত্তা। তখন সিনেমা থেকে নায়িকার খোঁজ না পাওয়া নিয়েই আলোচনা হয় বেশি। সে সময় ছবির নায়ক বা প্রযোজক কেউই জানাতে পারেননি তাদের নায়িকার খবর। বুবলী অন্তঃসত্ত্বা, ঘটনা আড়াল করতে দেশের বাইরে গেছেন তিনি- এমন গুজবও তখন রটে। এমনো শোনা যায়, সন্তান প্রসবের জন্য বুবলীকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন শাকিব খান। অবশ্য তখন শাকিব এসব উড়িয়ে দেন। মিডিয়া টিআরপি বাড়াতে এসব গুজব ছড়াচ্ছে, তাই এসবকে পাত্তা দেয়া যাবে না বলে উল্লেখ করেন।
দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস আড়ালে থাকার পর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশ্যে আসেন বুবলী। মা হওয়ার গুঞ্জনকে তিনি কল্পকাহিনী উল্লেখ করে উড়িয়ে দেন। একতরফাভাবে বাছবিচার না করে কথা বলতে মিডিয়ার প্রতি অনুরোধ করেন। ‘গল্পের পেছনেও অনেক গল্প থাকে, তাই আমরা আপাতত এসবে কান না দিই।’ বলেন বুবলী।
এ সময় তিনি নতুন করে কাজে মনোযোগ দেন। আগে শাকিব ছাড়া কাজ না করলেও এ সময় জিয়াউল রোশান, আদর আজাদ ও সাইমনের সঙ্গে কাজ করতে দেখা যায়। এ সময় মনে হচ্ছিল- যা কিছু রটে কিছু না কিছু ঘটে মিথ্যা প্রমাণিত হবে।
কিন্তু ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে বেবি বাম্পের ছবি দিয়ে চমকে দেন বুবলী। বুবলী ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘আমি আমার জীবনের সঙ্গে। ফিরে দেখা আমেরিকা।’ এরপর থেকেই নতুন করে শুরু হয় গুঞ্জন। একই দিন পরে সাংবাদিকদের বুবলী বলেন, ‘অনুগ্রহ করে সবকিছু না জেনে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সংবাদ করবেন না। সবকিছুর পেছনে অবশ্যই ব্যাখ্যা আছে। আমি কয়েক দিনের মধ্যেই আপনাদের পরিষ্কার করব।’
হঠাৎ বুবলীর বেবি বাম্পের ছবি প্রকাশ্যে আসায় আলোড়ন তৈরি হয়। কেন ওই সময় বুবলী বেবি বাম্পের ছবি প্রকাশ্যে আনলেন? জানা যায়, ওই সময় শাকিব খানের বাড়িতে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের সঙ্গে ছেলে আব্রাহাম খান জয়ের জন্মদিন পালন করার খবরেই ভয় বা শঙ্কা জাগে বুবলীর।
জন্মদিন পালনের পর বেশ কয়েকটি ছবি ফেসবুকে দিয়ে অপু বিশ্বাস ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘সুখী পরিবারের কিছু মুহূর্ত। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।’
কিন্তু বুবলীর এমন কাণ্ডে বেজায় চটে যান শাকিব খান। বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ এনে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন বুবলীর সঙ্গে।
অবশেষে শাকিব খান ও বুবলী দুজনই স্বীকার করেন, ২০২০ সালের ২১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড জ্যুইশ মেডিকেল হাসপাতালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন বুবলী। সন্তানের নাম শেহজাদ খান, ডাকনাম বীর।
শেহজাদ খানের সঙ্গে ছবি দিয়ে আলাদা আলাদা ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন শাকিব খান ও বুবলী। কিন্তু ওই পোস্টে কেউই তাদের বৈবাহিক অবস্থা পরিষ্কার করেননি। কবে তাদের বিয়ে হয়েছে, সে সম্পর্কে দুজনের কেউ স্পষ্ট করেননি।
সংবাদ পাঠিকা থেকে সিনেমার নায়িকা বনে যাওয়া শবনম বুবলী ২০১৬ সালে ঢাকার সিনেমার শীর্ষ অভিনেতা শাকিব খানের বিপরীতে ‘বসগিরি’ সিনেমা দিয়ে রূপালি পর্দায় পা রাখেন। ছবিটির সঙ্গে যুক্ত সূত্র মতে, বসগিরির সেটেই শাকিব-বুবলীর প্রেম শুরু। বসগিরি সুপারহিট হলে একের পর এক ছবির প্রস্তাব আসতে থাকে। অপু বিশ্বাসের পর শাকিবের নতুন জুটি হন বুবলী।
২০১৯ সালে ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ ও ‘পাসওয়ার্ড’ ছবির গানের শুটিংয়ে তুরস্কে যান শাকিব ও বুবলী। তুরস্ক তারা ছিলেন আট দিন। ওই শুটিং ইউনিটের একটি সূত্র জানায়, তুরস্কে শুটিংয়ের সময় ঘনিষ্ঠ হয় তাদের সম্পর্ক। ‘বসগিরি’ দিয়ে সম্পর্ক শুরু হলেও মাঝে বেশ কয়েকবার নানা কারণে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
অনেক দিন ধরে দুজনের পথ দুদিকে। কিছুদিন আগে গান বাংলার কর্ণধার কৌশিক হাসান তাপসের সঙ্গে শবনম বুবলীর প্রেমের খবর চাউর হয়। এ বিষয়ে সম্প্রতি শাকিব বলেন, ‘আমি আসলে বরাবরই মানুষ চিনতে ভুল করেছি। বিশেষ করে দ্বিতীয়বার (বুবলীকে বিয়ে) আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছি। মানুষের বাহ্যিক আচরণ দেখে তাকে জাজ করা মুশকিল। সিনেমাতে যেমন দেখা যায়, যাকে চিন্তাই করতে পারি না যে, তিনি ক্রিমিনাল হতে পারেন। পরে দেখা যায়, তিনি সবচেয়ে বড় ক্রিমিনাল।’

:: মোহাম্মদ ইব্রাহীম