বীমা ব্যক্তিত্ব সামাদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আগের সংবাদ

নানা আয়োজনে শেখ রাসেলের জন্মদিন পালন

পরের সংবাদ

রাসেলের সাইকেল

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিকেলের রোদ চিকিচিক করছে। শ্রাবণের আকাশ। মাঝে মাঝে মেঘ উড়ে যাচ্ছে। দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি ঝুপ করে নেমে পড়ছে। মনটা ভালো নেই রাসেলের। হাসু বুবুটা কেন যে বিদেশ গেল?
রেহানাবুও তার সঙ্গে চলে গেল। কেমন যেন একা একা লাগে। মোহিত চাচ্চুটা সারাক্ষণ পেছনে লেগে থাকে। সাইকেলটা নিয়ে একটু দূরে যাব- তা আর যাওয়ার জো নেই।
রাসেলের খেলার সাথিই বলা যায় হাসু বুবুকে। হাসু বুবু মানে হাসিনা। শেখ হাসিনা। রাসেল তাকে সেই ছোট্ট থেকেই হাসু বুবু বলে ডাকে। সেই হাসু বুবু বাড়িতে নেই। বাড়িটা কেমন খালি খালি লাগে। রাসেলের দুই বোন। হাসিনা আর রেহানা। কামাল ভাই আর জামাল ভাই তো সারাদিন বাইরে থাকে। কী নিয়ে যে ব্যস্ত! রাসেলের বন্ধু বেলাল, নাদিম, সুব্রত মাঝে মাঝে এসে খেলা করে। ফুটবল নিয়ে বাড়ির পাশে খেলতে যায়। রাসেল যখন সাইকেল নিয়ে জোরে চালাতে যাবে ঠিক তখনই বেলাল এসে পেছন থেকে টেনে নামাবে। কী যে করে বুঝি না। শান্তি মতো সাইকেলটাও চালাতে দেয় না। মোহিত চাচা তো আছেই। এখানে যাওয়া যাবে না। ওখানে যাওয়া যাবে না। কত বাধা। রাসেল এইসব বাধা মানতে চায় না। বাঁধনহারা হতে চায়।
কত মানুষ যে তাদের বাসায় আসে। তার বাবা দেশের প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তার নেতৃত্বে। লোকে তাকে বঙ্গবন্ধু বলে ডাকে। রাসেলের স্বপ্ন সে বাবার মতো হবে। বাবার সঙ্গে সে চীন দেশে গিয়েছিল। অনেক রাষ্ট্রপ্রধান তার নাম জানে- শেখ রাসেল। আদর করে গাল টেনে দিয়েছে কেউ কেউ। বন্ধুরা রাসেলকে নিয়ে ঠাট্টা করে। কিন্তু তার ভেতরে কোনো অহমিকা নেই।
রাসেলের সাইকেলটি বাড়ির সামনে হেলান দিয়ে রাখা। বেলাল এসেই সাইকেল নিয়ে চালানো শুরু করল। হাওয়ার বেগে সোবহানবাগ ঘুরে এসে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর সড়কে এসে থামল। বন্ধুদের সঙ্গে লেকের পাশে বসে বাদাম খেতে খেতে আনন্দ আড্ডায় মেতে ওঠে রাসেল। তারা হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে চলে যায়। মোহিত চাচা খুঁজে তার টিকিটিও পায় না। অস্থির হয়ে ওঠেন মোহিত চাচা। হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির ভেতরে চলে যান। আশপাশে কোথাও নেই রাসেল। রাসেলের মায়ের তেমন উৎকণ্ঠা নেই। তার বিশ্বাস আছে রাসেল কোথাও যাবে না। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ঢুলুঢুলু। রাসেল আসছে না। কোথায় গেল সে? অবশেষে দেখা গেল বাড়ির গেটের সামনে গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা অন্ধকার। মোহিত চাচা কাছে গেলেন। দেখলেন রাসেল উদোম গায়ে। মাথা নিচু করে আছে।
