গ্রিন ভয়েস : প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের দাবিতে সাইকেল র‌্যালি

আগের সংবাদ

বাজেটে কেউ খুশি নয় : সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বেড়েছে, পূরণ হয়নি ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ দাবি

পরের সংবাদ

কাঁকনহাটের রাজকন্যা

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঘন জঙ্গলের পাশে নিরিবিলি গাঁয়ে কুঁড়েঘরে থাকত এক কাঠুরে। সংসারে বাবা-মা, ভাই-বোন কেউই নেই। সারাদিন জঙ্গলে খুটখাট গাছ কেটে খড়ি বানায়। বিকালে সেগুলো শক্ত লতা দিয়ে কষে বোঝা বেঁধে মাথায় নিয়ে সোজা হাটে-বাজারে। বিক্রি করে যা পায় তা-ই দিয়ে কায়ক্লেশে দিন কাটে। বেশি হলে গাধা অথবা খচ্চরের পিঠে করে নিয়ে যেতে হয়।
এমনই একদিন বাজারে গিয়েছে গাধার পিঠে বোঝাই কাঠখড়ি নিয়ে। সব বিক্রি হলো চটজলদি। তার চেরা কাঠের চাহিদা ভালো। সরু লম্বা করে ফাড়া বলে উনুন ভালো জ¦লে। বিক্রি শেষে গাধাটার জন্য কয়েকটা মুলা কিনল কাঠুরে। সবই সাদা, একটা ব্যতিক্রম। চমৎকার গোলাপি রঙের সেই মুলাটা নিজের কাছে রেখে দিল সে।
সারাদিনের কঠিন পরিশ্রমের পর ক্লান্তিতে না খেয়েই গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় কাঠুরে। ক্ষিধে পেটে সুস্বাদু সব খাবারের স্বপ্ন দেখল সারারাত। দৈ, রসগোল্লা, ফিরনি, পোলাও, গোশত।
স্বপ্নে এও দেখল- পরমা সুন্দরী এক রাজকন্যার সঙ্গে মহা ধুমধামে তার বিয়ে হচ্ছে। ভোরে জেগে একা একাই হাসল, আহা! আকাশকুসুম কল্পনার মতো সব স্বপ্ন! রাজকন্যা কিনা গরিব কাঠুরের বৌ!
সকালে যবের ছাতু আর আখের গুড় পানিতে মেখে গপাগপ খেয়ে নেয়। এরপর দুপুরের জন্য চাট্টি মুড়িমুড়কি গামছায় বেঁধে ঘাড়ে কুড়াল নিয়ে বনের দিকে হনহনিয়ে হাঁটা দেয় কাঠুরে। যাবার আগে মুলাটা আলগোছে গালে ছোঁয়ায়। নড়বড়ে কুঁড়েঘরের বাঁশের কপাট টেনে দিতেও ভোলে না।
বনে গিয়ে প্রতিদিনের মতো আগে দেখে নেয় যে গাছ কাটবে তার ডালে পাখির বাসা আছে কিনা। কোটরে টিয়ে, কাঠবিড়ালি থাকলে সেই গাছও বাদ হয়। মৌচাক থাকলে সেই গাছও কখনো কাটে না। কারো ক্ষতি করা মন্দ কাজ- জানে কাঠুরে। এসব দেখেশুনে কাজ শুরু করতে দেরি হয়। এতে অন্যদের তুলনায় কম কাঠ কাটলেও ঢের ভালো, তবু কক্ষনো সে খারাপ কাজে নেই।
এর মধ্যে দুপুর হলে সঙ্গে আনা খাবার, তেষ্টা পেলে আঁজলা ভরে নদীর মিঠে পানি খেয়ে বিশ্রামের জন্য গাছের ছায়ায় গা এলিয়ে দেয় কাঠুরে। ভরদুপুরে প্রায়দিনই রাখালরা বাঁশি বাজায়। আজকে বাঁশির মিষ্টি সুরে নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে যায় সে।
জাগো বন্ধু, সন্ধ্যা হলো বলে, বাজারে যাবে না?… অন্য কাঠুরেদের ডাকে জেগে দেখে তা-ই তো, বিকাল গড়িয়েছে। কিন্তু আজ সে এত কম কাঠ কেটেছে, বাজারে গিয়ে লাভ নেই। অগত্যা একাই বাড়ির পথে হাঁটে। মনটা খারাপ, রাতে কী খাবে? কিছুই নেই ঘরে। গত রাতেও অভুক্ত ছিল। আলু দিয়ে রান্না মুরগির ঝোল, ইলিশ মাছ আর বিন্নি চালের ভাত খেতে ভীষণ ইচ্ছা করে তার। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে নিজের উঠানে পা দিয়েই কাঠুরে অবাক। উঠান ঝকঝকে, তকতকে! আরো আশ্চর্য কাণ্ড- খাবারের সুঘ্রাণ নাকে এসে লাগে আর তার ক্ষিধেও যায় বেড়ে। কিন্তু বুঝতে পারে না, কোত্থেকে আসছে সুগন্ধ?
