ইসলামী আন্দোলন : নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা

আগের সংবাদ

কুরবানির পশুর দাম বেশি যে কারণে > আফতাবনগর হাট : এখনো জমেনি হাট গরুও উঠেছে কম

পরের সংবাদ

চাওয়ালী

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

– এটা কী করলেন? দেখে চলতে পারেন না? দিলেন তো আমার জামার বারোটা বাজিয়ে। খিটমিটিয়ে বললো নিতু। তার সাদা জামাটা দুধ চায়ের রঙে কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
– বারে, আমি কি ইচ্ছে করে ফেলেছি নাকি? আপনিই তো আমার গায়ের ওপর পড়লেন।
– দেখছো, চোরের মার বড় গলা! নিজে চা ফেলে কোথায় সরি বলবে, তা না। উল্টো নিজের সাফাই গায়। অভদ্র কোথাকার, এত বড় হয়েছে, চলাফেরা শিখে নাই। বাবা-মা ভদ্রতাও শেখায়নি। চা না খেয়েই হুড়মুড় করে নিতু চলে গেল।
কেমন মেয়েরে বাপ। সামান্য চা নিয়ে মা-বাবা তুলে কথা বললো। দাঁড়াও আবার পাই তোমাকে। জহির ভাবলো।
এই তুই না একটু বেশি বেশি করিস। মা-বাবা তুলে কথা বলার কী দরকার ছিলো শুনি, সামান্য চা-ই তো। বান্ধুবীর কথায় নিতুর বোধোদয় হলো। সত্যিই তো, এতটা না বললেও হতো।

২.
পরের দিনও নিতু চায়ের দোকানে দেখলো জহিরকে।
-সরি, কিছু মনে করবেন না। কাল না একটু বেশিই বলে ফেলেছি। আসলে মাথা ঠিক ছিলো না। মৃদু হেসে নিতু বললো।
মৃদু হাসিটা যেন জহিরের বুকে দমকা বাতাস বইয়ে দিলো।
– ঠিক আছে, আজকে আপনি চা খাওয়াবেন। এটাই আপনার শাস্তি। আমি জহির।
– আমি নিতু, এখানেই অফিস।
– ও তাই নাকি? ভালোই হলো, আমারও অফিস এদিকটায়। বললো জহির।
– এই মামা, দু কাপ চা দাও। কড়া করে। নিতু বললো।
– কড়া কেন?
– ওমা, দুধ চায়ে লিকার কড়া হতে হয়, তাও জানেন না। বাসায় বুঝি কেউ চা বানিয়ে খাওয়ায় না।
– কে খাওয়াবে। বাসায় তো আর চাওয়ালী নেই।
– একটা চাওয়ালী জোগাড় করে নিলেই তো পারেন। বয়স তো কম হয়নি।
জহির মনে মনে ভাবলো, সত্যিকারের চাওয়ালী তো তুমিই হতে পারো। অবশ্য পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলো। দূর ছাই, কী সব ফালতু ভাবনা। সে কি করে হয়!
– কি ভাবছেন? চাওয়ালীর প্রশ্ন।
– না, কিছু না।
– আচ্ছা, আজ তা হলে চলি।
এরপর প্রতিদিন জহির চায়ের দোকানে আসে। নিতুর দেখা নেই। তার বুকটা কেমন জানি করে। ওই চাঁদমুখ তার খুব দেখতে ইচ্ছে করে। এটাই কি তবে প্রেম? ভাবছে সে।

