এশিয়ান ইনডোর অ্যাথ. : স্বর্ণ পদক জিতে ইমরানুরের ইতিহাস

আগের সংবাদ

কোস্ট গার্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : উপকূলবাসীর প্রকৃত বন্ধু হোন

পরের সংবাদ

নীল শাড়ির মেয়েটি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অ্যালার্মের শব্দ শুনে শুভর ঘুম ভাঙল। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৮টা। তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে উঠে পড়ল সে। অন্যদিনের মতো আজ কোনো ক্লাস-পরীক্ষা নেই। তবুও ডিপার্টমেন্টের নবীনবরণ অনুষ্ঠানের জন্য যেতে হবে। আলমারি খুলে বাবার দেয়া পাঞ্জাবিটা দেখতে পেল, এবারের জন্মদিনে বাবার দেয়া শেষ উপহার। কিছুদিন আগেই হৃদরোগে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। পাঞ্জাবিটা পরে বাবার কথা খুব মনে পড়ছে।
– মা, আমি ক্যাম্পাসে যাচ্ছি, আর একটু দেরি করলেই বাস মিস হয়ে যাবে। তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল শুভ।
-সাবধানে যাবি। বললেন মা।
শুভ বাসা থেকে বের হয়ে রিকশা করে বাসস্ট্যান্ডে গেল। বাসে ওঠার পর অন্য কোথাও সিট না পেয়ে নীল শাড়ি পরা এক অপরিচিত মেয়ের পাশে বসল। এর আগে কখনো মেয়েটিকে দেখেনি। শুভ ভাবল একবার, মেয়েটির সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। আবার ভাবল, যদি কিছু মনে করে? তারপর নিজেই নিজেকে বোঝাল, এত কিছু ভাবলে মেয়েটির সঙ্গে আর কথাই বলা হবে না। এবার কিছু জিজ্ঞেস করা যাক।
– এক্সকিউজ মি, আপু!
– আমাকে বলছেন ভাইয়া?
– আপনি কি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ভর্তি হয়েছেন?
– জি¦ ভাইয়া, নিউ ফাস্ট ইয়ার।
– কোন ডিপার্টমেন্ট আপু?
– জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্ট্যাডিজ।
– আমি গণিত বিভাগ। ১৯-২০ সেশন, মাস্টার্স।
ক্যাম্পাসে আসার পর বাস থেকে নামার সময় শুভ মেয়েটির দিকে একবার তাকিয়ে দেখল, লম্বা হালকা-পাতলা গড়নের মেয়েটি দেখতে কী মায়াবী! তখনই মেয়েটি কাছে এসে বলল- ভাইয়া, আপনি আমাকে একটা হেল্প করতে পারবেন?
– অবশ্যই, আপনার জন্য কী করতে পারি?
– ভাইয়া আজকে আমার ফোনটা ভুল করে বাসায় রেখে এসেছি, ১ মিনিট ফোন করতে পারি?
– অবশ্যই। বলেই শুভ ফোনটা বের করে দিল। কথা বলা শেষে শুভকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেল মেয়েটি।
সবুজ পাহাড়ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি। নবীনদের পদচারণায় রঙিন সাজে সজ্জিত গোটা ক্যাম্পাস। শুভ প্রোগ্রাম শেষ করে সন্ধায় বাসায় ফিরল। ফেরার পথে মেয়েটির সঙ্গে আর দেখা হয়নি। রাতের বেলা বিছানায় শুয়ে ভাবল, এই প্রথম কোনো মেয়েকে এত ভালো লেগেছে। কিন্তু মেয়েটির নামটাই জানা হয়নি! কখনো আবার দেখা হলে মেয়েটির কাছ থেকে শুনে নেয়া যাবে- এই ভেবে ঘুমিয়ে পড়ল সে।
এক মাস হয়ে গেল মেয়েটির সঙ্গে কোথাও আর দেখা হয়নি। এই দিকে শুভর মনটাও কেমন যেন মেয়েটির জন্য ছটফট করছে।
শুভ মেয়েটির কথা মাথা থেকে বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মন দিল। আর কিছুদিন পর সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে বেলকনিতে দেখল কাঠগোলাপ ফুটেছে। এই কাঠগোলাপ মেয়েটির লম্বা চুলে বেশ মানাত। ধুত্তরি! এত ভেবেও কোনো লাভ হবে কি? যার সঙ্গে আর দেখাই হলো না।
এক কাপ চা খেয়ে শুভ এবার মন দিয়ে পড়াশোনা করতে লাগল।
সেদিন ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফিরে সন্ধ্যার পর নিচে চায়ের টং দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বের হলো শুভ। হঠাৎ দূর থেকে দেখতে পেল কোনো একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। একদম সেই মেয়েটির মতো দেখতে।