কুয়োতলায় হাতমুখ ধুয়ে ঘরের ভেতরে ঢোকে কাঠুরে। তেলের প্রদীপ জে¦লে পিলসুজে রেখেছে। এবার গোলাপি মুলাটাতে হাত ছোঁয়ায়। কিন্তু সেটা যেভাবে রেখেছিল সেভাবে নেই। অবাক ব্যাপার! আরো অবাক হওয়ার পালা- ঘরের এক কোণে খাবার সাজানো, যা যা খেতে তার ভীষণ ইচ্ছা করছিল সবই আছে। কিন্তু কীভাবে? মনে শুধু প্রশ্ন। খেতে খেতে ভাবে, তাদের কাঁকনহাট রাজ্যের দয়ালু রাজা কখনো গরিব প্রজাদের ঘরে খাবারও পাঠান, তেমন কি? তার দরজা তো তালা বদ্ধ থাকে না, খাবার রেখে যাওয়া কঠিন নয়। কিন্তু ঘর-উঠান পরিষ্কার করল কে? আর ভাবা হয় না, ঘুম ঢুলঢুল চোখ বুজে আসে। আজো সেই স্বপ্নটা দেখল- গোলাপি রঙের পোশাক পরা কারো সঙ্গে তার বিয়ে হচ্ছে।
ভোরে গোলাপি মুলাটাকে স্পর্শ করে ফের জায়গা মতো রেখে হনহনিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আজ দেরিতে ঘুম ভেঙেছে, তাই কিছু খাওয়ার বা বেঁধে নেয়ার সময়ই পায় না। তাতে অসুবিধা নেই। জঙ্গলের মধ্যে কত ফলফলারি আছে।
একটা কলার থোপ পেয়ে যায়। কাঁদি ভর্তি কলা। বড়সড় হলুদ পাকা দুটি সবরি কলা খেয়ে নিল কাঠুরে। সকালের খাবারে এ-ই যথেষ্ট। এরপর সারাদিন গাছ চিরে খুটখাট কাঠ কাটা। দুপুরের খাবার হলো মিষ্টি সফেদা, আতা আর চাঁপা রঙের ফেটে যাওয়া বাঙ্গি।
একই নিয়মে সব কাজকর্ম চলল সারাদিন। ফের ভর সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা। ঘরে ঢুকে আজো তার চোখ বিস্ময়ে ছানাবড়া! বিছানা পরিপাটি, সাজানো-গোছানো তার পর্ণ কুটির। পেতলের চকচকে গøাসে পানিতে রাখা তাজা গোলাপি পদ্মফুল। ঘর ভর্তি গন্ধ। আজো অনেক রকম খাবার-দাবার আছে। সুস্বাদু খাবার গোগ্রাসে খায় ক্লান্ত ক্ষুধার্ত কাঠুরে। এরপর তলিয়ে যায় গভীর ঘুমে। কেন, কীভাবে, কোত্থেকে এলো- এসব চিন্তার সুযোগই পায় না।
ভোরবেলায় গত দুই দিনের সব ঘটনা মনে পড়লে চিন্তিত হয় সে। সিদ্ধান্ত নেয় আজ কাজে বেরুবে না। লুকিয়ে থেকে দেখবে এসব তেলেসমাতি কাণ্ড কীভাবে হচ্ছে। পরিকল্পনামতো ঘরের ভেতরটা দেখা যায় এমন জায়গায় লুকিয়ে আছে তো আছেই।
মহাবিরক্ত সে আপন মনে বলে, ধুত্তোর! কিছুই যে দেখি না। কিন্তু অল্পক্ষণ পরই তার চোখ কপালে ওঠে।
ঘরের ভেতরের গোলাপি মুলাটার ভেতর থেকে আস্তে-ধীরে বের হলো ছোট্ট একরত্তি পরমাসুন্দরী এক কন্যা। স্বপ্নে দেখা সেই রাজকন্যার মতোই যেন চেহারা তার। সে স্বাভাবিক মানুষের আকারের হয়ে গেল নিমিষেই।
দ্রুত হাতে সব কাজ, রান্নাবান্না শেষ করল। এরপর সে মুলার সামনে গিয়ে আবার ছোট্ট হয়ে ভেতরে ঢুকতে যাবে তখনই কাঠুরে তার সামনে এসে দাঁড়ায়।
মেয়েটি ভয় পেয়ে পরিচয় দেয়… কাঁকনহাটের রাজার একমাত্র সন্তান রাজকুমারী কাঁকনবালা আমি। এরপর সে মিষ্টি গলায় অনুরোধ করে- কাঠুরে, ভেতরে যেতে হবে আজো। বাধা দিও না। তবেই আগামীকাল আমার বন্দিদশা মুক্তি হবে গো।
কাঠুরের বিস্ময়ভাব কাটেই না। তার মধ্যেই সে কাঁকনবালা বলে চলে- একদিন ভর সন্ধ্যায় প্রাসাদের বাগানে একা পেয়ে হিংসুটে ডাইনি জাদু মন্ত্রবলে মুলার ভেতর আমাকে ঢুকিয়ে দেয়। সেই থেকে বন্দি। দুষ্ট ডাইনি বলেছিল, কেউ মুলাটা কিনে যদি তিন দিন ঘরে রেখে দেয় তবেই আমার মুক্তি হবে। আগামীকাল সেই শুভ দিন। মুক্ত হয়ে একা না, তোমাকে সঙ্গে নিয়েই রাজপ্রাসাদে ফিরে যাব।
কথা শেষ করে মুহূর্তে মিলিয়ে যায় অপরূপ সেই কনে। মুলাটা একটু যেন নড়ে ওঠে। কাঠুরে সবই বুঝতে পারে, তার কাছে সব রহস্য এখন পরিষ্কার।
আজকেও নানা সুস্বাদু খাবার রেঁধেছে রাজকন্যা। খেয়ে অতল গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় তরুণ কাঠুরে। সেই স্বপ্নটাই ফের দেখে, তাদের রাজ্যের রাজার মেয়ের সঙ্গে মহা ধুমধামে বিয়ে হচ্ছে তার।
– মাশ্হুদা মাধবী

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়