ইসলামী আন্দোলন : নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা

আগের সংবাদ

কুরবানির পশুর দাম বেশি যে কারণে > আফতাবনগর হাট : এখনো জমেনি হাট গরুও উঠেছে কম

পরের সংবাদ

দুষ্ট ভূতের দল

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাফি বাসা থেকে সবে বাইরে পা রেখেছে। হঠাৎ ওর স্কুল ব্যাগ থেকে পানির বোতল পড়ে ভেঙে যায়। ব্যাগ থেকে কীভাবে বোতল পড়ল আর কীভাবে ভাঙল তা ও বুঝতে পারে না। রাফি ভালো করে বোতলটা দেখে। তারপর মনে মনে বলে, ভাঙার কারণ কী? না! কিছুই তো বুঝতে পারছি না। তাছাড়া এত জোরে শব্দ হলো যেন বোতলটাকে ধরে কেউ আছাড় মেরেছে।
ইয়াসিন অনেকক্ষণ ধরে রাফিকে ডাকাডাকি করছে। কিন্তু রাফি কোনো সাড়া দিচ্ছে না। পানির বোতল ভেঙে যাওয়ায় ওর ভীষণ মন খারাপ। ইয়াসিন ওর কাছে এসে বলল, কিরে রাফি! তোকে এত ডাকছি; তুই শুনতে পাচ্ছিস না! রাফি কোনো কথা বলে না। সে ইয়াসিনের স্কুলে হাঁটা শুরু করে। ইয়াসিন এ কথা ও কথা বলে; কিন্তু রাফি চুপ। ওর মুখে কোনো কথা নেই। ইয়াসিন জিজ্ঞেস করে, কিরে চুপ করে আছিস যে! কী হয়েছে? কোনো সমস্যা?
আজ আমার মন খুব খারাপ।
কেন?
আমার পানির বোতলটা হঠাৎ পড়ে গিয়ে ভেঙে গেছে।
বলিস কী! কীভাবে পড়ল?
জানি না। ব্যাগ থেকে পড়ে গেছে।
কিন্তু ব্যাগ থেকে পড়ে গিয়ে বোতল ভেঙে গেছে!
হুম।
তোর পানির বোতল তো বেশ শক্তপোক্ত। ভাঙল কী করে?
বুঝতে পারছি না।
বিস্ময়কর!
ইয়াসিনের মুখ থেকে বিস্ময়কর শব্দটা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওর নিজের বোতলও ব্যাগ থেকে পড়ে গেল। এবার রাফি বলল, সত্যিই বিস্ময়কর! তোর বোতল পড়ল কী করে? আহা! তোর বোতলও তো ভেঙে গেছে।
ইয়াসিন বিস্ময়ের দৃষ্টিতে বোতলের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর বলে, আজ আমাদের কুফায় পেয়েছে।
কিন্তু কেন?
কেনর তো কোনো উত্তর নেই।
ব্যাপারটা আমার ভালো লাগছে না। আমার যা ঘটেছে তোরও তাই ঘটল!
হুম। থাক বাদ দে। এসব নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। কথা বলতে বলতে কিছু দূর যাওয়ার পর দেখে বেশ বড় একটা খাল। ওদের মিরপুর এলাকায় খালের কোনো অস্তিত্বই নেই। আমিনবাজারের কাছে একটা খাল আছে। কিন্তু ওদের বাসা তো মিরপুর ১ নম্বরে। মনিপুরিপাড়া স্কুলে ওরা পড়ে। বাসা থেকে স্কুল বেশি দূরে নয়। তাই হেঁটেই ওরা দুই বন্ধু স্কুলে যায়। এখন ওরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সেই এলাকাটা ওদের অচেনা। একদম চিনতে পারছে না।
ইয়াসিন চারদিকে তাকিয়ে বলে, ব্যাপার কী! আমরা কোথায় এলাম? রাফি, তুই কি চিনতে পারছিস?