চায়ের বিলটা পরিশোধ করে শুভ দৌড়ে গিয়ে দেখল, এই সেই মেয়ে যার সঙ্গে ৬ মাস আগে বাসে পরিচয় হয়েছিল। তাকে দেখেই মুচকি হাসল মেয়েটি। শুভ প্রথমেই তার নাম জানতে চাইল। মেয়েটি ভ্রæ নাচিয়ে বলল- অনিকা।
– বাহ্ কী সুন্দর মিষ্টি নাম। তা, এই দিকে আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
– ভাইয়া, শপিং করে বাসায় ফিরছিলাম।
– আপনার বাসা কি এখানে?
– শান্তিনিকেতন, সি ব্লক।
– আমার বাসা থেকে মাত্র ৫ মিনিট।
অনিকা আর শুভ সামনে হাঁটতে থাকল। একই শহরে থাকা সত্ত্বেও ছয় মাস পর অপ্রত্যাশিতভাবে দুজনের আবার দেখা হয়ে গেল। অনিকাকে পৌঁছে দিয়ে শুভ বাসায় ফিরে মায়ের সঙ্গে রাতের খাবার খেল। শুভর মনটা আজ ভীষণ ফুরফুরে, কতদিন পর অনিকার সঙ্গে দেখা হলো।
পরদিন অনিকার বাসার সামনের গলিতে অপেক্ষা করছে শুভ। অনিকা বের হওয়া মাত্রই শুভ এগিয়ে এসে বলল, তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। চলো আজকে শাটল ট্রেনে করে ক্যাম্পাসে যাব। এটা শুনে অনিকা একদম রাজি হয়ে গেল। শাটল ট্রেনে উঠতে পেরে অনিকা ভীষণ খুশি।
চারপাশে সবুজের সমারোহ গাছপালা আর পাহাড়-পর্বত। কী মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য! একদিন অনিকার স্বপ্ন ছিল এই শাটল ট্রেনে করেই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। ক্লাস শেষে করে দুজন একসঙ্গে রওনা দিল বিকালের বাসে। এই কয়েকদিনে দুজনের মাঝে ভালো একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠল।
আগামীকাল অনিকার জন্মদিন। একটা প্ল্যান মাথায় এলো, অনিকাকে কিছু না জানিয়ে একটা সারপ্রাইজ দিবে। শুভ বিকালে অনিকাকে ফোন দিয়ে লাভ পয়েন্ট কফি হাউসে আসতে বলল। শুভ ফুলের দোকানে গিয়ে একগুচ্ছ গোলাপ, চকলেট আর লাল শাড়ি কিনে লাভ পয়েন্টে গিয়ে ওয়েটারকে বলে অনিকার পছন্দের খাবার অর্ডার করল। অনিকা কফি হাউসের দোতলায় গিয়ে এক নিরিবিলি জায়গায় বসল।
কিছুক্ষণ পর শুভ এসে বলল- শুভ জন্মদিন অনিকা! শুভকামনা সব সময়।
অনিকা সত্যি অবাক হলো। শুভকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাল সে। এরপর বাসায় ফিরে গোলাপগুলো বেডের পাশে ফুলদানিতে রেখে দিল অনিকা। লাল র‌্যাপিং কাগজে মোড়ানো গিফট খুলে দেখতে পেল সুন্দর একটা লাল শাড়ি আর কিছু চকলেট। অনিকার শাড়িটা ভীষণ পছন্দ হয়েছে। ভালোবাসা দিবসে পরবে বলে শাড়িটা যতœ করে আলমারিতে রেখে দিল।
বাসায় ফেরার বেশ কিছুক্ষণ পর শুভ দেখল অনিকার এসএমএস এসেছে। তাতে লেখা- গিফটগুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ!
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। সেদিন আবার শুভর জন্মদিন। শুভ প্ল্যান করল ওই দিন অনিকাকে মনের সব কথা বলে দেবে- শুভ অনিকাকে খুব ভালোবাসে, সারাজীবন তাকে পাশে রাখতে চায়।
১৪ ফেব্রুয়ারি। শুভ একগুচ্ছ গোলাপ আর কালার পেপারে আই লাভ ইউ লিখে অনিকার বাসার দরজায় এসে কলিংবেল বাজিয়ে অপেক্ষা করছে। একটু পর এক ছোট্ট বাচ্চা এসে বলল- কাকে চাও তুমি? শুভ বাচ্চাটাকে কিছু চকলেট দিয়ে বলল- অনিকাকে ডেকে দাও। বাচ্চাটি বলল- আম্মু তো বাসায় নেই। বাবার সঙ্গে বেড়াতে গেছে। শুভ এটা শুনেই বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেল। তারপর বিরহী মন আর অশ্রæসিক্ত নয়নে কোনো এক অজানা পথে একা হাঁটতে থাকল।
তানজিনা আক্তার জেবিন: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়