বিজিএমইএ নির্বাচন মার্চে

আগের সংবাদ

জাপার আসনে নৌকা প্রত্যাহার! ৩০ থেকে ৩৫ আসন প্রত্যাশা জাতীয় পার্টির > চলছে দেনদরবার

পরের সংবাদ

স্বাধীনতার সুখটাই আলাদা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

– একি দাদু তুমি? খুব ভালো সময় এসেছো। জানো কাল স্কুলে ফাংশন। কবিতা আবৃত্তি, গান কত কী! তুমি কিন্তু আমার কবিতাটা ঠিক করে দেবে; কেমন?
– আচ্ছারে ভাই, সে না হয় দিলাম। কিন্তু কিসের ফাংশন শুনি?
– ওমা, তুমি তাও জানো না? কাল ১৬ ডিসেম্বর। আমাদের বিজয় দিবস।
– কিসের বিজয়?
– নাহ্ তুমিতো কিচ্ছু জানো না দেখছি। ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই যুদ্ধে বাংলার দামাল ছেলেরা প্রাণবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিল। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ। কত প্রাণ, কত মা-বোনের মান বিকিয়ে অবশেষে আসে ১৬ ডিসেম্বর। আমাদের মহান বিজয় দিবস। সেই থেকে আমরা মুক্ত স্বাধীন।
– বাহ্! কোত্থেকে জেনেছিস? বই পড়ে? নাকি আব্বু আম্মু…
– না গো দাদু, বাবা-মার কি সেই সময় আছে। বই পড়ে জেনেছি। ক্লাস টিচারও একদিন বলেছিলেন। আমার কাছে একটা বই আছে মুক্তিযুদ্ধের। পড়বে? এর মধ্যে সব আছে।
– না। নেই। বইয়ে সব কিছু থাকে না।
– দাদু, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে যে! আমার কোন কথায়…
– নারে ভাই ও কিছু না। মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭১ এর কথা শুনলেই আমার মধ্যে যেন আমি থাকি না। আমার মধ্যে আর একটা মানুষ জেগে ওঠে। জীবনবাজি রেখে আমিও তো যুদ্ধ করেছিলাম। কই তোমাদের বইয়ে সেসব লেখা আছে? নেই। প্রয়োজনও নেই। ইতিহাসে নাম লেখানোর লোভে আমরা যুদ্ধ করিনি।
– তুমি যুদ্ধ করেছো? কই আগে তো বলনি!
– এসব কথা কে শুনতে চায় বল? মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনলেই সবার যেন গা ঘিন ঘিন করে ওঠে, নাক সিঁটকে যায়।
– আগে হাত-মুখ ধুয়ে খেয়ে নাও, তার পরে শুনব তোমার যুদ্ধের কাহিনি। আচ্ছা দাদু, তুমি সব জেনে-বুঝেও আমাকে বিজয় দিবস কী? কিসের বিজয়? এ রকম প্রশ্ন কেন করলে?
– সে দিন আমাদের গ্রামের এক শিক্ষিত ভাই বারবার তার বক্তব্যে ১৬ ডিসেম্বরকে স্বাধীনতা দিবস উল্লেখ করেছিল। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, তাই বাজিয়ে নিচ্ছিলাম আমার ছোট্ট ভাইটা কী বলে!
– ও, তাহলে এই ব্যাপার। আমিও কিন্তু এমনটাই অনুমান করেছিলাম।
দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর দাদু বিশ্রামের জন্য বালিশে হেলান দিলেন, ক্লান্তিতে চোখ বুজে এলো তার। শুভ ডাকল না দাদুকে। ভাবল দাদু একটু ঘুমিয়ে নিক, অনেক ধকল গেছে জার্নি করে। ঘুম থেকে উঠলে তখন না হয় যুদ্ধের কথা শোনা যাবে।
জানালা দিয়ে হিমেল বাতাস ঢুকছে ঘরে। শুভ জানালাটা বন্ধ করে দিয়ে দাদুর গায়ে
কাঁথা টেনে দিল।