না তো! এটা কোন জায়গা? আমি তো কখনো খাল দেখিনি! রাফি বিস্ময়ের সঙ্গে বলল।
ইয়াসিন বলল, আয় তো, লোকজনের কাছে জিজ্ঞেস করি।
কোনো লোকজনও তো নেই। কার কাছে জিজ্ঞেস করবি? রাফি বলল।
বিস্ময়ের সঙ্গে ইয়াসিন বলে, কী ব্যাপার! এই এলাকায় কোনো লোকজন নেই নাকি! ঢাকা শহরের সর্বত্র লোকে গিজ গিজ করে। আর এখানে কোনো লোক নেই! রাফি, ব্যাপার কী বল তো!
রাফি বলে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে, আমরা অন্য কোনো জগতে চলে এসেছি।
আমারও তাই মনে হয়। একটা লোক কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওই দোকানের দিকে চল তো! দোকানে নিশ্চয়ই লোক থাকবে।
দুজন হেঁটে হেঁটে দোকানের দিকে যায়। গিয়ে দেখে, দোকানটা চমৎকারভাবে সাজানো-গোছানো। কিন্তু দোকানে কোনো মালামাল নেই। এক লোক চেয়ারে বসে টেবিল ল্যাম্পের আলোয় গভীর মনোযোগে কাজ করছে। তার চোখে মোটা ফ্রেমের কালো চশমা। পরনে পাজামা-পাঞ্জাবি। তার ওপর শাল জড়ানো। তাকে প্রশ্ন করবে কিনা, তা নিয়ে দুই বন্ধু ভাবে। দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ভোগে। এক পর্যায়ে রাফি লোকটির দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ে।
লোকটা এমন ভাব করল, দেখে মনে হলো ওদের অপেক্ষা করতে বলেছে। ওরা দাঁড়িয়ে আছে। চারদিক ভালো করে দেখছে। পুরো এলাকায় কোনো মানুষের দেখা মিলছে না। অথচ সবকিছু ছিমছাম, সাজানো-গোছানো। রাফি ইয়াসিনের কাছে জানতে চায়, ঘটনা কী! আমরা কোথায় এসেছি!
আমার কাছে পুরো ব্যাপারটাই রহস্যজনক বলে মনে হয়।
এর মধ্যেই দোকানে বসা লোকটা এগিয়ে এসে বলল, কোন ব্যাপারটা বলেন তো!
না মানে এই যে; এই এলাকাটা। এই এলাকার নাম কি দয়া করে বলবেন?
ওহ সিওর! এটা ঘোস্ট এরিয়া!
মানে!
মানে জানো না? ভূতের এলাকা।
রাফি বিস্ময়ের সঙ্গে আবারও জানতে চাইল, মানে!
আবার মানে জিজ্ঞেস করছ!
এখানে কি ভূত থাকে! ও মাই গড! আপনিও কি ভূত! সঙ্গে সঙ্গে লোকটা ভূতের রূপ ধারণ করল। তার চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হতে লাগল। রাক্ষসের মতো হা করে রাফি ও ইয়াসিনের দিকে সে হাত বাড়াল। ওরা চিৎকার দিয়ে বলল, ও মাগো, বাঁচাও!
