কেরানীগঞ্জের দগ্ধ সেই গৃহবধূর মৃত্যু

আগের সংবাদ

অনির্বাচিত সরকার এলে সংবিধান অশুদ্ধ হবে : অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

ভীষণ দুষ্টু

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খাবার টেবিলে ডিমের কোপ্তা। ডিম ভাপা করে মজাদার পদটি করা হয়। রিদিমা এটি খুব পছন্দ করে। সে হাত বাড়িয়ে ঢাকনা উল্টাতে গেল। তার মা বলল, একদম না। তোমাকে একই কথা কতবার বলতে হবে।
রিদিমা এবার আদুরে গলায় বলল, বলো না মা, কী রেঁধেছো?
কিছুই না। তুমি আগে শাক আর সবজি দিয়ে খাও।
রিদিমা শাক-সবজি খুব একটা খেতে চায় না। তবে মাছ, মাংস, ডিম খেতে খুব পছন্দ করে। তাই তার মা আমিষের পদগুলো ঢেকে রাখে। নতুন নিয়ম। শাক-সবজি খাওয়া শেষ হলে ঢাকনা খোলা হয়।
রিদিমা চুপচাপ খাওয়া শুরু করল। শাক-সবজির পর্ব শেষ হতেই ঢাকনা খুলল। ডিমের কোপ্তা। তার চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক। তবে মুখে প্রকাশ করল না। তার পাতে ডিমের কোপ্তা তুলে দেয়া হলো। সে মজা করে খেতে থাকল।
হঠাৎ সে বলল, মা তোমার ‘কিছুই না’ তো অনেক মজা হয়েছে। আমাকে আরেকটু দেবে?
বলার ধরনে তার মা পর্যন্ত হেসে ফেলল। আর আমি হাসি চাপতে গিয়ে ঘোৎ জাতীয় একটা শব্দ করে ফেললাম। তাতে মা-মেয়ের হাসি আরো বাড়ল।

