মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ ও ম্যাপিং কার্যক্রম শুরু আজ

আগের সংবাদ

ভূ-রাজনীতির নতুন ক্ষেত্র ‘ব্রিকস’ : যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন মাত্রা

পরের সংবাদ

ইপিবির প্রতিবেদন : কমেছে কৃষিপণ্য রপ্তানি আয়

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮০ কোটি ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ কম। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি ছিল ১১০ কোটি ডলার। এ সময়ে কমে গেছে চা, তাজা সবজি, ফুল, ফল ও প্রক্রিয়াজাত খাবার রপ্তানি। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালানাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০২ কোটি ৮১ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়। তবে এক বছরের ব্যবধানে তা কমেছে। জানা গেছে, প্রায় এক বছর সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধ। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে অন্য কৃষিপণ্যসহ রপ্তানি আয়ে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১২ বছর আগেও কৃষিপণ্যের রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৪০ কোটি ডলার। শেষ ছয় বছর খাতটির রপ্তানি আয় দ্রুত বাড়ছিল। এর মধ্যে শুধু করোনার শুরুতে প্লেন বন্ধ থাকায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি পাঁচ শতাংশ কমেছিল, যা পরের বছরই ভালো অবস্থানে যায়। তবে এ বছরই বড় হোঁচট খেয়েছে এ খাতের রপ্তানি আয়। এ ব্যাপারে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশ কিছু কারণে কৃষিপণ্য রপ্তানি কমেছে। দেশে অস্বাভাবিক খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে ভারত ও পাকিস্তানের মতো অন্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে রপ্তানিযোগ্য খাদ্যপণ্যের দাম বেশি। প্রক্রিয়াজাত পণ্যের কাঁচামালের দামও বেশি। যে কারণে আটা, ময়দা, তেল, চিনির মতো পণ্যগুলোর মাধ্যমে তৈরি হিমায়িত খাবারের খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে রয়েছে ডলার সংকটে চলতি বছর কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হওয়া, ব্যয় বাড়া, এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি জটিলতা। পাশাপাশি দেশ থেকে সুগন্ধি চালের রপ্তানি বন্ধ থাকায় বাজার হারানো এবং সুগন্ধি চালের কারণে অন্য পণ্যের রপ্তানি আদেশ কমেছে।
কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে বেশি রপ্তানি হয় রুটি, বিস্কুট ও চানাচুরজাতীয় শুকনো খাবার, ফলের রস (জুস), বিভিন্ন ধরনের মসলা, পানীয় এবং জ্যাম-জেলির মতো বিভিন্ন সুগার কনফেকশনারি। শেষ ১১ মাসে কোম্পানিগুলো ২৩ কোটি ডলারের এ ধরনের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা গত বছর একই সময়ে ২৭ কোটি ডলার ছিল। এটা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ কম।
এ ব্যাপারে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য প্রস্তুতকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস এসোসিয়েশনের (বাপা) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক বলেন, স্ন্যাক্সজাতীয় খাবারে আমরা এখন একদম পিছিয়ে গেছি। আমাদের দেশে আটা, ময়দা, তেল, চিনি, ডালডা এসবের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আমাদের প্রতিযোগী ভারত-পাকিস্তানে এগুলোর দাম কম হওয়ায় তাদের খরচও কম। প্রতিযোগিতায় আমরা টিকতে পারছি না। বড় একটি অংশের অর্ডার হারাচ্ছি।
রপ্তানিকারকরা জানান, কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বাড়তি ফ্রেইট চার্জ একটা বড় বাধা। ফ্রেইট চার্জের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের দাম ২০-৩০ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। এটা একটা বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে পণ্যের খরচ বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানির বাজারে হোঁচট খাচ্ছে বাংলাদেশ। বাপা জানায়, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দেশের পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বড় ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান ২০টি। প্রাণ ও স্কয়ার গ্রুপ রপ্তানিতে বেশ এগিয়ে। সব মিলিয়ে রপ্তানি করছে ১০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে বর্তমানে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। তারপরও অধিকাংশ কোম্পানির রপ্তানি প্রবৃদ্ধি চলতি বছর কমেছে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে তাজা সবজি রপ্তানি কমেছে ৪০ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে মাত্র সাড়ে ৯ কোটি ডলারের সবজি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল এন্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর বলেন, আমরা রপ্তানিকারকদের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করি। সেখানে অ্যাভারেজ সবজির দাম থাকে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা। সেটা বাছাই ও প্যাকিংসহ। সেখানে দেশের বাজারেই এক কেজি সবজি ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে গত ছয় মাসে কার্গো ভাড়া ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এজন্য রপ্তানি করে লাভ হচ্ছে না। আগ্রহ হারাচ্ছে সবাই।
এদিকে সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধ থাকায় এ বছর সার্বিক রপ্তানি বেশ কমেছে। কৃষিপণ্যের রপ্তানিকারকরা বলছেন, কৃষিপণ্যের রপ্তানির একটা বড় অংশ থাকত সুগন্ধি চাল। ওই চালের রপ্তানি গত জুলাই থেকে পুরোপুরি বন্ধ। যদিও সরকার পুনরায় এ চাল রপ্তানি খুলে দেয়ার কথা ভাবছে। বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) নেতৃত্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয় এ নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বন্ধের আগে প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি হতো। বিশ্বের ১৩৬টি দেশেই এ চাল রপ্তানি হয় বাংলাদেশ থেকে। এক বছর রপ্তানি বন্ধ থাকায় বাজার হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। একই সঙ্গে নতুন করে রপ্তানি শুরু হওয়ার পরও বাজার পুনরুদ্ধার করা কষ্টকর হবে বলে মনে করছেন তারা।
বিশ্ববাজারে সুগন্ধি চাল রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভারত ও পাকিস্তান। আর ক্রেতা দেশগুলো এসব দেশের রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে সুগন্ধি চালের সঙ্গে অন্য পণ্য একত্রে নেয়। ফলে সুগন্ধি চাল না দিতে পারায় বাংলাদেশের অর্ডারগুলো (ক্রয়াদেশ) যাচ্ছে ভারত ও পাকিস্তানে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়