স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ায় ২২ মাসের শিশুকে আছাড় দিয়ে হত্যা

আগের সংবাদ

সমাবেশে ওবায়দুল কাদের : হিরো আলমকে প্রার্থী রেছেন ফখরুলরা

পরের সংবাদ

মাছ ধান সবজি চাষে সচ্ছলতা ফিরেছে ডুমুরিয়াবাসীর

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া (খুলনা) থেকে : দেশের দক্ষিণে অবস্থিত খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার মানুষ এক সময় চরমপন্থি ও সন্ত্রাসীদের ভয়ে তটস্থ থাকলেও এখন তারা ব্যস্ত মাছ চাষ ও ফসল উৎপাদন নিয়ে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে এ উপজেলার উৎপাদিত মাছ, শাক-সবজি ও ধানসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য জেলা সদর খুলনা ও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষে এ উপজেলার সুনাম দেশের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। ডুমুরিয়া উপজেলার শত শত নারী-পুরুষ বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ, গলদা ও বাগদা চিংড়ি চাষ এবং শাক-সবজি ও ধান উৎপাদন করে এখন স্বাবলম্বী।
খুলনা জেলা শহরের গা ঘেঁষে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ডুমুরিয়া উপজেলার অবস্থিত। দেশের অন্যতম বৃহৎ এ উপজেলার আয়তন ৪৫৪ দশমিক ২৩ বর্গ কিলোমিটার। ইউনিয়নের সংখ্যা ১৪। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী লোকসংখ্যা ৩ লাখ ৫ হাজার ৬৭৫ জন।
জানা গেছে- মাত্র এক যুগ আগেও এ উপজেলা ছিল চরমপন্থি-সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। চরমপন্থি সংগঠন নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির মৃণাল বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল এ উপজেলার অধিকাংশ মৎস্য ও চিংড়ি ঘের। সাধারণ মানুষ তাদের ঘের ও জমিতে মাছ চাষ ও কৃষিকাজ করতে পারত না। কিন্তু ২০০৪ সালে মৃণাল বাহিনী প্রধান ভারতে নিহত এবং তার বাহিনীর অধিকাংশ গ্রেপ্তার ও নিহত হওয়ায় এ উপজেলার চিত্র পাল্টে যায়। এ অঞ্চলের মানুষ এখন মাছ ধান সবজি চাষে আর্থিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ নিজেদের ঘের ও জমিতে মাছ ও ফসল ফলাতে পারছে।
জানা যায়- মৎস্য সম্পদের অপার সম্ভাবনা রয়েছে ডুমুরিয়ায়। এ উপজেলায় ছোট-বড় বিভিন্ন জলাধার মিলিয়ে প্রায় ১১ হাজার ১৫৪ হেক্টর জমিতে গলদা চিংড়ি এবং ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হচ্ছে। গলদা চিংড়ির ঘেরগুলোতে গলদার পাশাপাশি রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন সাদা মাছ ও ঘেরের পাড়ে সবজি এবং ধান উৎপাদন হচ্ছে। লবণাক্ত অঞ্চলের বাগদা চিংড়ির ঘেরগুলোতে টেংরা, ভেটকি, তেলাপিয়া, কাঁকড়া এবং ঘেরের পাড়ে সবজি, ধান ইত্যাদি ফসলও উৎপাদিত হচ্ছে। মাছ, চিংড়ি, ধান ও শাক-সবজি চাষ করে এ উপজেলার শত শত নারী-পুরুষ স্বাবলম্বী হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলার সাহস গ্রামের নারী চিংড়ি চাষি রীতা চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, আমার অসুস্থ স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে খুব অভাবের মধ্যে ছিলাম। পরে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দিকের পরামর্শে ২৫ জনের একটি দল গঠন করি। স্যার আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। চিংড়ি চাষ শিখিয়েছেন। বর্তমানে চিংড়ি চাষ করে ভালো আছি। গত বছর আমি ৭০ শতাংশ জায়গায় চিংড়ি চাষ করে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা লাভ করেছি। একই কথা বলেন ঘোনা মাদারডাঙ্গা গ্রামের পুরস্কারপ্রাপ্ত নারী চিংড়ি চাষি সুনীতি মল্লিক।
তিনি জানান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে ২৫ জন নারীকে একত্রিত করে একটি ক্লাস্টার গঠন করে চিংড়ি চাষ শুরু করেছেন। ভাণ্ডারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোপাল চন্দ্র দে বলেন, মৎস্য বিভাগের কর্মকাণ্ডে আমার ইউনিয়নের চাষিরা অত্যন্ত খুশি এবং আনন্দিত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নারয়ণ চন্দ্র ভোরের কাগজকে বলেন- মৎস্য খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ডুমুরিয়া উপজেলায় মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুঁচিয়া চাষকে জনপ্রিয় করার জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। উন্মুক্ত জলাশয়গুলোতেও প্রতি বছর দেশি প্রজাতির মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছাড়া হচ্ছে, যা আহরণ করে দরিদ্র মানুষ তাদের পুষ্টি মিটান এবং বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এতে ডুমুরিয়া উপজেলার মাছ উৎপাদনের ভূমিকা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়