বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় চতুর্থ ঢাকা

আগের সংবাদ

দায়িত্ব নিলেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন

পরের সংবাদ

বিনোদ দাশগুপ্তর ত্রয়ী গ্রন্থ ও তার অজানা কথা

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রয়াত বাম রাজনীতিক ও খ্যাতিমান সাংবাদিক বিনোদ দাশগুপ্তের তিনটি বইয়ের সমন্বয়ে ত্রয়ী সংকলন প্রকাশ উপলক্ষে সম্প্রতি তাকে স্মরণ করা হয়। অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে সাদামাটা প্রচারবিহীন এ অনুষ্ঠানটি ছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের একটি বুক শপের স্বল্প পরিসরে স্বল্পসংখ্যক দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে। মূলত, বিনোদ দাশগুপ্তের প্রতি যাদের দায়বদ্ধতা ছিল তাদেরই ক’জন এ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। উল্লেখ্য, বিনোদ দাশগুপ্তের মৃত্যু হয় ১৮ বছর আগে ২০০৪ সালে। ফলে এ প্রজন্মের কাছে বিনোদ দাশগুপ্ত অপরিচিত এবং তার লেখা এদের পক্ষে পঠন-পাঠনের কোনো সুযোগ ছিল না। বিনোদ দাশগুপ্ত ছিলেন আমার কৈশোর উত্তীর্ণ যৌবনের প্রারম্ভের সহকর্মী ও বাম-রাজনীতির একজন অন্যতম দীক্ষা গুরুজন। মার্কসবাদের নানা পাঠে তিনি ছিলেন আমার অনানুষ্ঠানিক শিক্ষক। ১৯৭৪ সালে তিনি ছিলেন বাম ঘরানার দৈনিক বঙ্গবার্তা’র সহকারী সম্পাদক। আর আমি ছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও পাশাপাশি ওই পত্রিকার একজন নগণ্য শিক্ষানবিশ রিপোর্টার মাত্র। ওই পত্রিকার সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদক ছিলেন বিখ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ ও কামাল লোহানী। মীর্জা নূরুল হুদা কাদের বক্স, ওয়াজেদ মাহমুদ, কবি সমুদ্র গুপ্তসহ বিখ্যাত সাংবাদিক ও রাজনীতিকরা তখন ওই পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। আর্থিক অসচ্ছলতা ও সরকারি নানামুখী চাপের কারণে এক বছরের মাথায় ওই পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেলে বিনোদ দাশগুপ্ত ফিরে যান দৈনিক মর্নিং নিউজ-এ।
বিনোদ দাশগুপ্ত জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অধ্যাপক ড. মনসুর মুসা জানান, ‘এই অঞ্চলটি শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রগতিশীল আন্দোলনের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিল। বিনোদ দাশগুপ্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের পড়াশোনা গ্রামেই সম্পন্ন করেছিলেন। ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে যাওয়ার পর তিনি কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তার [বিনোদ দাশগুপ্তের] ভাষ্য মতে, চট্টগ্রাম গভর্নমেন্ট কলেজ অব কমার্স-এ তিনি ভর্তি হন। কলেজটি আগ্রাবাদে এখনো আছে। যতদূর জানা যায়, কলকাতা ইসলামিয়া কলেজকে স্থানান্তরিত করে আগ্রাবাদে আনা হয়। তিনি ওই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। এই কলেজেই তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়ে ছিলেন খ্যাতনামা সাহিত্যিক শওকত ওসমানকে।… শওকত ওসমান মুক্তবুদ্ধির ঐতিহ্য লালিত ছিলেন।’