৩.
– কি, মন খারাপ নাকি? মাথা নিচের দিকে দিয়ে বসে আছেন যে!
নিতুর কথায় চোখ তুলে তাকালো জহির। তারপরই খুশিতে নেচে উঠলো। প্রকাশ্যে নয়, মনে মনে।
– আরে এতদিন কোথায় ছিলেন? এমনভাবে বললো যেন নিতু এতদিন না এসে বিরাট অপরাধ করে ফেলেছে।
– কেন অপেক্ষা করছিলেন বুঝি?
– না মানে, এমনি আর কি?
– আপনার চোখ-মুখ কিন্তু সে কথা বলছে না?
– কি বলছে তাহলে? জহির বললো।
– চলেন হেঁটে হেঁটে গল্প করি। মুচকি হেসে বললো নিতু। তার চোখে মুখেও অন্যরকম আনন্দ।
– বললেন না। এতদিন কোথায় ছিলেন?
– ও তেমন কিছু না। বেড়াতে গিয়েছিলাম। বললো নিতু।
– আচ্ছা একটা কথা বলি। কিছু মনে করবেন না তো? সংশয় নিয়েই বললো জহির।
নিতু ভাবলো, কী না কী বলে। তাই সে চুপ থাকে। মৌনতা সম্মতির লক্ষণ ভেবে জহির বললো- আমরা কি সব সময়ের জন্য চায়ের সঙ্গী হতে পারি?
মনে মনে নিতু এমনটাই চাইছিলো। কিন্তু সে ভাবলো, এত সহজে ‘হ্যাঁ’ বলা যাবে না। নব্য প্রেমিকরা হলো বানরের মতো। লাই দিলে মাথায় উঠবে। তারপর…
– আমি চলি। কাজ আছে। অফিসের অজুহাত দেখিয়ে ইচ্ছে করেই চোখ-মুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে বললো নিতু।
জহিরের খুব মন খারাপ হলো।

৪.
এবার অনেকদিন নিতুর দেখা নেই। নিতুর অফিস থেকে ঠিকানা নিয়ে তার বাসায় গেল জহির। হাতে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ। কাকে চাই? দরজা খুলে বললেন বয়স্ক এক মহিলা।
– আমি নিতুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। বলেন জহির এসেছে।
ভিতরে বসতে বলে চলে গেলেন মহিলা। নিতুকে গিয়ে বললেন- এই তোর সঙ্গে জহির নামে একজন দেখা করতে এসেছে। শুনে নিতুর বুকটা ধড়ফড় করে উঠলো। সে তো সারাক্ষণ জহিরকে নিয়েই ভাবছিলো। কিন্তু তার এ অবস্থা জহির কি মেনে নিবে? ভাবছিলো সে।
এক হাত দিয়ে হুইল চেয়ারের হাতলে হাত রাখলো নিতু। তারপর দুজন দুজনার মুখোমুখি, চোখে-চোখ। প্রায় নিষ্পলক দৃষ্টি। কারো মুখে কথা নেই। নিতুর চোখ ছলছল। নীরবতা ভেঙেই বললো সে- কেন এসেছেন? করুণা দেখাতে? ফুলগুলো নিতুর হাতে দিয়ে জহির বললো- না। ভালোবাসার কথা বলতে এসেছি। আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
– আমি তো পঙ্গু। এই অবস্থার পরও ভালোবাসবেন?
– হ্যাঁ নিতু, হ্যাঁ। ভালোবাসা দিয়েই আমি তোমাকে সুখী করবো।
– গ্যাসের লাইন লিক ছিলো। রান্নাঘরে চা বানাতে গিয়ে এ অবস্থা। এক হাত উড়ে গেছে। পায়েও সমস্যা হয়েছে। আগবাড়িয়ে বললো নিতু।
– তুমি কি আর কিছুই বলবে না নিতু? আমি তো খুব কষ্ট পাচ্ছি। তুমি একবার বলো, আমায় ভালোবাসো কিনা?
নিতু নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না এবার। হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলো। বিলাপের স্বরেই বললো- হ্যাঁ ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি।
তারপর থেকে দুজনই কাঁদছে।
দূর থেকে সব শুনছিলেন নিতুর মা। এই নাও, চা খাও। চোখ মুছতে মুছতে বললেন তিনি।
চা মুখে দিয়ে নিতু বললো- আমি তো এক কাপ চাও করে খাওয়াতে পারবো না।
– ভালোবাসা দিতে পারবে তো? জহির বললো।
– হ্যাঁ। তা পারবো।
– তাহলেই হবে।
এরপর আমার চাওয়ালী বলে নিতুর কপালে আলতো করে চুমু খেলো জহির। চা আর দুজনার চোখের জল মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল।

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান : বনানী, ঢাকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়