কাপাসিয়ায় গ্রেপ্তার ৭৬, বিএনপির দাবি শতাধিক

আগের সংবাদ

ভুল চালে ব্যাকফুটে বিএনপি : দিতে হচ্ছে সহিংসতার খেসারত > নতুন করে আন্দোলনে গতি ফেরানো কঠিন হবে

পরের সংবাদ

ব্লæমবার্গের টেকসই তালিকায় দেশের ৭ কোম্পানি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : টেকসই ব্যবসার চর্চা গ্রহণে করপোরেট বাংলাদেশ বেশ ধীরগতিতে এগিয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে সেই চর্চা কিছুটা বেড়েছে। তারই সুবাদে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাতটি কোম্পানি তাদের গত বছরের পরিবেশগত, সামাজিক ও সুশাসনমূলক (ইএসজি) কাজের জন্য ব্লæমবার্গ থেকে বেশ ভালো নম্বর পেয়েছে।
এ কোম্পানিগুলো হচ্ছে- গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশ, ম্যারিকো বাংলাদেশ, ব্র্যাক ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ। সারাবিশ্বের ১৬ হাজারের বেশি তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্থান পেয়েছে এ তালিকায়। আন্তর্জাতিক ইকুইটি বাজার মূলধনের ৯৩ শতাংশের বেশি এ কোম্পানিগুলোর দখলে। তবে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর ব্লæমবার্গ ইএসজি স্কোর অন্যান্য আঞ্চলিক কোম্পানির স্কোরের চেয়ে বেশ কম। যেমন, শীর্ষ ১০০ ভারতীয় কোম্পানির স্কোর ৫০ থেকে ৭০-এর মধ্যে। অন্যদিকে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর স্কোর ২৩ থেকে ৪০-এর মধ্যে। উল্লেখ্য, মোট ১০০-র মধ্যে স্কোর দেয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য ইএসজি রেটিং গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারীই, বিশেষ করে ইউরোপীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখন বিনিয়োগের আগে দেখতে চায় নির্দিষ্ট কয়েকটি ইএসজি মানদণ্ড পূরণ করা হয়েছে কিনা। স্থানীয় শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে সহায়তা প্রদানকারী কোম্পানি ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের সিইও আহসানুর রহমান এ প্রবণতার কথা উল্লেখ করেন।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, টেকসই ব্যবসার চর্চা শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্যই অপরিহার্য নয়। শত বছর টিকে থাকবে এবং শেয়ারহোল্ডার, অর্থনীতি ও সমাজকে উপকৃত করে যাবে, এমন ব্যবসা গড়ে তোলার জন্যও এ চর্চা গুরুত্বপূর্ণ।
কে কত ইএসজি স্কোর পেল : বাংলাদেশের বেশ কিছু নেতৃস্থানীয় তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) গ্রহণ করেছে, যা ইএসজির আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নেতৃস্থানীয় আন্তর্জাতিক ইএসজি স্কোরিং প্রতিষ্ঠান ব্লæমবার্গ বিভিন্ন কোম্পানির আদর্শ টেকসই প্রতিবেদন থেকে প্রাসঙ্গিক, পরিমাপযোগ্য তথ্য নেয় এবং সেগুলোর ভিত্তিতে কোম্পানিগুলোকে স্কোর দেয়। ব্লæমবার্গ টার্মিনাল ব্যবহারকারী বিনিয়োগকারীরা এ স্কোর দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।
শীর্ষস্থানীয় টেলিযোগাযোগ কোম্পানি গ্রামীণফোন দীর্ঘদিন ধরে টেকসই ব্যবসার চর্চা করছে। বহুজাতিক কোম্পানিটি বার্ষিক টেকসই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ব্লæমবার্গ ইএসজি ইউনিভার্সে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৯.৬ স্কোর পেয়েছে গ্রামীণফোন। তথ্য বলছে, প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর উন্নতি করছে।
তামাক বাজারের নেতৃস্থানীয় কোম্পানি বিএটি বাংলাদেশ ৩৫.৪ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় এবং হেয়ারকেয়ার মার্কেটের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি ম্যারিকো বাংলাদেশ ৩৪.৯ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্লæমবার্গ ইএসজি স্কোর ৩৩.১। আর ৩১.১ স্কোর নিয়ে তার পরেই বৃহত্তম ননব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্সের অবস্থান। ফার্মাসিউটিক্যালস বাজারের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের স্কোর ২৬, আর দেশের ইলেকট্রনিকস বাজারের নেতৃস্থানীয় কোম্পানি ওয়ালটনের স্কোর ২৩.৭।
