বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘সবুজ মানব প্রাচীর’ তৈরি করল জিএলটিএস

আগের সংবাদ

ভোটের হাওয়ায় জোটের মিশন

পরের সংবাদ

জেলা কৃষি বিভাগের ধারণা : মেহেরপুরে আমের ব্যবসা ছাড়াবে শতকোটি টাকা

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** জেলায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান ** উৎপাদন হবে ৩৩ হাজার টন ** আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি গাছে সর্বোচ্চ গুটি ধরেছে **
মর্তুজা ফারুক রুপক, মেহেরপুর থেকে : আমের জেলা খ্যাত মেহেরপুরে এবার আমের রেকর্ড উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ৯০ শতাংশ গাছে এবার মুকুল এসেছিল। ফলে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি গাছেই সর্বেচ্চ গুটি ধরেছে। মুজিবনগর আ¤্রকাননসহ জেলার আম বাগানগুলোতে গাছে গাছে আমের গুটিতে ভরে গেছে। একইসঙ্গে বেড়েছে আম চাষিদের ব্যস্ততা।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে। স্বাদের দিক থেকে মেহেরপুরের আমের সুনাম জগৎজুড়ে। মেহেরপুরের আম সুস্বাদু হওয়ায় এ জেলার আমের চাহিদা দেশের বাইরে ইউরোপ মহাদেশেও তার সুখ্যাতি ছড়িয়েছে। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমের বাগানও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা গেছে, মেহেরপুরের মুজিবনগরে ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি মুজিবনগর আ¤্রকাননে ১২০০ আমগাছ আছে। ওই এক বাগানে ১২০০ আমগাছ ১২০০ জাতের। জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সব জাতের আমেরই চাষ হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর কৃষিজমিতে তৈরি করা হচ্ছে আমের বাগান। কৃষি বিভাগ আশা করছে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে থাকা আম বাগান থেকে ৩৩ হাজার টন আম উৎপাদন হবে। যা থেকে ১৩২ কোটি টাকার বেচা-কেনা হতে পারে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের।
এদিকে আম চাষিদের মতে- অনুকূল পরিবেশের কারণে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ কারণে এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। আমচাষি নূর হোসেন ভোরের কাগজকে জানান, এ বছর তিনি চারটি আমবাগান কিনেছেন প্রায় ৮ লাখ টাকায়। প্রতিটি বাগানের গাছে গাছে আমের গুটিতে ভরে গেছে। তিনি আশা করছেন বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ১৬-১৭ লাখ টাকার বেচা কেনা হবে।
আমচাষি বজলুর রহমান জানান, কীটনাশকসহ আম সংগ্রহ শ্রমিকের মুজুরি চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই তুলনায় আমের দাম বাড়েনি। তাছাড়া আম বাগান ব্যবসা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়াতে তিনি বাগান কেনা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে ভরা মৌসুমে বাগান থেকে আম কিনে বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করেন। তাতে ঝুঁকি কম বলে জানান।
তবে গুটি টিকিয়ে রাখাও এখন চ্যালেঞ্জ বলে জানান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। তিনি জানান সাধারণত আমগাছে প্রতি মুকুলে এক হাজার থেকে ৬ হাজার পর্যন্ত পুরুষ ও স্ত্রী ফুল থাকে। তার মধ্যে প্রাথমিকভাবে প্রতি থোকায় জাতভেদে ১-৩০টি আমের গুটি ধরতে দেখা যায়। গুটি আসার ২৫-৫০ দিনের মধ্যে প্রতি থোকায় মাত্র ১-২টি গুটি থাকে। বাকি গুটি প্রাকৃতিক বা অভ্যন্তরীণ কারণে ঝরে যায়। তবে কোনো কোনো মুকুলে কদাচিৎ চার থেকে পাঁচটি আম ধরতে দেখা যায়।
এ ক্ষেত্রে আমের আকার ছোট হয়। অতিরিক্ত গুটি ঝরে না পড়লে আমের আকার ছোট হয় এবং আমের গুণগত মান ও ফলন কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি মুকুলে একটি করে গুটি থাকলে সে বছর আমের বাম্পার ফলন হয়। তবে প্রতি মুকুলে আমের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফুল ফোটার ১০ ও ২০ দিন পর দুইবার ১০ লিটার পানিতে ৬ গ্রাম হারে বোরিক এসিড স্প্রে করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সব ফুল ফোটা অবস্খায় জিবেরেলিক এসিড প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম হারে স্প্রে করলে আমের গুটি ঝরা কমে যায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শঙ্কর কুমার মজুমদার ভোরের কাগজকে জানান- জেলায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এখানকার মাটির গুণেই হিমসাগর, লেংড়া, বোম্বাই, তিলি বোম্বাই ইত্যাদি জাতের আম খুবই সুস্বাদু। বিশেষ করে নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাতি, আশ্বিনা জাতের বাগান বেশি থাকলেও গবেষণাকৃত বারি-৩, বারি-৪ জাতের বাগান তৈরির ক্ষেত্রেও আগ্রহী হয়ে উঠছে অনেকে। সেই সঙ্গে নতুন নতুন বাগানগুলো তৈরি হচ্ছে বনেদি ও হাইব্রিড জাতের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়