রাফি ও ইয়াসিন রাস্তার ওপর মরার মতো পড়েছিল। ওদের জ্ঞান ফিরল প্রায় এক ঘণ্টা পর। জ্ঞান ফেরার পর ওরা চারদিকে তাকায়। এর আগে যেসব বিল্ডিং ওরা দেখেছিল সেগুলোর কিছুই নেই। এবার মনে হচ্ছে, ওরা নতুন কোনো এলাকায় এসে পড়েছে। চারদিকে বড় বড় গাছ, সবুজ প্রকৃতি। তার মাঝে দোতলা টাইপের কিছু বিল্ডিং। এখানেও মানুষজনের কোনো দেখা নেই। রাফি ও ইয়াসিন হাঁটতে থাকে। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর দেখে, রাস্তার দুই পাশে আম গাছ। থোকায় থোকায় আম ধরে আছে। পাকা আম দেখে রাফি ও ইয়াসিন নিজেকে সামলাতে পারল না। ওরা গাছের কাছে এগিয়ে যেতেই ডালগুলো নুইয়ে পড়ল ওদের সামনে। গাছের এই অদ্ভুত আচরণ দেখে ওরা ভয় পেয়ে যায়। গাছ থেকে আম ছিঁড়বে কিনা, তা নিয়ে দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ভোগে। ডালগুলো এমনভাবে এগিয়ে আসছে, ওরা না ছিঁড়ে পারে না। দুজনেই কয়েকটা আম ছিঁড়ে খাওয়া শুরু করে।
এত সুমধুর আম ওরা আগে কখনো খায়নি। ওরা আম শেষ করে আবার যখন গাছ থেকে আম ছেঁড়ার জন্য হাত বাড়াল তখন দেখল, আম গাছটা অনেক বড় হয়ে গেছে। আমগুলোও অনেক দূরে চলে গেছে। ওদের চোখেমুখে বিস্ময়। আবার ভয়ও কাজ করছে।
রাফি ইয়াসিনকে উদ্দেশ করে বলল, এটা নিশ্চয়ই ভূতের কারসাজি।
ইয়াসিন ওর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলল, ঠিক বলেছিস। আমরা মনে হয় ভূতের রাজ্যে চলে এসেছি। দেখছিস না, যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই ভূতের পাল্লায় পড়ছি! এখান থেকে বের হওয়ার উপায় কী? রাফি জানতে চাইল।
বুঝতে পারছি না। আমার খুব টেনশন লাগছে।
চল, অন্যদিকে চলে যাই।
কোথায় যাব? যেদিকে যাচ্ছি সেদিকেই ভূত!
রাফি আর ইয়াসিন অন্যদিকে পা বাড়াতেই ওদের সামনে এসে দুটি ভূত সটান দাঁড়িয়ে বলল, কি ভাই, এত ডাকাডাকি কেন করছ?
ওরা দেখল, ওদের মতোই দুটি ছেলে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পরনে স্কুল ব্যাগ। পেছনে ঝোলানো ব্যাগ। ওদের দেখে প্রথমে রাফি বিস্ময়ের সঙ্গে বলল, আমরা তোমাদের ডাকাডাকি করেছি?
একজন বলল, হুম। আমরা তো শুনলাম তোমরা ভূত ভূত করলে!
তোমরা কি ভূত? ইয়াসিন জানতে চাইল।
আরেকজন বলল, তোমরা কারা সেটা আগে বল?
আমরা মানুষ।
মানুষ! এ আবার কী জিনিস?
মানে! তোমরা কি মানুষ না?
হা হা হা! মানুষ!
হাসছ কেন? বলো তোমরা কী? রাফি বলল।
আমরা ভূত! তোদের শত্রæ! হা হা হা!
হাসতে হাসতেই ওরা বিশাল আকার ধারণ করল। হাসির শব্দও গা শিউরে ওঠার মতো। ওদের দেখে রাফি ও ইয়াসিন চিৎকার দিয়ে বলল, ও বাবাগো বাঁচাও!
তারপর রাফি ও ইয়াসিন দৌড় শুরু করল। অনেকক্ষণ দৌড়ানোর পর ওরা একেবারে হাঁপিয়ে উঠল। সামনে আর পা চলছিল না। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কিছু সময় জিরিয়ে নিচ্ছিল। এ সময় এক বৃদ্ধা লাঠিতে ভর দিয়ে ওদের কাছে এলো। তার চুল ধবধবে সাদা। পরনে সাদা শাড়ি। তার দাঁতের পাটিতে দাঁতও না থাকায় ঠোঁট, চোয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেছে। কোনো শব্দই ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারেন না। মজা করে পান চিবাচ্ছেন বলে মনে হয়।
রাফি ও ইয়াসিনের কাছে এসে বৃদ্ধা এক গালে পান ঢুকিয়ে রেখে ভাঙা ভাঙা শব্দে বললেন, এই যে বাবুরা, তোমরা কেমন আছো?
রাফি বলল, ভালো নেই দাদিমা।
কেন, কী হয়েছে? স্কুল ফাঁকি দিয়েছ নাকি?
