সংসদে বিল উত্থাপন : আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

আগের সংবাদ

খুলনা-বরিশালে ‘উন্নয়ন’ ম্যাজিক : খুলনার উন্নয়ন ভাবনা ও ব্যক্তি ইমেজেই খালেকের বাজিমাত

পরের সংবাদ

শুল্ক বৃদ্ধিতে আবাসন খাতে শঙ্কা

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সিমেন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামাল ক্লিঙ্কারের আমদানি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য আমদানি পর্যায়ে প্রতি টন ক্লিঙ্কারের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন আমদানি করা ক্লিঙ্কার দিয়ে তৈরি সিমেন্ট বাজারে আসার পর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিমেন্টের দাম খুচরা পর্যায়ে বস্তাপ্রতি ৫৮০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে বলে কারখানা মালিক ও ডিলাররা ইঙ্গিত দিয়েছেন। এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতি বস্তা সিমেন্ট খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকায়। ঠিকাদাররা বলছেন- এ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়বে আবাসন খাত। কারন তারা বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পেয়েছেন সিমেন্টের মূল্যবৃদ্ধির আগে।
জানা গেছে- নতুন বাজেটে প্রস্তাবিত শুল্ক কাঠামোতে প্রতি বস্তা সিমেন্টের উৎপাদন খরচ ১৫ টাকা বাড়ার কথা থাকলেও উৎপাদনকারীরা খুচরা পর্যায়ে প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা বাড়ানোর কথা ভাবছে, যা সব পর্যায়ে নির্মাণ ব্যয় আরো বাড়িয়ে দেবে। নির্মাতা ও ঠিকাদারদের আশঙ্কা- নির্মাণকাজের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সিমেন্টের আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি রডসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর দামও বেড়ে যাবে। এসব পণ্যের দাম আগেই চড়া ছিল।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে- বাজেট পাশ হওয়ার আগেই কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ১ জুন থেকে সিমেন্ট ক্লিঙ্কারের নতুন হারে শুল্ক আরোপ করছে। এ ব্যাপারে প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিরুল হক বলেন, শিগগিরই কারখানা গেটে সিমেন্টের দাম ব্যাগপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা বাড়ানোর পরিকল্পনা তাদের। তিনি বলেন, সিমেন্ট কারখানা মালিকরা খরচের সঙ্গে সমন্বয় করে নিজস্ব কোম্পানির সিমেন্টের দাম নির্ধারণ করেন। আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির কারণে যে বাড়তি ব্যয় হবে, সে হারে সিমেন্টের দাম বাড়বে। ইতোমধ্যে ডলারের দাম প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডলার সংকটের কারণে বেড়ছে নানামুখী খরচ। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে এসব বাড়তি খরচও অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।
সিমেন্ট ব্যবসায়ীরা জানান- খুচরা পর্যায়ে একেক অঞ্চলে একেক দামে সিমেন্ট বিক্রি হয়। দামের তারতম্য নির্ভর করে পরিবহন ব্যয়ের ওপর। ইতোমধ্যে অনেক কারখানা সিমেন্টের দাম বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
জানা গেছে- মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট লজিস্টিকস সমস্যা ও পণ্য পরিবহনে জাহাজভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় আগে থেকেই চাপে ছিল সিমেন্ট শিল্প। এর মধ্যেই উৎপাদন খরচ ফের বেড়ে গেলে খুচরা পর্যায়ে প্রতি ব্যাগ সিমেন্ট ৫৮০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন কারাখানা মালিক ও ডিলাররা। এতে বাধাগ্রস্ত হবে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। বর্তমানে কারখানা পর্যায়ে প্রতি ব্যাগ সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ থেকে ৪৮০ টাকায়। ডিলার পর্যায়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়। আর খুচরা পর্যায়ে প্রতি বস্তা সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে ৫২০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকায়।
এদিকে বিসিএমএর ফার্স্ট ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও মেট্রোসেম সিমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ডলার সংকটের কারণে তারা চাহিদার মাত্র ৪০ শতাংশ সিমেন্ট ক্লিঙ্কার আমদানি করতে পারছেন। তিনি বলেন, প্রাক-বাজেট আলোচনায় সরকারের কাছে আমদানি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আর আগাম আয়করের বিষয়ে আমাদের জোরাল দাবি ছিল ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশ করা। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, উল্টো ক্লিঙ্কারে আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যেই উচ্চ কর, জ্বালানি সংকট, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি ও ডলার সংকটে হাঁসফাঁস করতে থাকা খাতটির জন্য বড় ধাক্কা হবে এ শুল্কবৃদ্ধি। তারা বলেন, গত দুই বছরে প্রায় প্রতিটি নির্মাণসামগ্রীর দাম ১৮ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের রিয়েল এস্টেট শিল্প।
এ ব্যাপারে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব-এর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি আবদুল কৈয়্যুম চৌধুরী বলেন, এমনিতে নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের আবাসান খাত চরম সংকটের মাধ্যে রয়েছে। তার ওপরে ক্লিঙ্কারের শুল্ক বাড়ানোর ফলে নির্মাণ শিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে বলে জানান তিনি। এতে সরকারের রাজস্ব আয় না বেড়ে উল্টো কমবে বলে সতর্ক করে তিনি বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানান। এদিকে সিমেন্টের আমদানি শুল্ক কমিয়ে টনপ্রতি ২০০ টাকা করার দাবি জানিয়েছে সিমেন্ট কারখানা মালিকদের সংগঠন বিসিএমএ।
ঠিকাদাররা জানান- সিমেন্টের মূল্যবৃদ্ধির বোঝা পুরোটাই যাবে ভোক্তার কাঁধে। এছাড়া সরকারি যেসব প্রকল্প চলমান রয়েছে সেগুলোর ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারন এসব প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে মূল্যবৃদ্ধির আগের হিসাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়