প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
মেয়েটি তখন মাত্র শৈশব পেরিয়ে সদ্য কৈশোরে পা দিয়েছে। সে অনেক বছর আগের কথা! চিঠিপত্র যুগের কথা! নির্ভেজাল ভালোবাসার সময়ের কথা! আত্মীক টানের কথা!
নাহ! এখনকার মতো যান্ত্রিক ছিল না তখনকার ভালোবাসা। মেলামেশায় ছিল না কোনো কৃত্রিমতা।
ছেলেটির এবং মেয়েটির দেখা হতো অনেক দিন পর একদিন। একটা চিঠি আসতে সময় লাগত ৬-৭ দিন। সেখানে লেখা থাকত কবে, কখন, কোথায় দেখা হবে। সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করত একটা চিঠির জন্য। আহ! যখন চিঠিটি হাতে পাওয়া হতো তখনকার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সেই অদ্ভুত অনুভূতি এখন আর নেই মানুষের ভেতরে। সময় পেলেই লুকিয়ে লুকিয়ে চিঠি পড়ত মেয়েটি। কখনো বাথরুমে গিয়ে কখনো আবার বইয়ের ভেতর নিয়ে চিঠি পড়া হতো। রাতে চিঠি না পড়লে ঘুম আসত না! সময় হওয়ার আগেই নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে হাজির হতো মেয়েটি। দেখা যেত সেও তাই করেছে। তাই, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দুজন এসে হাজির হতো। তাও আবার অল্প সময়ের জন্য। ভীরু মনে, ভীরু পায়ে পথ চলত। পাছে কেউ দেখে ফেলে! কী অদ্ভুত! উত্তেজনায় হাত-পা কাঁপত। গলা শুকিয়ে যেত। চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারত না কেউ। সেই ক্ষণিকের দেখা হওয়ার মধ্যেও যে অনুভূতি ছিল, ভালোলাগা ছিল, ভালোবাসা ছিল, ভালোবাসা-শ্রদ্ধায় সিক্ত হওয়া চোখে জল ছিল; সেই অদ্ভুত অনুভূতির শিহরণ জাগানো ভালোবাসা এখন আর অনুভূত হয় না বর্তমান যুগের প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে।
একটা চিঠি পাওয়ার যে আনন্দ-অনুভূতি- তা কি এই সময়ের প্রেমিক-প্রেমিকারা উপলব্ধি করতে পারে? সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত এরা। নববর্ষ, ঈদ ও জন্মদিনে ডাকে আসত কার্ড, ডায়েরি, বই। সেই খামে ভরা থাকত গোলাপের পাপড়ি। কখনো বকুল, কখনো বা বেলি ফুল।
তাদের যখন দেখা হতো দুজনের ভেতরেই ভয় কাজ করত- পাছে পরিচিত কেউ দেখে ফেলে। তাই বুদ্ধি করে মেয়েটি পত্রিকা নিয়ে যেত। পাশাপাশি বসে পত্রিকায় চোখ রেখে ফিসফিসিয়ে কথা বলত। কত কথা জমা ছিল কিন্তু দেখা হলে সব কথা ভুলে যেত তারা। আবোল-তাবোল বকে সময় শেষ হয়ে যেত। বিদায়ের শেষ সময়ে এসে সব বলতে চাইত। দুজনেরই একই অবস্থা। মেয়েটি রিকশায় উঠে বসত, ছেলেটি রিকশা ধরে নিচে দাঁড়িয়ে থাকত। কোনো কথা হতো না- শুধু দুজন নিচের দিকে তাকিয়ে থাকত। দুজনের চোখ ভরা পানি থাকত। কয়েক ফোটা ভালোবাসার জল গড়িয়ে পড়ত জুতার ওপর। কখনো মাটিতে। রিকশাচালক মামা বুঝতে পারতেন দুটি মনের ভালোবাসার গভীরতা। তাই হয়তো কোনো তাড়া দিতেন না।
তাদের সব কথা হতো চিঠিতে। আগামী দিনের কত স্বপ্ন, কত কথা, অনাগত সংসার নিয়ে কত পরিকল্পনা। সব মিলিয়ে চমৎকার স্বপ্নে বিভোর থাকত দুজন অবুঝ স্বপ্নচারী প্রেমিক যুগল।
তারপর একদিন সব এলোমেলো হয়ে গেল। মেয়েটির ঠিকানায় আর সেই ছেলেটির চিঠি আসে না। মেয়েটি শুধু ছেলেটির ঠিকানায় চিঠি পোস্ট করেই যায়। কিন্তু ছেলেটির হাতে সেগুলো পৌঁছায় না। চিঠিগুলো যে কার হাতে যেত সেটা আজও রহস্য হয়েই রয়ে গেল।
মেয়েটি এখন স্বপ্ন ভাঙা আহত পাখি। সে উড়ে যেতে চায় তার দুরন্ত কৈশোরে। তাকে পিছু ডাকে তার অষ্টাদশী বসন্ত।
শেখ শামীমা নাসরীন পলি: লালবাগ, ঢাকা
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।