দাদিমা, আমরা ইচ্ছা করে স্কুল ফাঁকি দিইনি। আমরা আসলে বিপদে পড়েছি। ইয়াসিন বলল।
কী করম বিপদ বলো তো। আমরা তোমাদের সাহায্য করতে পারি কিনা দেখি।
রাফি বলল, দাদিমা আমরা পায়ে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আমরা নতুন একটা জায়গায় চলে এসেছি। এখন আর এখান থেকে বের হতে পারছি না।
নতুন জায়গা মানে? এখানে আগে তোমরা আসোনি তাই নতুন বলছ!
জি দাদিমা।
তোমাদের বাড়ি কোথায়?
মিরপুর ১ নম্বরে।
এটা কোথায়?
ঢাকায়।
তোমরা কোথায় এসেছ তা কি জানো?
জি দাদিমা। আমরা ভূতরাজ্যে চলে এসেছি।
ঠিকই বলেছ। কিন্তু এই রাজ্য থেকে তো বেরুবার কোনো পথ নেই!
রাফি বিস্ময়ের সঙ্গে বলে, কি বলেন দাদিমা! আমরা আমাদের বাসায় ফিরতে পারব না! আমার মা তাহলে কাঁদতে কাঁদতেই মারা যাবে। দাদিমা, প্লিজ আমাদের সাহায্য করুন।
ইয়াসিন বলল, আমরা তো আপনার নাতির মতো দাদিমা। আপনি সাহায্য না করলে আমাদের মহাবিপদে পড়তে হবে! আমাদের বাড়িতে ফিরতে সাহায্য করুন।

বৃদ্ধা আমতা আমতা করে বললেন, তোমরা যখন আমাকে দাদিমা ডেকেছ, আমি কি আর তোমাদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দিতে পারি! অবশ্যই আমি তোমাদের সাহায্য করব। তোমরা আসলে আমার দুষ্ট নাতিদের পাল্লায় পড়েছিলে, বুঝলে!
জি দাদিমা। এখন উপায়?
উপায় একটা হবে। তবে একটা শর্ত আছে।
কী শর্ত দাদিমা? রাফি জানতে চাইল। বৃদ্ধা বললেন, তোমরা এই ভূতরাজ্যের কথা কাউকে কিছু বলতে পারবে না। রাফি ও ইয়াসিন মাথা চুলকায়। শর্ত মানবে কিনা তা নিয়ে ভাবে। কিছুক্ষণ পর রাফি বলল, দাদিমা ঠিক আছে আমরা কাউকে বলব না। আমাদেরও একটা শর্ত আছে। তোমাদের আবার কী শর্ত?
দাদিমা, আপনার দুষ্ট নাতিদের বলে দিন, ওরা যেন আমাদের আর বিপদে না ফেলে। বৃদ্ধা দম ফাটিয়ে হাসতে শুরু করলেন। হা হা হা! হা হা হা!
বৃদ্ধির হাসি আর থামে না। রাফি ও ইয়াসিন বৃদ্ধার দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ হঠাৎ বৃদ্ধার চেহারা অদ্ভুত এক রূপ নিচ্ছে। তাতে ওরা ভয় পেয়ে যায়। ভয়ের ছাপ ওদের চোখেমুখে। কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধা হাসি থামিয়ে বললেন, ভয় পেও না, ভয় পেও না। তোমরা আমাকে দাদিমা ডেকেছ। আমাকে মর্যাদা দিয়েছো। আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসব।
সত্যি দাদিমা, সত্যি!
বৃদ্ধা রাফি ও ইয়াসিনের হাত ধরলেন। এক পা-দুই পা করে হাঁটতে শুরু করলেন। রাফিদের বাসার সামনে পা রেখে বৃদ্ধা বললেন, দেখ তো চেনা যায় কিনা?
রাফি বিস্ময়ের সঙ্গে বলল, এই তো, এই তো আমাদের বাসা!
ইয়াসিন বলল, ওই তো আমাদের বাসা! এত দ্রুত কীভাবে এলাম!
ওরা দুজনেই বৃদ্ধার দিকে তাকায়। ততক্ষণে বৃদ্ধা বাতাসের সঙ্গে মিলিয়ে যান। শুধু তার ডান হাত দেখা যায়। তিনি হাত নেড়ে বিদায় নেন। ওরাও বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে কেবল হাত নাড়ে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়