পাবনায় মানববন্ধন : শিক্ষকের ওপর হামলার বিচার দাবি

আগের সংবাদ

বর্ষণে বিপর্যস্ত পাঁচ জেলা : চট্টগ্রামের সঙ্গে বান্দরবান ও কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে সেনা মোতায়েন

পরের সংবাদ

মুক্তা চাষে লাখ টাকা উপার্জন : আগ্রহ বাড়ছে বেকার যুবকদের

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নওয়াপাড়া (যশোর) প্রতিনিধি : স্বাদু পানিতে মুক্তা চাষ এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব। পুকুরে এখন মাছের পাশাপাশি চাষ করা হচ্ছে মুক্তা। যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক্তারপুর গ্রামের মো. আব্দুর রহমান নামে এক কলেজছাত্র স্বাদু পানিতে মুক্তা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।
পরীক্ষামূলক প্রকল্প হলেও এরই মধ্যে মুক্তা আহরণে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন তিনি। সাফল্য দেখে অন্য বেকার যুবকরাও ঝুঁকছেন এ পেশায়। জানা গেছে, করোনাকালে ইউটিউবে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের পদ্ধতি দেখে তিনি উৎসাহিত হন। আব্দুর রহমান এক্তারপুর গ্রামের কবির হেসেনের ছেলে। তিনি নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
ভোরের কাগজকে আব্দুর রহমান বলেন, ২০২০ সালে করোনার সময়ে বাড়িতে পড়াশোনার পাশাপাশি আমি ইউটিউবে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের পদ্ধতি দেখে উদ্বুদ্ধ হই। এরপর এটা নিয়ে কিছুদিন গবেষণা করি। প্রথমদিকে দুটি ঝিনুক সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে সাফল্য পেয়ে আমি পরবর্তীতে ৫০০ ঝিনুক নিয়ে কাজ শুরু করি।
সরজমিন আব্দুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়ির ছাদে ২০ ফুট বাই ১০ ফুট একটি পানির হাউস আছে। পানিতে ঝিনুকের পাশাপাশি ছোট ছোট রঙিন মাছ খেলা করছে।
ঝিনুক থেকে কীভাবে মুক্তা চাষ করা হয় জানতে চাইলে আব্দুর রহমান জানান, মুক্তা এমন একটি রতœ, যা পেতে ঝিনুককে যতœ করতে হয়। মুক্তা চাষের জন্য প্রয়োজন কিছু সরঞ্জাম, যেমন- ঝিনুক অপারেশনের কিটবক্স, দুই ধরনের নেট বক্স ও ইমেজ তৈরির জন্য কিছু যন্ত্রপাতি। সাধারণত ১০ থেকে ১২ মাস বয়সে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ইমেজটি স্থাপন করা হয় ঝিনুকের পেটে।
এরপর দুই থেকে আড়াই ফুট পানির নিচে ডুবিয়ে রাখা হয় ঝিনুকগুলোকে। এভাবে ২১ থেকে ২৮ দিন রাখার পর সেগুলোকে উন্মুক্ত করা হয় পুকুরে। এরপর ১০ মাসের মধ্যে স্থাপিত ইমেজটি মুক্তায় পরিণত হয়। সবশেষে পুকুর থেকে ঝিনুক তুলে আহরণ করা হয় মুক্তা। ঝিনুক সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রতিটি মুক্তা আহরণ পর্যন্ত খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা।
তিনি জানান, ঝিনুক অস্ত্রোপচার ঘরে বসেই করা যায়। খুব অল্প খরচে সরঞ্জাম কেনা যায়। ধৈর্য ধরলে ভালো মুক্তা মেলে, লাভ পাওয়া যায়। মুক্তা চাষের বিশেষ দিক- ঝিনুককে বাড়তি খাবার দিতে হয় না। ঝিনুক নিজে থেকেই খাবার নিয়ে নেয়। উল্টো পুকুরের পানি মাছ চাষের জন্য উপযোগী করে তোলে ঝিনুক।
মাঝে মধ্যে পানির পিএইচ ও ঝিনুকের আবরণ পড়ছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। পরবর্তীতে ওই ঝিনুক থেকেই মুক্তা তৈরি হয়। আব্দুর রহমান ২০২২ সালে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া তিনি অভিজ্ঞতা অর্জনে নওগাঁ ও কোটচাঁদপুরে কয়েকটি ফার্ম পরিদর্শন করেছেন।
আব্দুর রহমান জানান, প্রতি পিস মুক্তা বাংলাদেশের আড়ং নামে একটি প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করে ইতোমধ্যে তিনি ২ লাখ টাকা আয় করেছেন। এছাড়া তৈরি করা নিউক্লিয়াস ১০ টাকা ও সংগ্রহ করা ঝিনুক ৫ টাকা করে বিক্রি করেন। বিক্রি করা মুক্তা তৈরি করতে তার সর্বসাকুল্যে ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তার এ মুক্তা চাষ প্রকল্পের গ্রামের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও হয়েছে।
বর্তমানে তার প্রকল্পে ঝিনুক সংগ্রহের কাজে ৭ থেকে ৮ জন বেকার যুবক কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া মুক্তা তৈরির কাজে তার মা-বাবাসহ ৭ থেকে ৮ জন লোক সহযোগিতা করে থাকেন। তাদের এ কাজের জন্য মজুরি দিতে হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার ঘোষ ভোরের কাগজকে বলেন, শুনেছি উপজেলার এক্তারপুর গ্রামে আব্দুর রহমান নামে একজন ছাত্র পড়াশোনার পাশাপাশি ঝিনুক চাষ করে মুক্তা তৈরি করছে। সেই সঙ্গে রঙিন বাহারি মাছের চাষ করেও সফলতা পেয়েছে। পুকুরে মুক্তা চাষে ঝুঁকি কম ও লাভজনক।
মানসম্মত মুক্তা চাষ করতে পারলে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। বেকার যুবকরা এ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হতে পারে। তাকে সব ধরনের সহায়তা ও পরামর্শ দিতে আমরা প্রস্তুত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়