অধ্যাপক মুসা আরো জানান, [সাংবাদিক] মাশির হোসেন ও বিনোদ দাশগুপ্তের যৌথ সম্পাদনায় একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে বিনোদ দাশগুপ্তের একটি প্রবন্ধ আছে। সংকলনটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এর শিরোনাম ও প্রচ্ছদ। শিরোনামটি ব্যতিক্রমী : সেটা হচ্ছে মিছিলের ভাষা। সংকলনটি ১৯৮১ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত হয়েছি।
“এই সংকলনে যে লেখাটি বিনোদ দাশগুপ্ত লিখেছেন, তারই পরিণতি দেখা যায় তার রচিত ‘রাজনীতি ও কারাগার’ শীর্ষক গ্রন্থে। যেখানে তিনি একদিকে তার ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা, অপরদিকে বাংলাদেশের কারাগার জীবনের চিত্র যুগপৎ তুলে ধরেছেন। এ ধরনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ বিশ্লেষণাত্মক গ্রন্থ বিরল। গ্রন্থটি যে কতটা ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝতে পারা যায় সরদার ফজলুল করিম লিখিত নাতিদীর্ঘ মুখবন্ধে। সরদার ফজলুল করিম লিখেছেন, “বিনোদ দাশগুপ্তের ‘রাজনীতি ও কারাগার’ পাণ্ডুলিপি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রাক্তন রাজনীতিবিদ এবং ক্ষমতাবান লেখক রাজনৈতিক বন্দির স্মৃতিচারণসহ সমগ্র কারাগার ব্যবস্থার ওপর এরূপ সুচিন্তিত পাণ্ডুলিপি আর আছে বলে আমার জানা নেই।”
সক্রিয় বাম রাজনীতির কারণে যৌবনের শুরুতেই বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে বিনোদ দাশগুপ্তের সাত বছর জেল জীবন কাটে। তিনি ছিলেন রাজশাহী জেলে। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল ওই জেলের কুখ্যাত খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট রাজবন্দিদের ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণহত্যা চালায়। ওই হত্যাকাণ্ডে সাতজন বিপ্লবী শহীদ হন। আহত হন ৩০ জন। বীর শহীদরা ছিলেন : আনোয়ার হোসেন, কম্পরাম সিং, বিজন সেন, সুধীর ধর, হানিফ সেখ, দিলওয়ার হোসেন ও সুখেন ভট্টাচার্য। এরা সবাই ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির বিভিন্ন সেক্টরের নেতৃবৃন্দ। আর যারা আহত হন তাদের কয়েকজনের হাত-পা কেটে ফেলতে হয় এবং সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেন। তারাও ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির নানা সেক্টরের নেতৃবৃন্দ।
