ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড : সাবেক পরিচালক এজাজ আহমেদ মারা গেছেন

আগের সংবাদ

সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্রের মজুত : অরক্ষিত মিয়ানমার-ভারত সীমান্ত পেরিয়ে পাহাড়ে আসছে অত্যাধুনিক অস্ত্র

পরের সংবাদ

স্মরণ : সিরাজুল ফরিদের ছড়ায় ভাবনার রেখা

প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘মরার আগে যারাই মরার ভান করে/ কি লাভ তাদের জীবন সুধা পান করে/ নিজকে নিয়ে ব্যস্ত মানুষ স্বার্থপর/সর্বকালেই ওদের চোখে আর্ত পর।/ অসম্ভবের সম্ভাবনা থাকবেই/ অগ্নিগিরির সুপ্তলাভা জাগবেই।’
সিরাজুল ফরিদ মরার আগে মরার ভান করেননি। তার ছড়ায় তার জীবনচরিত খুঁজে পাই। তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। রেখে গেলেন তার সৃষ্টিকর্ম। তিনি সিরাজুল ফরিদ। শক্তিমান ছড়াকার। ছড়াই তার রাজধানী। সুকুমার রায়ের জন্ম ভূমিতে তার জন্ম। কিশোরগঞ্জ জেলায়। তাই ছড়ারঙে রঙিন হবে তার মন। এটা যেন কিশোরগঞ্জের মাটির ঘ্রাণ।
ছড়াকার চিরঘুমে ঘুমালেও জেগে থাকে তার ছড়া। ছড়াকর্মেই খুঁজে পাই তার জীবনের রেখাপথ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন সপরিবারে নিহত হলেন, তখন একটি ছড়ার সংকলন করলেন। ‘এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়’। এই ছড়া সংকলনের অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন সিরাজুল ফরিদ। তিনি এমন একজন ছড়াকার, সচেতন ছড়াকার। সময়ের সিঁড়িপথ ধরেই এগিয়ে চলেছে তার ছড়া। তিনিও হয়ে ওঠেছেন ছড়াকার সিরাজুল ফরিদ।
ছড়ার ভেতরেই যখন তার ধ্যান জ্ঞান। ছড়ারঙে রঙিন তার মন। এই ছড়াকারের সঙ্গে আমার পরিচয় দীর্ঘদিনের। সেই সুখ-দুঃখের আলাপ আজ নয়, অন্যদিন করবো। শিশু আদলে আলোর হাতছানি অনুভব করেছি তার জীবন চলায়। চলমান ছন্দ পাগল মানুষ ছিলেন তিনি। ছন্দের তালে তালে সৃষ্টি করেছেন ছড়া। তার লেখায় ছড়া হয়ে ওঠেছে প্রতিবাদের সুর। যে সুর আমাদেরকে ভাবাবে। জাগাবে। মনে করিয়ে দিয়ে সময়ের সংগত অসংগত ইতিহাস। সে আমাদের প্রিয় মানুষ সিরাজুল ফরিদ। এই প্রিয় মানুষটি ছড়া পড়ে আমার মনে হয়েছে, ছড়া যেন সময়ের কথা বলে। ছড়া যেন ইতিহাসের অংশ। তাই আমি সিরাজুল ফরিদ ভাইকে বলতাম-
সিরাজুল ফরিদের ছড়া পড়ে ভাবি
ছড়া হলো তলোয়ার দোর খোলা চাবি।
সিরাজুল ফরিদ ভাই হাসতেন। তার হাসির ভেতর শিশুমুখ ভেসে উঠত। ছড়ার চাবি ধরিয়ে দিতেন আমাদের হাতে। আমরা সেই চাবি দিয়ে দোর খুলে ঘরের ভেতরে যেতে যাই। সেই চাবি দিয়েই দোর খুলে চলে যাই ঘরের বাইরে। দেখা মিলে যায় মুক্ত আকাশ। এই চাবি হয়ে ওঠে মুক্তির পথ। মুক্তির দিশারি সিরাজুল ফরিদ।