এ ব্যাপারে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শোয়েব হোসেন নোবেল বলেন, আন্তর্জাতিক ও সবুজ কোম্পানিতে পরিণত হওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওয়ালটন পরিবেশ রক্ষা, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সুশাসনের চর্চা গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন- ওয়ালটন তাদের চীনা ও ভারতীয় প্রতিদ্ব›দ্বীদের আগেই সিএফসি নিঃসরণকারী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণক পণ্য পর্যায়ক্রমে বাজারে আনা বন্ধ করে দিয়েছে। কোম্পানিটি এখন সৌর শক্তিতে বিনিয়োগ করছে এবং বেশি জ্বালানি খরচ করে এমন পণ্যগুলো পর্যায়ক্রমে উঠিয়ে নিচ্ছে।
স্কয়ারের সিএফও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাদের টেকসই ব্যবসার চর্চা শুরু হয় দুই দশক আগে, কারখানাগুলোকে দূষণমুক্ত করার মাধ্যমে। এরপর তাদের টেকসই চর্চার উপাদান কেবল বেড়েছেই।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের ডিএনএতেই প্রোথিত করে দেয়া হয়েছে টেকসই ব্যবসার চর্চা। ব্যাংকটি টেকসই ব্যবসার চর্চা ও মুনাফার মধ্যে সফলভাবে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকটি দারুণ ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের টেকসই অর্থায়নের প্রধান তাশমীম মুনতাজির চৌধুরী বলেন, ‘ইএসজি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা বিশ্বের সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর একটি এবং ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য বাংলাদেশ জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে।
ইএসজি বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশের অবস্থা : ব্লæমবার্গের তথ্যমতে, ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বে ইএসজি সম্পদের পরিমাণ ৫৩ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে, যা ব্যবস্থাপনার অধীন মোট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের সেবা প্রদানকারী স্থানীয় ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে টেকসই তহবিলের জন্য ১৯০ বিলিয়ন ডলার দিয়ে উদীয়মান অর্থনীতিগুলো ইএসজির জন্য হাব হয়ে উঠছে। মহামারিকালে বিজনেস রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট নিয়ম প্রয়োগ করে শীর্ষ ১ হাজার কোম্পানিকে ইএসজি তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য করেছে ভারত। এর সুবাদে দেশটি এমএসসিআই এমার্জিং মার্কেটস ইএসজি লিডারস ইনডেক্সে তৃতীয় স্থান দখল করেছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ইএজসি প্রতিবেদন প্রকাশ বাধ্যতামূলক করেছে থাইল্যান্ড। ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারের নিজস্ব ইএসজি ডাটাবেজ তৈরি করতে শুরু করে ব্লæমবার্গ।
দুর্ভাগ্যবশত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং জিআরআই পাঁচ বছর যৌথভাবে কাজ করার পর বাংলাদেশের মাত্র ১৪টি তালিকাভুক্ত সংস্থা পেয়েছে যাদের টেকসইতা ফ্যাক্টরগুলো জিআরআই স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কায় এরকম কোম্পানির সংখ্যা ৮০টির বেশি।
ডিএসইর চিফ অপারেটিং অফিসার এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, অন্তত দুই ডজন তালিকাভুক্ত কোম্পানি টেকসই ব্যবসার চর্চা করছে। শেয়ারবাজারও মানসম্মত পদ্ধতিতে তাদের অগ্রগতি রিপোর্ট করার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে উদ্যোগ নিচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়