ঠিকানা নিয়ে ৩২ বার তদন্তে উষ্মা হাইকোর্টের

আগের সংবাদ

সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দিয়ে ক্ষমতায় বসবে না আ.লীগ > সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : অন্য দেশের সঙ্গেও অর্থ বিনিময়ের সুযোগে ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

মায়ের মতো

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মা মারা যাওয়ার পর থেকে নিজের রুম থেকে খুব একটা বাইরে আসে না জেমস। একা একা রুমে দরজা আটকিয়ে বসে থাকে। খুব ডাকাডাকি করলে বের হয়। গবেষণাগারেও তাকে পাওয়া যায় না। অথচ ওই সবচেয়ে ভালো বিজ্ঞানী রোবট। আসিফ এসব কারণে ওর প্রতি ত্যাক্ত বিরক্ত, কিন্তু ওর চোখের দিকে তাকালে সে কিছুই বলতে পারে না। কী শান্ত! কী মায়াবী, ওর দুটি চোখ। অবশ্য চোখ মায়াবী বলেই তাকে বকুনি দেয়া যাবে না এমনটা নয়। জেমসকে কিছু না বলার কারণ আসিফের মা ওকে খুব ভালোবাসতেন। আসিফের নিজের ওপরই রাগ হয়। কী কারণে যে রোবটের কারখানা থেকে ওকে বাসায় এনেছিল!
মনে পড়ে সেই সব কথা। রোবটের কারখানার চারজন পার্টনারের মধ্যে আসিফ একজন। কাজের সুবিধার জন্য ওরা একদল বিজ্ঞানী রোবট তৈরি করেছিল এবং এসব রোবটই ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী রোবট তৈরি করত এবং বিক্রি করত। এসব বিজ্ঞানী রোবটের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষ জেমস।
একদিন আসিফের মা রোবট কারখানা দেখতে এসে জেমসকে পছন্দ করে বসেন এবং তাকে বাড়ি নিয়ে আসার বায়না ধরেন।
– আমি ওকে বাড়ি নিয়ে যাই?
– না, মা। ও আমাদের কারখানার সবচেয়ে দক্ষ বিজ্ঞানী রোবট। ওকে নেয়া যাবে না। আর তুমিই বা রোবট দিয়ে কী করবে? আসিফের সাফ সাফ জবাব।
– আমি কী করব মানে? মানুষ বলতে আমরা দুজন। তোর বাবা মারা যাওয়ার পর তুই সারাদিন রোবট কারখানা নিয়ে ব্যস্ত। আমাকে সারাদিন একা একা থাকতে হয়। কথা বলার কেউ নেই।
মা আঁচল দিয়ে মুখ মোছেন।
– মা, ও তোমার সঙ্গে কী কথা বলব! তুমি বরং পার্কে ঘুরতে বা সিনেমা দেখতে যাও। আত্মীয়স্বজনের বাসায়ও ঘুরতে পার। তা তো যাবে না।
আমি অতশত বুঝি না। আমি জেমসকেই নিতে চাই। ওকেই আমার দরকার। মায়ের জবরদস্তিতে অবশেষে জেমসকে নিয়ে আসা হয় আসিফদের বাড়ি। বাড়ির সবচেয়ে বড় রুমটা জেমসকে দেয়া হয় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ। যাতে জেমস ঘরে বসেই রোবট তৈরির কাজ করতে পারে।
জেমসকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর মা পুরো বাড়িতে হুলস্থূল বাধিয়ে দেন। জেমসের গা মুছিয়ে দেয়া, জেমসের ঘর সাজিয়ে-গুছিয়ে দেয়া। সে এক মহাকাণ্ড।
জেমস যেন এ বাড়িরই ছেলে। বহুদিন পর বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরেছে। ঘটা করে জেমসের জন্য রংবেরঙের জামা বানানো হলো। সেসব জামা পরে জেমস মহাখুশিতে মায়ের পেছনে পেছনে ঘুরে বেড়ায়। রান্নাঘর, বারান্দা, শোবার ঘর, বাড়ির সামনে বাগান- কোথায় নেই জেমস। এ যেন মায়ের পাঁচ বছরের বাধ্য ছেলে। মা-ই তার একমাত্র আশ্রয়।
