ডেঙ্গু প্রতিরোধে লিফলেট বিতরণ করবে বিএনপি

আগের সংবাদ

সাইবার নিরাপত্তা বিল পাস : বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার > মিথ্যা মামলায় সমপরিমাণ সাজা > অজামিনযোগ্য ধারা ১৭, ১৯, ২৭, ৩৩

পরের সংবাদ

রাজকুমার ও হলুদ পাখি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সপ্তাহের এই দিনটি মানে শুক্রবার প্রজাদের সঙ্গে দেখা করতে বের হয় রাজকুমার ফারহান। সে থাকে তার প্রিয় সাদা রঙের ঘোড়ায় আর পেছনে আট-দশটি ঘোড়ায় থাকে তার বন্ধুরা।
রাজকুমারের বয়স ১১ বছর। দেখতে সে ভীষণ সুদর্শন। তার গায়ের রং শুভ্র কাশফুলকে হার মানায়। তার ঘন কালো চুল ঠিক যেন আষাঢ়ের আকাশ। তার চোখ দুটি যেন ডহর সমুদ্র। রাজপুত্রের হৃদয়টা একেবারে মায়ায় মাখা। প্রজাদের সে খুব ভালোবাসে।
প্রতি শুক্রবারের মতো আজো সে রাজপ্রাসাদ থেকে বের হয়েছে প্রজাদের খোঁজখবর নিতে। প্রজারাও রাজকুমারকে ভীষণ পছন্দ করে। রাজকুমার আসবে জেনে সবাই পথে ভিড় করে। রাজকুমার দুহাত ভরে প্রজাদের দান করে। আর প্রজারা প্রাণ ভরে রাজকুমারের জন্য দোয়া করে।
রাজকুমার বসে আছে তার ধবধবে সাদা ঘোড়ায়। হঠাৎ কোথা থেকে একটা কাগজ উড়ে এসে তার গায়ে পড়ে। রাজকুমার কাগজটা খুলে দেখে তাতে লেখা- ‘আমি তোমার বন্ধু হতে চাই।’ লেখাটা পড়ে রাজকুমার রীতিমতো অবাক। পরপর তিন সপ্তাহ একই ঘটনা ঘটে। একই জায়গায় টুকরা কাগজে একই লেখা পায় সে- ‘আমি তোমার বন্ধু হতে চাই।’
কিন্তু কে এই লেখাটা দেয় বুঝতে পারে না রাজকুমার। আশপাশের সবাইকে বলে খুঁজে দেখতে। কিন্তু কেউ খুঁজে পায় না।
চতুর্থবার রাজকুমার একটি পাখির ঠোঁট থেকে কাগজটা পড়তে দেখে।
– কে আছো? পাখিটিকে বন্দি করো।
রাজকুমারের নির্দেশে তার সঙ্গীরা পাখিটিকে বন্দি করে। রাজকুমার পাখিটিকে নিয়ে আসে রাজপ্রাসাদে।
রাজকুমার পাখিটির দিকে তাকিয়ে দেখে, পাখিটির রং টকটকে হলুদ। চোখ দুটি নীল রঙের। তার চোখের দিকে তাকিয়ে রাজকুমার জিজ্ঞেস করে- বলো পাখি, তুমিই কি আমার বন্ধু হতে চাও?
– জি রাজকুমার।
– তোমার মতো সুন্দর পাখির বন্ধু হতে আমার কোনো সমস্যা নেই। আজ থেকে আমরা বন্ধু।
এরপর থেকে রাজকুমারের সারাক্ষণের সাথী হলুদ পাখিটি। রাজকুমার যেখানে যায়, পাখিটিও সেখানে যায়। রাজকুমার গাছ থেকে ফল পেড়ে পেড়ে পাখিটিকে খাওয়ায়। এখন তার যাবতীয় কথা ওই পাখিটার সঙ্গে। বন্ধুরা এসে এসে ফিরে যায়। কারো সঙ্গেই সে খেলে না। রোজ রাতে পাখিটাকে পাশে নিয়ে ঘুমায় রাজকুমার। একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখে পাখিটি নেই। নেই নেই কোথাও নেই। রাজকুমার পাখি পাখি বলে কাঁদতে শুরু করে।
রাজকুমারের কান্না শুনে আকাশ কাঁদে, বাতাস কাঁদে, গাছ কাঁদে, পাহাড় কাঁদে, মানুষ কাঁদে, নদী কাঁদে কিন্তু পাখিটিকে আর পাওয়া যায় না।
রাজকুমার তার বিছানায় বালিশের নিচে রাখা একটা হলুদ রঙের পালক আর একটা চিঠি খুঁজে পায়। তাতে লেখা-
হলুদ রঙের পালক মাঝে
বকুল ফুলের ঘ্রাণ
দেখবে যেথায় সেথায় পাবে
হলুদ পাখির প্রাণ।