এই প্রেক্ষাপটে বিনোদ দাশগুপ্তের এই ত্রয়ী সংকলনের ভূমিকায় ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মন্তব্য করেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের আসল চেহারা খানিকটা উন্মোচন ঘটেছিল ওই হত্যাকাণ্ডে। বোধ করি সেটা ছিল একাত্তরের গণহত্যার পূর্বাভাস ও প্রস্তুতি। তিনি ওই গ্রন্থের প্রারম্ভে ব্যক্তি বিনোদ দাশগুপ্ত সম্পর্কে বলেন, বিনোদ দাশগুপ্তের মতো বিনয়ী মানুষ আমি কমই দেখেছি। কিন্তু সে বিনয় ভীরু মানুষের নয়, একজন সাহসী, অঙ্গীকারসমৃদ্ধ ব্যক্তির বিনয়। তার সাহস ছিল শান্ত এবং অঙ্গীকার দৃঢ়; কিন্তু তিনি ছিলেন স্বল্পভাষী ও মৃদুকণ্ঠ। তিনি যে খুব কম লিখেছেন তা নয়, কিন্তু তার সব লেখা আমরা হাতের কাছে পাইনি। তিনটি বই এবার একত্রে পাওয়া যাচ্ছে, সেটি একটি ভালো ঘটনা। প্রফেসর চৌধুরী তার ওই ভূমিকায় আরো জানাচ্ছেন, ‘বই তিনটির বিষয়বস্তু ভিন্ন ভিন্ন মনে হবে, কিন্তু আদতে তারা পরস্পর সংলগ্ন এবং তিনটি বই-ই রাজনৈতিক। প্রবচনের রাজনীতি নামের বইতে বহুল প্রচলিত বাংলা প্রবচনগুলোকে তিনি একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছেন এবং ব্যাখ্যা করেছেন। দৃষ্টিভঙ্গিটা একজন সমাজবিপ্লবীর। তিনি ওই বিপ্লবী রাজনীতিতেই ছিলেন এবং সে কারণেই রাষ্ট্র ও জগৎকে দেখেছেন মেহনতী মানুষের স্বার্থের অবস্থান থেকে। স্বাধীনতা- পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিকেও তিনি ওই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছেন।’
বিনোদ দাশগুপ্ত তার সংগ্রামী রাজনীতি ও সাংবাদিকতা জীবনে যত লেখা লিখেছেন, তার তিন ভাগের এক ভাগও গ্রন্থভুক্ত হয়নি। জীবিত থাকা অবস্থায় প্রকাশিত হয় মাত্র দুটি গ্রন্থ। অন্যটি পাণ্ডুলিপি আকারে প্রকাশের জন্য রেখে যান। মৃত্যু-পরবর্তী অসুস্থ স্ত্রী শেফালী দাশগুপ্ত এটি প্রকাশে ব্যর্থ হয়ে মেয়ে তৃষাকে দায়িত্ব দিয়ে যান। আর মৃত্যুর প্রায় দুই দশকের মাথায় এসে অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপিসহ তিনটি গ্রন্থের সমন্বয় এই ত্রয়ী সংকলন প্রকাশ পেল। গ্রন্থ তিনটি যথাক্রমে : রাজনীতি ও কারাগার, প্রবচনের রাজনীতি এবং বিক্ষিপ্ত রাজনীতি। তবে তার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বহু মূল্যবান অসংখ্য লেখা একত্রিত করে ছাপা হলে ভালো হতো। এ প্রজন্মের আগ্রহী পাঠকরা সে কালের রাজনীতি সমাজনীতির নিরপেক্ষ ও নির্মোহ হালচাল জানতে পারতেন। লক্ষ্য করার বিষয় যে তার সব লেখার বিষয়বস্তু রাজনীতি। বোঝা যায় রাজনীতির মানুষ হিসেবে তিনি রাজনীতির বাইরে সাংবাদিকতা ও সাংসারিক দায়িত্ব ছাড়া অন্য কোনো ভূমিকায় খুব একটা ছিলেন না। স্মর্তব্য যে, সাংবাদিকতার তার লেখাভাষ্যের সবই ছিল দেশ-বিদেশের রাজনীতি ও আর্থসামাজিক নানা বিষয়বলি। যা তিনি অনুসন্ধানী মন নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মধ্য দিয়ে তার নির্মোহ যৌক্তিক আলোচনায় তিনি তুলে আনতেন।