আরেক দিনের কথা।
ছুটির দিন। দুপুরবেলা। রিদিমা বারান্দায় দাঁড়িয়ে। আমাদের এই বারান্দা থেকে আকাশ দেখা যায়।
– সোনামা কী করো?
– মেঘ দেখি।
আকাশের দিকে তাকালাম। আসলেই অনেক মেঘ করেছে। একটু পরেই বৃষ্টি নামবে। বললাম- চলো ঘরে যাই।
– আহ্, একটু দাঁড়াও না।
– দাঁড়িয়েই তো আছি। বারান্দায় তো বসার কিছু নেই।
– বোকার মতো কথা বলো না।
– আমি তো ভেবেছিলাম, বুদ্ধিমানের মতো একটা কথা বলেছি।
– বুদ্ধিমানরা কথা কম বলে। তুমি এত কথা বলছো কেন?
ঠিক, কথা যত কম বলা যায় তত ভালো। বুদ্ধিমানরা সেটাই করে। আমিও বুদ্ধিমান হতে চাইলাম। মানে চুপ করে গেলাম।
কিছুক্ষণ এভাবে কাটল। দুজনেই চুপচাপ। মেঘ দেখছি। রিদিমা বুঝতে পারল, আমার মনেও খানিকটা মেঘ জমছে।
– বাবা, জানো?
– না বললে কী করে জানব?
– কালো মেঘেরা খুব দুষ্টু।
বলতে ইচ্ছে হলো বলি, সাদা মেঘ বুঝি ভদ্র। পাছে রিদিমা আবার রেগে যায়। তাই ইচ্ছেটাকে চাপা দিয়ে বললাম- তাই নাকি?
– হ্যাঁ, তাই। তাকিয়ে দ্যাখো, একেকটা কী গতিতে ছুটছে। ছুটতে গিয়ে পাশেরটাকে কী জোরে ধাক্কা দিচ্ছে।
আকাশের দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে তাকালাম।
– আরে, তাই তো। এত জোরে ধাক্কা, ওদের তো ব্যথা পাওয়ার কথা।
– ব্যথা পায় তো। অল্প ব্যথা পেলে একটু থেমে আবার চলতে শুরু করে।
– আর বেশি ব্যথা পেলে?
– কেঁদে ফেলে।
– তাই নাকি?
– হ্যাঁ, তাই। ওদের সেই কান্নাই হলো বৃষ্টি।
আমি রিদিমার দিকে তাকিয়ে আছি। কী সুন্দর গুছিয়ে বলল আমার সোনামা।
ঠিক তখনই আকাশে বিদ্যুৎ চমকালো। একটু পরেই শোনা গেল বাজ পড়ার শব্দ।
– জানো, কিছু মেঘ আছে খুব শক্তিশালী। দুই শক্তিশালী মেঘে যখন ধাক্কা খায়, তখন বিদ্যুৎ চমকায়। শব্দ করে তারা শক্তি দেখায়। সংঘর্ষে তারা আহত হয়। আহত হলে আমাদের রক্তপাত হয়। আর ওদের বেলায় হয় বজ্রপাত।
রিদিমা বলছে আমি শুনছি।
– জানো, বাতাস তখন ভয়ে ছুটতে শুরু করে। এটাই হলো ঝড়।
এবার সত্যি ঝড়ো বাতাস শুরু হলো। বৃষ্টির ফোঁটা এসে গায়ে পড়ছে। বললাম- সোনামা এবার ঘরে চলো।
– চলো, ভিজলে আবার মা রাগ করবে।
মেঘ নিয়ে রিদিমা নিজের মতো করে কল্পনা সাজিয়েছে। আরেকটু বড় হলে সে বিজ্ঞানের সত্যটা জানবে। ততদিন থাকুক তার এই কল্পনার জগৎ।
ভেতরে এসে রিদিমা শোবার ঘরের জানালা বন্ধ করল। আমি ছুটে গিয়ে বসার ঘরের জানালা বন্ধ করলাম।
ফিরে এসে বললাম- তোমার এক সহপাঠী বৃষ্টি নিয়ে কী যেন একটা মজার কথা বলেছে?
– ও তুমি সারিকার কথা বলছো। ও তো আরেক দুষ্টু।
– কী যেন বলেছিল ও?
– ও বলেছে, বৃষ্টি হলো মেঘের হিসু। বোঝো, ও কী দুষ্টু। হি-হি-হি।
এবার আমিও হেসে ফেললাম।
রান্নাঘর থেকে ভেসে এলো রিদিমার মায়ের গলা।
– শুধু হাসলেই চলবে। জানালাগুলো বন্ধ করো। ঘর ভিজে যাবে তো।
– আমরা আগেই বন্ধ করেছি মা। রিদিমা বলল।
– যাক, বাপ-বেটির সুমতি হয়েছে।
– সুমতির সঙ্গে আমাদের খিদেও পেয়েছে। আমার কথায় রিদিমা খিলখিল করে হেসে উঠল।
খেতে বসেছি। খিচুড়ি, ডিম ভুনা আর হাঁসের মাংস রান্না হয়েছে। সঙ্গে বেগুন ভাজা। রিদিমার মা বেগুন ভাজার সঙ্গে ঘি খেতে পছন্দ করে। ঘিয়ের কৌটা টেবিলে রাখা। রিদিমা কৌটার মুখে খুলে একদম সোজা তর্জনী ঢুকিয়ে দিলো।
– আহ্, কী করছো? রিদিমার মা বিরক্ত হলো।
তর্জনী সোজা করে বের করে রিদিমা বলল- সোজা আঙুলে ঘি ওঠে কিনা পরীক্ষা করে দেখলাম।
ওর বলার ভঙ্গিতে আমার হাসি চেপে রাখতে বেশ কষ্ট করতে হলো।
– পাকামি না করে খাওয়া শুরু করো। রিদিমার মা বলল।
আর কথা না বাড়িয়ে রিদিমা খেতে শুরু করল। হাঁসের মাংস পাতে তুলে দিতেই সে বলল- আচ্ছা বাবা, হাঁস যে সারাদিন সাঁতার কাটে ওদের ঠাণ্ডা লাগে না?
– না, লাগে না। আমি বললাম।
– কেন লাগে না?
– এটা ওদের অভ্যাস।
– তার মানে মানুষের মতো হাঁসও অভ্যাসের দাস। রিদিমা বিজ্ঞের মতো বলল।
– তোমাদের আর কত বার বলব, খাওয়ার সময় এত কথা বলো না। কড়া গলায় বলল রিদিমার মা।
অনেকটা বাধ্য হয়েই আমরা চুপ করে গেলাম।
হাঁস নিয়ে সবচেয়ে মজার কথাটা রিদিমা বলেছিল একদম ছোটবেলায়। তখন সে সবে কথা শিখেছে। শীতকাল। আমরা আমাদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেছি। রিদিমা আমার কোলে। পুকুর পাড়ে একটা হাঁস হাঁটাহাঁটি করছে। ডাকছে প্যাঁক, প্যাঁক।
– বাবা এটা কি হাঁস?
– হ্যাঁ, সোনামা।
– ওর পায়ে মোজা নেই কেন?
আমি হেসে বলেছিলাম- ইচ্ছে হয়নি, তাই পরেনি।
– ও তো তাহলে ভীষণ দুষ্টু। এই দ্যাখো আমি মোজা পড়েছি।
– তুমি তো আমার সোনামা। ল²ী সোনামা।
– হুম। হি-হি-হি। রিদিমা ভীষণ খুশি। আমার গলাটা সে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিল।
– এই বাবা, কী হলো?
রিদিমার প্রশ্নের জবাবে বললাম- কই, কিছু হয়নি তো।
– তাহলে খাওয়া বন্ধ করে তাকিয়ে আছো কেন? মা কথা বন্ধ করতে বলেছে, খাওয়া বন্ধ করতে বলেনি।
এরপর মায়ের দিকে তাকিয়ে রিদিমা বলল- হাঁসের মাংসটা দারুণ হয়েছে মা।
– খিচুড়ি মজা হয়নি?
– খিচুড়িও মজা হয়েছে মা। তোমার রান্না তো এমনিতেই মজা হয়। আজ সবগুলো পদ মজা হয়েছে। ঠিক না বাবা?
– ঠিক। অনেক মজা হয়েছে। আমিও সায় দিলাম।
রান্নার প্রশংসা শুনে রিদিমার মায়ের মুখেও হাসি ফুটে উঠল।
রিদিমা মিটিমিটি হাসছে। আমিও তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
রিদিমার অনেক বুদ্ধি। সে কথা বলতে খুব পছন্দ করে। বুদ্ধি দিয়ে কথা বলার সুযোগ সে নিজেই তৈরি করে নেয়।
যাদের বুদ্ধি বেশি, তার কথা কম বলে, এ কথা তার বেলায় খাটে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়