রাজকুমার পালকটি বুকে জড়িয়ে ধরে। এর ঘ্রাণ নেয়। আহা কী মিষ্টি ঘ্রাণ। সে বুঝতে পারে পালকের মতো ঘ্রাণ যেখানে আছে সেখানেই রয়েছে তার বন্ধু হলুদ পাখি।
রাজকুমার তার সাদা ঘোড়ায় চেপে বেরিয়ে যায় হলুদ পাখির সন্ধানে। মাঠ, ঘাট, নদী, সাগর পেরিয়ে যেতেই থাকে যেতেই থাকে। কিন্তু পালকের মতো সুঘ্রাণ সে কোথাও পায় না। সে নদীর ধারে বসে কাঁদতে থাকে। তার খুব ক্ষুধা পায়। সে আশপাশে খাবার খুঁজতে থাকে। হঠাৎ তার চোখে পড়ে নদীর ওপাড়ে কোথাও আলো জ্বলছে। সে তার ঘোড়া ছুটিয়ে সেখানে যায়, ভাবে হয়তো কিছু খাবার পাওয়া যাবে। রাজকুমার সেখানে পৌঁছে দেখে একটা পুরনো দালান। সেখান থেকেই আলো আসছে। সে দালানের ভেতরে ঢুকতে থাকে। সে যতই ভেতরে যায় ততই সেই পাখির পালকের মতো ঘ্রাণ তার নাকে আসে।
রাজকুমারের মন খুশিতে নেচে ওঠে। সে ভাবে- হয়তো এ দালানের ভেতরই তার হলুদ পাখিটি আছে। কিন্তু সে কোথাও পাখিটিকে দেখতে পায় না।
হঠাৎ তার চোখে পড়ে একটা সোনার পালঙ্ক। সেখানে ঘুমিয়ে আছে একটা সুন্দর মেয়ে। বয়স তারই মতো হবে। সে মেয়েটার ঘুম ভাঙানোর অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু মেয়েটার ঘুম ভাঙে না।
রাজকুমার নিরাশ হয়ে পড়ে। সে ভেবেছিল এই মেয়েটা হয়তো তার পাখির সন্ধান দিতে পারবে। কারণ মেয়েটির গায়ে থেকেও পাখির পালকের ঘ্রাণের মতো সুঘ্রাণ আসছিল।
রাজপুত্র মেয়েটির বিছানার পাশে বসে তার জামার পকেটে রাখা পালকটি বের করে কাঁদতে থাকে। হঠাৎ করে এক পশলা বাতাসে তার হাত থেকে পালকটি উড়ে যায়। উড়ে গিয়ে পালঙ্কের ঘুমন্ত মেয়েটির কপালে গিয়ে পড়ে। আর তাতেই ঘুম ভেঙে যায় মেয়েটির।
– ধন্যবাদ রাজকুমার। তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছ। কৃতজ্ঞতার সুরে বলে মেয়েটি।
– আমি কী করে জীবন বাঁচালাম। আর তুমিই বা কে?
– আমি মায়ানগরের রাজকুমারী। খেলতে গিয়ে এক ডাইনির ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছিলাম বলে সে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিল। আর আমার প্রাণটা একটা হলুদ পাখির মধ্যে ভরে দিয়েছিল এবং বলেছিল কেউ যদি বন্ধু হয়ে ওই পাখির পালক আমার কপালে ছোঁয়ায় তাহলেই আমার ঘুম ভাঙবে।
– ওই পাখিটি আসলে তুমি? রাজকুমার জানতে চায়।
– হ্যাঁ বন্ধু আমি। আমিই তোমার পাখি বন্ধু।
– কিন্তু আমি পাখিটিকে দেখতে চাই। রাজকুমার ভেজা কণ্ঠে বলে।
– পাখিটি আছে তবে ওর প্রাণ নেই। ও একটা মাটির পাখি। ওই যে দেখো তোমার পাখি।
রাজকুমার দেখে তার সেই পাখিটি পাশেই একটি টেবিলের উপর রাখা। কিন্তু সে পাখির প্রাণ নেই।
– আমি কি পাখিটিকে নিতে পারি? রাজকুমার মেয়েটির কাছে জানতে চায়।
– অবশ্যই নিতে পারো। আর আমাকে নাম ধরে ডাকবে। আমার নাম মিতু। আমাদের এখনই এখান থেকে পালাতে হবে। নইলে ডাইনি এসে যাবে।
রাজকুমার ফারহান তার ঘোড়ায় করে মায়ানগরের রাজকন্যা মিতুকে পৌঁছে দিয়ে আসে তার রাজ্যে। আর হলুদ পাখিটিকে নিয়ে ফেরে তার রাজ্যে। যদিও পাখিটির প্রাণ নেই। তা হোক- তবুতো বন্ধু।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়