দৈনিক ভোরের কাগজ-এর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং বিনোদ দাশগুপ্তের অতি নিকট আত্মীয় শ্যামল দত্ত ওই স্মরণ সভায় জানান, বিনোদ দাশগুপ্ত ছিলেন একজন একনিষ্ঠ বাম-রাজনীতিবিদ, প্রগতি ও প্রতিবাদী ন্যায়নিষ্ঠ সাংবাদিক। যিনি ছিলেন মানবিক মূল্যবোধের বিনয়ী একজন সহনশীল দৃঢ়চেতা আপসহীন মানুষ। অনেকাংশে দারিদ্র্য জীবন ও অর্থকষ্ট থাকলেও কারো অনুগ্রহ তিনি গ্রহণ করেননি। এমনকি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য ফিরিয়ে দিয়েছেন। বিনোদ দাশগুপ্ত যে আপাদমস্তক রাজনীতির মানুষ, তা তার নিজ ভাষ্যেই উঠে এসেছে। বিক্ষিপ্ত রাজনীতি শীর্ষক তার গ্রন্থে নিজের কথা জানাচ্ছেন এভাবে : ‘পেশা না হলেও এককালে নেশা ছিল রাজনীতির। জীবনের প্রথম চার দশকই প্রায় কেটেছে সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে ও কারাগারের ভেতরে। শেষ পর্যন্ত পেটের দায়ে ছাড়তে হয়েছে সক্রিয় রাজনীতির অঙ্গন। আকাক্সিক্ষত রাজনীতিতে বিভ্রান্তি, বিপদগামিতা, নেতৃত্ব সংকট বা সুবিধাবাদিতা ইত্যাদিও এজন্য কম দায়ী নয়। কিন্তু নেশা যায়নি। এটাই নেশা বা দোষ বা গুণ, পেশা ছাড়া যায়- নেশার বেলায় নাকি তা হয় না, বা হলেও অতি কষ্ট সাপেক্ষ।…”
পেটের দায়ে সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মী না হতে পারার এই মনোকষ্ট তার আজীবন ছিল। কিন্তু তিনি দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না, সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গেই সংযুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি বাম রাজনীতির কর্ণধার কমরেড শরদিন্দু দস্তিদার, কমরেড আবদুল হক ও কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহার কমিউনিস্ট রাজনীতির সংঘ সহায়ক ছিলেন। পাশাপাশি নানাভাবে তরুণদের প্রগতিবাদী বাম রাজনীতিতে অংশ নিয়ে এবং এ বিষয়ে চর্চা ও অনুশীলনে উৎসাহ দিতেন সদা সর্বদা। বিনোদ দাশগুপ্তের রাজনীতি ও কারাগার গ্রন্থের ভূমিকায় তার প্রিয় সুহৃদ দেশ বরেণ্য কবি শামসুর রাহমান লিখেছেন: ‘বেশ ক-বছর আগে বিনোদ দাশগুপ্তকে প্রথম দেখি, প্রেস ট্রাস্ট ভবনে। তখন তিনি বাংলাদেশ টাইমস-এর একজন সাংবাদিক এবং আমি দৈনিক বাংলা’র সম্পাদক। তাকে দেখে ভালো লাগল। তার সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা ছিল। তিনি বয়সে আমার চেয়ে কয়েক বছরের ছোট। কিন্তু তিনি যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন রাজনৈতিক আদর্শের জন্য, কারাগারে যেভাবে জীবনের কয়েকটি মূল্যবান বছর কাটিয়েছেন, প্রগতিশীল রাজনীতির প্রতি, সাম্যবাদের প্রতি আস্থা বজায় রেখেছেন শত দুঃখ-কষ্ট আর বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও, সেজন্য তিনি বিশেষ শ্রদ্ধেয় আমার কাছে। তাই শীর্ণকায়, ঋজু মানুষটিকে দেখা মাত্রই একধরনের আবেগের সৃষ্টি হয়েছিল আমার মধ্যে, যে আবেগের জন্ম হয় কোনো বড় মাপের মানুষের মুখোমুখি। আমাদের সমাজে ত্যাগী, নির্লোভ, নিঃস্বার্থ লোকের এত অভাব যে বিনোদ দাশগুপ্ত কিংবা তার মতো ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা না করলে নিজের ক্ষুদ্রতাকেই বড় বেশি স্পষ্ট করে