যার ছড়া পাঠে আমরা পাই সমেয়ের ঘ্রাণ। হাসি ও কান্নার সুর। এমন ছড়াকার সিরাজুল ফরিদ। সময়কে ছন্দতালে খেলতে ভালোবাসতেন। তার ছড়ার বইয়ের নাম দেখলেই আমরা বুঝতে পারি তিনি কোন ধরনের ছড়াকার। যেমন- লাগাম টেনে ধর, লড়াই গণতন্ত্রের, বৈরী সময়, ফটাটিং ফটাটিং ফট, লিমেরিক, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ছড়া, আলোর মিছিল, পায়রা নাচে সূর্য হাসে, বুকে ভেতর আগুন, নির্বাচিত হাজার ছড়া- ১ ও ২। এই বইগুলোর নাম বলে দেয় সিরাজুল ফরিদ কত বড় শক্তিমান ছড়াকার।
ছড়ার ভুবনে তিনি হলেন দোর খোলা চাবি। তিনি যেমন সময়ের ছড়া লিখেছেন। তেমন সময়ের ছড়াকারদেরও ভালোবেসেছেন। যে ছড়া লিখতে জানে। তাকেও ভালোবাসতেন তিনি। ছড়াকার হয়ে ওঠে সিরাজুল ফরিদের প্রিয় মানুষ। তিনি ছড়া লিখতে জানেন বলেই ভালোবাসতেন ছড়াকারদের। ছড়ার রাজ্যে হেঁটেছেন। কোনো ছড়াকার বিপদে পড়লে তার পাশে দাঁড়াতেন। করতেন সহযোগিতা। ছড়াকারকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিতেন সিরাজুল ফরিদ।
তিনি কী পেলেন। কী পেলেন না। তা নিয়ে তিনি ভাবতেন না। পরোপকার যে তার ব্রত ধরা দিয়েছে তার কর্মে। একজন ছড়াকার আরও ভালো ছড়াকার হোক এটাই ছিল, সিরাজুল ফরিদের চাওয়া। তিনি অন্যের প্রতি দয়াশীল ছিলেন। বিশেষ করে যারা লেখালেখি করে। তাদের লেখালেখি আরও বেগমান করতে সিরাজুল ফরিদ তা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। নিজেও ছড়া লেখতেন আপন মনে। সময়ের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে পঞ্চক নামের পাঁচ লাইনের লেখা লিখেছেন। বই আকারে প্রকাশ করেছেন। লিখেছেন সময়ের ছড়া।
‘মন্ত্রি আইছে গেট করো
চান্দা ধরার রেট করো
নইলে যে এর পরিণাম
ভুলিয়ে দিবে হরিনাম।’
সিরাজুল ফরিদের মুখে শোনা ছড়া আমার কানের কাছে আজও বাজে। আমার মনে হয় সিরাজুল ফরিদ চিরঘুমে ঘুমালেও ছড়া জেগে আছে সময়ের সাক্ষী হয়ে।
‘লাগাম ছাড়া ছুটছে ঘোড়া উল্কা তেজি রূপ যে/ ঘোড়ার লাগাম ধরতে হবে থাকবো না আর চুপ যে।/ আহা! সে কি কদম চলা/ ঊর্ধ্বমুখী বাড়িয়ে গলা/ সবুজ গাঁয়ের পথে ঘাটে/ ঘোড়া কেবল দু’পায় হাঁটে/ ঘোড়ার চোখে গোলক ধাঁ-ধা/ নিজের পায়ে মাখিয়ে কাদা চেঁচায় ঘোড়া খুব যে/ ঘোড়ার লাগাম ধরতে হবে থাকবো না আর চুপ যে।/ ঘোড়ার লাগাম ধরবে যারা/ এক সাথে সব সামনে দাঁড়া।’ সিরাজুল ফরিদের ছড়া সময়ের সিঁড়িপথে আমাদের সামনে দাঁড় করে দেবে। আশা করতেই পারি সিরাজুল ফরিদ না ফেরা দেশে গেলেও পাঠচক্রে টিকে থাকবে তার ছড়া।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়