স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত না হওয়ায় স্কুলছাত্র সিয়াম খুন : পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার দুই

আগের সংবাদ

উৎসব-উৎকণ্ঠার ভোট আজ : কে হচ্ছেন গাজীপুরের নগরপিতা, ৪৮০ ভোটকেন্দ্রের ৩৫১টিই ঝুঁকিপূর্ণ, লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

পরের সংবাদ

জানা-অজানা নজরুল

প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ছিল বর্ণময়। ১২৪তম জয়ন্তীকে সামনে রেখে চলো আজ জেনে নিই তার জীবনের জানা-অজানা কয়েকটি ঘটনা-
একবার কবি কাজী নজরুল ইসলাম পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের বাড়ি বেড়াতে গেলেন। নজরুল চা পান করার আগ্রহ প্রকাশ করলে পল্লীকবি বাজার থেকে চা পাতা এনে বাড়ির বউ-ঝিকে বানানোর জন্য দেন। বউ-ঝিরা এর আগে চা বানাননি। তারা বাড়িতে যত রকম মসলা ছিল (আদা, মরিচ, পেঁয়াজ, ধনে, জিরা ইত্যাদি) সবকিছু দিয়ে জম্পেশ এক কাপ চা খাওয়ালেন নজরুলকে।

২.
একবার নজরুল সিরাজগঞ্জে আসাদউদ্দৌলা সিরাজীর বাসায় গেলেন। খাওয়া-দাওয়ার পর সবাইকে দই দেয়া হলো। টক স্বাদের সেই দই খেয়ে নজরুল আসাদউদ্দৌলার দিকে তাকিয়ে চোখে-মুখে অদ্ভুত ভঙ্গি করে বললেন, ‘তুমি কি এই দই তেঁতুল গাছ থেকে পেড়ে নিয়ে এলে নাকি?’

৩.
কাজী নজরুল আসাদউদ্দৌলা সিরাজীর ঘরে খেতে বসেছেন। আসাদউদ্দৌলা নিজেই ইলিশ ভাজা দিচ্ছেন সবার পাতে। পাতে ইলিশ পড়া মাত্র নজরুল সেটা খেয়ে ফেললেন। তখন কে যেন আরো কয়েক টুকরা ইলিশ দিতে যাচ্ছিলেন কবির পাতে।
কবি তাকে বাধা দিয়ে বললেন, ‘আরে করছ কী?’ তিনি বললেন, ‘ইলিশ ভাজা দিচ্ছি!’ কবি বললেন, ‘আমাকে এত ইলিশ দিও না। শেষকালে বিড়াল কামড়াবে তো?’
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন কবির মুখের দিকে। হঠাৎ হাসতে হাসতে কবি বললেন, ‘ইলিশ মাছের গন্ধ মুখে লালা ঝরায়। বিড়াল মাতাল হয়ে যায় এর ঘ্রাণে। বেশি খেলে কি আর রক্ষে আছে? সারা দেহ থেকে গন্ধ ছুটবে আর সে গন্ধ পেয়ে বিড়াল তেড়ে আসবে।’
৪.
একবার ছোট্ট এক মেয়েকে কবি বলেছিলেন, ‘খুকি তোমাকে কলকাতার এ মোড় থেকে ও মোড় সব দেখাব।’ ছোট্ট মেয়েটি কিন্তু বিশ্বাস করতে পারেনি কবির এ কথা।
কাজী নজরুল ইসলাম সত্যি সত্যি একদিন একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়লেন মেয়েটিকে নিয়ে। সারাদিন কলকাতা ঘুরে বেড়ালেন। বিকালে ট্যাক্সি ভাড়া দিতে গিয়ে দেখেন- পকেটে একটা পয়সাও নেই। পরে সেই ট্যাক্সি নিয়েই ছুটলেন বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি। এর-ওর কাছ থেকে ধার করে মেটালেন ট্যাক্সি ভাড়া।

৫.
নজরুলের মা জাহেদা খাতুন ছিলেন তার বাবা কাজী ফকির আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী। সাধারণত মনে করা হয় দারিদ্র্যের প্রবল কশাঘাতে শৈশব পার হওয়ায় তার নাম রাখা হয় দুখু মিয়া। আসলে মা জাহেদা খাতুনের চার পুত্রের অকাল মৃত্যুর পরে নজরুলের জন্ম হয় বলে শিশুকালেই তার নাম রাখা হয় দুখু মিয়া। ছেলেবেলায় তিনি ‘তারা ক্ষ্যাপা’ নামেও পরিচিত ছিলেন। পরে ‘নুরু’ নামও তিনি ব্যবহার করেছেন।

৬.
কবি নজরুল আসানসোলে রুটির দোকানে কাজ করতেন। তিনি রুটি বানাতে বানাতে ছড়া কাটতেন। আটা মাখছেন আর কিশোর নজরুলের গা বেয়ে টপটপ করে ঘাম ঝরছে। আর মুখে ছড়া, ‘মাখতে মাখতে গমের আটা/ ঘামে ভিজল আমার গা-টা।’

৭.
সিয়ারশোল রাজ হাইস্কুলের শিক্ষক এবং যুগান্তর দলের গোপন বিপ্লবী নিবারণ চন্দ্র ঘটক কিশোর নজরুলের মধ্যে স্বাধীনতা এবং বিপ্লবী আকাক্সক্ষার সঞ্চার করেছিলেন।
বিপ্লবী কর্মতৎপতার জন্য একসময় এই শিক্ষকের বিচার হয়। আর বিপ্লবের সঙ্গে যোগাযোগ আছে সন্দেহে দশম শ্রেণির সেরা ছাত্র নজরুলের মাসিক ৫ টাকা হারে ছাত্রবৃত্তি কেড়ে নেয়া হয়। যদিও পরে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পুনরায় চালু করা হয় সেই বৃত্তি।

৮.
করাচি সেনানিবাসে কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে থেকেও তরুণ নজরুলের সাহিত্য-সংগীত অনুরাগী মন শুকিয়ে যায়নি, বরং অদম্য আগ্রহে পথ খুঁজে নিয়েছে। প্রাণবন্ত হৈহুল্লোড়ে আসর জমাতেন বলে
সেনানিবাসে তিনি ‘হৈ হৈ কাজী’ নামে পরিচিত ছিলেন।

– আহমেদ শাকিল

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়