তোলা হয়। বিনোদ দাশগুপ্তের প্রবচনের রাজনীতি গ্রন্থে মনীষী আহমদ শরীফ ভূমিকায় লিখেছেন, ‘আকৈশোর মানববাদী বিনোদ দাশগুপ্ত দেশের মাটিকে ও মানুষকে ভালোবাসেন। বহু বহু বছর ধরে তিনি এখানকার নিষ্ঠ কমিউনিস্ট কর্মী ছিলেন। জীবিকাক্ষেত্রে তিনি একজন আত্মপ্রচারবিমুখ নীরব নিরভিমান সাংবাদিক, নিষ্ক্রিয় সমাজবাদী এবং নির্মোহ মানুষ হিসেবে স্বদেশের স্বকালের ক্রিয়াকর্তার অনাসক্ত দর্শক ও ভাবুক। এমন মানুষের জ্ঞান-চিন্তা প্রজ্ঞায় পরিণত হতে সময় লাগে না।
‘ইতোপূর্বে বিনোদ দাশগুপ্ত বিক্ষিপ্ত রাজনীতি নামের তীক্ষè পর্যবেক্ষণ ও চিন্তাঋদ্ধ এবং ক্ষোভ ও বেদনাগর্ভ গ্রন্থে বিভ্রাট ও দুর্নীতিদুষ্ট আর্থ-রাজনীতিক সংকটের ও সমস্যার কথা পরিব্যক্ত করেছেন। এবার তিনি দেশ-কাল-মানুষের পটে স্থাপন করে প্রবচনের ও আপ্তবাক্যের সত্য, তথ্য, তত্ত্ব ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করেছেন। মাটি ও মানুষ এবং দেশগত জীবনের সংকট ও সমস্যা সচেতন সাংবাদিক লেখক তাই প্রতিটি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বাস্তব জীবন ও সমাজ, নীতি ও নিয়ম, সম্পদ ও সমস্যা এবং মানুষের চরিত্রগত আচরণ সম্পৃক্ত করে তুলে ধরেছেন।…’
দীর্ঘকালীন অসুস্থ ও অত্যন্ত অর্থ কষ্ট এবং সুচিকিৎসার অভাবে বিনোদ দাশগুপ্ত’র মৃত্যু হয়। এ দেশের ত্যাগী বাম রাজনীতিবিদদের বেলায় এমনটাই ঘটেছে। কিন্তু তাদের যে অসীম ত্যাগ-তিতীক্ষা ও অঙ্গীকার এবং মতাদর্শিক অবস্থান তা থেকে সরে না আসার দৃঢ়তা আমাদের স্মরণ করতেই হয়। নানা দ্ব›দ্ব, সংশয় ও দোলাচলের মধ্যে বিনোদ দাশগুপ্তর শেষ সময়টা কেটেছে। তবুও তিনি ছিলেন স্বদেশ প্রেমে নিবেদিত প্রগতিবাদী মানুষদেরই একজন ন¤্র-ভদ্র ও বিনয়ী মানুষ, তথাপি কারো অনুগ্রহ ও দয়া-দক্ষিণ্যকে পায়ে ঠেলে দিয়েছেন অনায়াসে এবং রাজনীতি ও কারাগার গ্রন্থটি শেষ করেছেন অনেকটা হতাশা ব্যক্ত করে এ ভাবে: ‘উপসংহারে বলা দরকার নিজে একজন বাম কর্মী হিসেবে কারাগারেও প্রায় সর্বাংশে ছিলাম বামদের মাঝে। বাইরের রাজনৈতিক বন্ধুদেরও বেশিরভাগই ছিলেন বামঘেঁষা; কিন্তু আজ বদলে গেছে, অনেক পুরনো বন্ধুই বাম দিকে নেই। নিজেও আর বাম দিকে আছি কিনা বুঝতে পারছি না!
তা হলেও একজন ত্যাগী কমিউনিস্টের সংশয় ও হতাশা ব্যক্ত করা সত্ত্বেও তার যে অসীম দেশপ্রেম ও ত্যাগ সেই ত্যাগকে অস্বীকার করি কীভাবে? কিংবা আমরা কি এড়িয়ে যেতে পাড়ি? আমরা আশা করি তার এই ত্যাগ ও সমাজ পরিবর্তনের অঙ্গীকার আগামী প্রজন্মকে প্রগতিবাদী রাজনীতিতে উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত করবে- এ আশাবাদ অবশ্যই ব্যক্ত করা যায়।
দ্রষ্টব্য : বিনোদ দাশগুপ্তের এই ত্রয়ী সংকলন প্রকাশ করেছে স্বদেশশৈলী’র পক্ষে এ্যান্থনি পিউস গোমেজ এবং পরিবেশক : বাতিঘর : ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট। মূল্য ১,০০০ টাকা মাত্র।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়