– কী ব্যাপার। তোমার জামা কই।
– একটা ছেলে খালি গায়ে ছিল। তার জামা নেই। তাকে দিয়ে দিয়েছি।
– আচ্ছা চলো ভেতরে।
রাসেলের মা ফজিলাতুন নেছা। ঘটনা শুনে ছেলেকে বুকে টেনে নিলেন। হাসি মুখে বললেন- বেশ তো ভালো করেছ। ভয়ের কী আছে বোকা ছেলে!
হাসি ফুটলো রাসেলের মুখে।
স্কুলে রাসেলের অনেক সুনাম। শিক্ষকরা তাকে অনেক আদর করেন। বাড়ির পুব দিকের হাসনাহেনা গাছ থেকে রাতে ভেসে আসে সুবাস। ভাত মেখে খাইয়ে দিলেন মা। সকালে স্কুলে যেতে হবে রাসেলের। অনুষ্ঠান আছে ল্যাবরেটরি স্কুলে। রাসেল সেখানে সংগীত পরিবেশন করবে। দেশের রাষ্ট্রপতি স্কুলে আসবেন। সাজ সাজ রব। ফুলে ফুলে সেজেছে স্কুলের চারদিক।
প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে সাইকেলটিকে দেখে ঘুমাতে যায় রাসেল। এটা তার নিয়মিত রুটিন। সে রাতেও তাই করলো। ভোররাত। হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় রাসেলের। পাশে মা নেই। চোখ কচলাতে কচলাতে রুম থেকে বের হয়। পাশের রুমে মা কান্না করছেন। রাসেলকে বুকে নিয়ে কাঁপতে থাকেন। ছোট্ট রাসেল বুঝে উঠতে পারে না। কী হচ্ছে বাড়িতে। এত গোলাগুলি কেন?
– কামাল ভাই কই মা?
নিরুত্তর মা। ঠাঁ ঠাঁ গুলি। চিৎকার। কয়েকজন পোশাকধারী লোক এলো। রাসেলকে টেনে হিঁচড়ে নিচে নামালো। ছোট্ট রাসেল তার জন্য প্রস্তুত ছিল না।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে রাসেল যা দেখলো! চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কামাল ভাই রক্তাক্ত দেহে পড়ে আছে, সিঁড়ির গোড়ায় পড়ে আছে বাবা। চোখে অন্ধকার দেখে রাসেল। কাঁদো কাঁদো গলায় বলে- ‘আমাকে তোমরা মেরো না। আমি বুবুর কাছে যাবো। আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে চলো। আমি মায়ের কাছে যাবো।’
একজন জোয়ান এগিয়ে এলো। রুক্ষ গলায় বললো- চল তোকে তোর মায়ের কাছে নিয়ে যাই।
তারপর টেনে হিঁচড়ে তাকে ওপরে নিয়ে গেল দুজন।
– মা, মা কই আমার?
– ওই তো তোর মা।
মায়ের দেহ পড়ে আছে। ছোট্ট রাসেলের আর বুঝতে বাকি রইলো না। কাঁপতে কাঁপতে বললো- আমাকে তোমরা মেরো না। আমি এ দেশে থাকব না। দূরে চলে যাবো।
হঠাৎ ঠাঁ ঠাঁ শব্দ। পড়ে গেল রাসেল। মায়ের ঠিক বুকের কাছে। রক্ত গড়িয়ে পড়ল ঘর থেকে সিঁড়িতে। সেই রক্ত গিয়ে মিশে গেল বুড়িগঙ্গায়। রাসেলের সাইকেলটির সিট উড়ে গেছে। টায়ারে গুলি লেগে পাংচার হয়ে আছে। কারো খুলি গিয়ে লেগে আছে চাকায়। রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। সাইকেলের ক্যারিয়ারে রাখা ফুটবলটিও ঝাঁঝরা হয়ে গেছে ঘাতকের গুলিতে। সেই রক্তের দাগ আর শুকায়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়