দাদুর দিকে তাকিয়ে তার বুকের মধ্যে আজ অন্যরকম এক শ্রদ্ধা-
ভালোবাসার ঝড় কেঁপে উঠল। এই মানুষটা নিজের জীবনের ভয় তুচ্ছ করে দেশের জন্যে, দশের জন্যে যুদ্ধ করেছেন! গর্বে বুক ভরে গেল শুভর।
দাদু ঘুম থেকে উঠলেন বিকাল ৪টায় সময়। হাত-মুখ ধুয়ে কাছে ডেকে নিলেন শুভকে।
শুভ বলল- দাদু, তোমার ডান পাটা কি নষ্ট হয়েছিল যুদ্ধের সময়? গুলি লেগে?
– না রে ভাই। পাটা ভেঙে দিয়েছিল এ দেশের কিছু লোক। পাকিস্তানের দালাল। সবে তখন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছি। ভারত থেকে ট্রেনিং শেষ করে এসে অস্ত্র ধরেছি দেশের জন্যে। হঠাৎ এক সন্ধ্যায় তোর দাদির সঙ্গে দেখা করতে গ্রামের বাড়িতে এসেছি।
– দাদিমা তখন গ্রামেই ছিল?
– হ্যাঁ, দেখলাম তোর দাদিমার বীভৎস লাশ পড়ে আছে বাড়ির দরজায়। একটু দূরে হামাগুড়ি দিচ্ছে আর মা মা বলে কেঁদে আকুল হচ্ছে তোর বাবা। ছেলেটা বুঝতেও পারেনি তার মা আর তার ডাকে সাড়া দেবে না।
আমি যেন পাগল হয়ে গেলাম। চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম। তোর বাবাকে বুকে নিয়ে দু-কদম এগিয়েছি। অমনি রাজাকারের দল ঘিরে ফেলল আমাকে। তারপর এক পাকিস্তানি আর্মি আমাকে উলঙ্গ করে দাঁড় করিয়ে রাখল! আমি যে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছি, সে খবর রাজাকারেরা তখনো জানে না। হয়তো সে কারণেই আমাকে প্রাণে মারল না। কিন্তু চিরদিনের জন্য অকেজো করে দিল আমার ডান পাটা। তারপরও যুদ্ধ করেছি। আক্রোশ ক্ষোভ বিদ্রোহের আগুনে ভুলেই গিয়েছিলাম আমার ডান পায়ের ক্ষত। তারপর… এলো বিজয়।
দাদুর চোখের জল তার গাল বেয়ে বিছানায় পড়তে লাগল। আরো কিছু বলছিলেন দাদু যা অস্পষ্ট। কিন্তু তা বুঝতে কষ্ট হবে না কারো। কারণ সব মানুষের বেদনার ভাষা যে একই রকম।
শুভ একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেল। তার চোখ থেকেও গড়িয়ে পড়ল অশ্রæ। দাদু শুভকে অনেক আদর করে হাত ধরে শুভকে নিয়ে গেলেন বারান্দায়। সেখানে খাঁচার মধ্যে শুভর খুব আদরের একটা টিয়ে পাখি।
দাদু বললেন- খাঁচায় পাখি পুষেছিস কেন ভাই?
– মা-বাবা তো সারাদিন বাইরে থাকে। এই পাখিটাই আমার এক মাত্র বন্ধু। ওর সঙ্গে আমি খেলি, আনন্দ করি।
– নিজের আনন্দের জন্য অন্যকে দুঃখ দেয়া ঠিক? যত আদরই করো, ভালোবাসো, ভালো খেতে দাও, ও তো পরাধীন। ও ইচ্ছা হলেই উড়তে পারে না। ওর কিসের অপরাধ বলো?
– তাই তো দাদু। তুমি ঠিক বলেছো।
শুভ খাঁচার দুয়ার খুলে পাখিটাকে বের করে তুলে দিল দাদুর হাতে। বলল- দাও দাদু, তুমি ওকে মুক্ত করে দাও। একজন মুক্তিযোদ্ধার হাতে মুক্ত হোক আর এক মুক্তিকামী বন্ধু।
দাদু মুক্ত করে দিতেই পাখিটা আনন্দে অদ্ভুত শব্দ করতে করতে পাখা মেলে উড়তে লাগল মাঠ-ঘাট ছাড়িয়ে। দাদু বললেন- দেখলিতো ভাই। স্বাধীনতার সুখটাই আলাদা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়