জেমস আর মায়ের কাণ্ড-কারখানা দেখে মনে মনে খুশি হয় আসিফ। যা-ই হোক মা অন্তত সময় কাটানোর জন্য একজন সাথী পেয়েছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর মাকে তেমন করে সময় দেয়া হয় না আসিফের। তাই আসিফের বুক থেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস বের হয়।
এভাবে চলছিল বেশ। হঠাৎ একদিন মা মারা যান। আসিফের চেয়ে বেশি শোকের সাগরে ভাসে জেমস। সারাদিন নিজের ঘরে বসে থাকে। ড্রইং রুম থেকে মায়ের ছবিটা খুলে নিয়ে নিজের রুমে রেখেছে। রোবট কারখানার কাজে তার মন নেই। সারাদিন তার রুমে বসে কী করে কে জানে! সময় সময় বের হয়ে বাগানে ঢুকে মায়ের লাগানো গাছে পানি দেয়। মায়ের যতেœ গড়া আসবাবপত্র ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার রাখে। মাঝে মাঝে বাগান থেকে টাটকা ফুল তুলে নিয়ে চলে যায় মায়ের কবরে। কবরের ওপরে ফুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে বিড়বিড় করে কী যেন বলে।
আসিফ জেমসের কোনো কাজে বাধা দেয় না। বাধা দিলেই বা শুনছে কে?
গত তিন দিন ধরে জেমস আশপাশের সবাইকে চিঠি বিলি করছে- আগামী শুক্রবার মায়ের জন্মদিন সবার নিমন্ত্রণ।
আসিফের নামেও একটা চিঠি আসে। আসিফ চিঠিটা পড়ে রীতিমতো লজ্জিত বোধ করে। প্রতিবছর এই একটা দিন আসিফদের বাসায় খুব ঘটা করে আয়োজন করা হতো। প্রায় এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া হতো। কিন্তু এবার আর তিন দিন মাত্র বাকি। অথচ জেমসের ঠিক মনে আছে।
আজ মায়ের জন্মদিন। আসিফই সব আয়োজন করেছে। শুধু কেক বাদে। কারণ কেক কে কাটবে? কিন্তু জেমস অনলাইনে অর্ডার করে বিশাল একটা কেক আনিয়েছে।
অতিথি সবাই উপস্থিত। রোবট মানুষসহ প্রায় ৫০ জন। এতজনকে জেমস কীভাবে জড়ো করল ভেবে পায় না আসিফ।
টেবিলে কেক। খাবার সব সাজানো হয়েছে। কিন্তু জেমসের কোনো খবর নেই। আসিফের ইচ্ছা- কেকটা জেমসই কাটুক। কিন্তু জেমস তো তার ঘরের দরজা আটকিয়ে বসে আছে।
পায়ে পায়ে আসিফ আসে জেমসের রুমের সামনে।
– জেমস জলদি আসো। সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
– জেমসের কোনো সাড়া নেই। বিরক্ত হয়ে আসিফ ড্রইং রুমে চলে আসে।
কিছু সময় পর এক পা দু পা করে জেমস আসে ড্রইং রুমে। কিন্তু ওর হাত ধরে ওটা কে? সুন্দর নীল রঙের শাড়ি পরা। সেই ঘন কালো চুল। সেই গভীর চোখ। এ তো মা!
তাহলে জেমস এতদিন মায়ের অবয়বে একটি রোবট বানিয়েছে! ঠিক মায়েরই মতো।
আসিফ দৌড়ে এসে জেমসকে জড়িয়ে ধরে। জেমসের বুকটাও কেঁপে কেঁপে উঠছে।
জেমস কি কাঁদছে? রোবটদের এত মায়া কবে থেকে হলো?

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়