বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের : গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বিএনপির কারণেই বারবার হোঁচট খায়

আগের সংবাদ

আত্রাই উপজেলা মিলনায়তনের পাশে জলাবদ্ধতা

পরের সংবাদ

যুদ্ধের ভেলা

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তারেক। বয়স আনুমানিক ১৪-১৫। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। তবে তার মা যখন যেভাবে যে কাজ করতে বলে, সেই কাজ করে ফেলে। দেশে যুদ্ধ শুরু হয়েছে কয়েক মাস আগে। এখান-ওখান হতে যুদ্ধের খবর আসে। কোন এলাকায় কী ঘটছে। কতশত জন মারা যাচ্ছে। কতশত বাড়িঘর পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী এবং রাজাকাররা। তারেকের বাপও যুদ্ধে গেছেন। ওদের গ্রামের আরও অনেকেই গেছেন।
তারেকদের গ্রামে বা এর আশপাশে এখনো মিলিটারি বাহিনী আসতে পারেনি। এর কারণ, তারা পদ্মার একটা চরে বাস করে। সেই চরে আট-দশ ঘরের বাস। সেই চরে যেতে হলে ছোট একটা নদী পার হতে হয়। তাই নদী পার হয়ে মিলিটারিরা যাওয়ার সাহস দেখাতে পারেনি। নদীতে বেশ কয়েকটা নৌকা পারাপারের জন্য থাকত। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেটাও বন্ধ। নৌকাগুলো ঘাটে বাঁধা আছে। কেউ তেমন চালায় না।
একদিন দুপুর বেলা, তারেক কলাগাছের ভেলা করে নদীতে একা একা ঘুরছিল। সেই সময় তিনজন মিলিটারিসহ হারু রাজাকার নদীপাড় দিয়ে যাচ্ছিল। তারেককে দেখে থমকে দাঁড়াল মিলিটারি বাহিনী। তারেককে দেখিয়ে হারু রাজাকারকে একজন মিলিটারি বলল- ওই ব্যাটাকে ডাক দে। আমরা নদীর ওপারে যাব।
– কিন্তু স্যার, ওই কলাগাছের ভেলাতে চড়ে এতজন তো যাও যাবে না। হারু রাজাকার বলে উঠল।
– আমরা দুজন দুজন করে পার হবো। তারপর আসার সময় ওই নৌকাগুলোতে তুই চালিয়ে নিয়ে আসবি। তুই কী চালাতে পারবি না?
– জি, স্যার। পারব।
– তুই তো বলেছিস নদীর ওপারে বেশ কয়েকজন মুক্তিফৌজে গেছে। মিলিটারিদের একজন বলল।
– জি, স্যার। ওই তারেক পাগলার বাপও মুক্তিফৌজে গেছে।
– আমরা ওপার হতে আসার সময় ওকেও শেষ করে দেব। কমান্ডার বলল।
– স্যার, ও হচ্ছে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। একটু কথা বলে বেশি। সহজ-সরল ছেলে। ওকে মারার দরকার নেই। হারু রাজাকার হলেও কিছুটা মায়া দেখিয়ে কমান্ডারকে বলল।
– ঠিক আছে। ওকে মারব না।
– তাহলে ওকে কি ডাকব, স্যার?
– হ্যাঁ, ডাক দে।
কমান্ডারের হুকুমে তারেককে হাত ইশারায় ডাক দিল হারু রাজাকার।
তারেক ভেলা নিয়ে থমকে দাঁড়াল মাঝ নদীতে। হারু রাজাকারসহ মিলিটারিদের দেখে তারেক বুঝতে পারল- তারা যুদ্ধ করতে এসেছে। নদীর এপারে নিয়ে এলে তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেবে। এমনকি তাদের মেরেও ফেলতে পারে। হারু রাজাকারের কথা আগেই সবকিছু বলে রেখেছিল তার মা। সেগুলো তার মনে পড়ছে। সে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হলেও তার মায়ের কথা সবকিছুই মনে থাকে তার।
তারেককে নদীর মাঝখানে স্থির থাকতে দেখে হারু রাজাকার কুত্তার মতো চিৎকার দিয়ে ডাকে।
– এই ত্যারকা এদিকে আয়। আমাদের নদীর ওপারে রেখে আয়। না হলে তোকে গুলি করে মেরে ফেলব।
তারেক তার কথায় মনে মনে ভাবল, এই সুযোগে এদেরকে নদীতে ডুবিয়ে মারতে পারব।
আর কোনোকিছু না ভেবে তারেক ভেলা চালিয়ে ওদের কাছে গেল। তারপর তারেক বলল- চড়েন আপনারা।
– তুই দুজন দুজন করে স্যারদের রেখে আয়। হারু রাজাকার বলল।
– সবাই চড়ে বসেন। ডুববে না। দেখছেন না, কত বড় বড় ক্যালার গাছ। তারেক বলে উঠল।
হারু রাজাকার কিছুটা ইতস্তত করলেও পরে সবাই তারেকের ভেলায় চড়ে বসল। তারেক ভেলা ধরে ঠেলতে ঠেলতে সাঁতরে যাচ্ছে। হারু রাজাকারসহ মিলিটারিরা দাঁড়িয়ে আছে। ভেলা টলমল করছে। মিলিটারিদের বুক ভয়ে দুরুদুরু কাঁপছে। হারু রাজাকারও ভয় পাচ্ছে। যদি ডুবে যায়। সেও তো সাঁতার কাটতে জানে না।
মাঝ নদীতে পানির বেশ গভীরতা। কম করে হলেও ১৫-২০ ফুট তো হবেই। মাঝ নদীতে ভেলা যেতেই তারেক লাফ দিয়ে চড়তেই ভেলা ডুবে গেল। হারু রাজাকারসহ মিলিটারিরা হাবুডুবু খেতে খেতে পানির নিচে তলাতে লাগল। এদিকে তারেক ডুব দিয়ে মাঝ নদী পার হয়ে গলা পানিতে দাঁড়াল। তারেক তাকিয়ে দেখে ভেলা ভাসতে ভাসতে বেশ দূরে চলে গেছে। হারু রাজাকারসহ মিলিটারিদের দেখা যাচ্ছে না। সবাই ডুবে মারা গেছে।
তারেক দৌড়ে গিয়ে তার মাকে সবকিছু জানাল। তারেকের বুদ্ধিমত্তার কথা এলাকায় জানাজানি হয়ে গেল। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়েও তারেক বুদ্ধিমানের পরিচয় দিল। বাঁচিয়ে দিল তার মায়াময় ছোট্ট গ্রামখানিকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়