উগ্র মৌলবাদের বিরুদ্ধে গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের কর্মসূচি

আগের সংবাদ

গৃহায়ণ ও রাজউকের ১১ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে

পরের সংবাদ

সবুজ কারখানা পরিদর্শনে ১৭ কূটনীতিক : বাংলাদেশের পোশাক খাত সারা বিশ্বের কাছে ‘মডেল’

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি পোশাক নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত। এ ব্যাপারে সেসব দেশের ক্রেতাদের কাছে ইতিবাচক বার্তা দেয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা। পরিবেশ সুরক্ষা, শ্রমিকদের যতœসহ উৎপাদন কার্যক্রমের সব ক্ষেত্রেই এ বাংলাদেশের পোশাক খাত এখন অন্য দেশগুলোর জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। সম্প্রতি পরিবেশবান্ধব দুই পোশাক কারখানার খুঁটিনাটি ঘুরে দেখেন এসব কথা জানান ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের ১৭ কূটনীতিক।
গত শনিবার পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর উদ্যোগে তারা নারায়ণগঞ্জের মিথিলা টেক্সটাইল ও ফকির ফ্যাশনের কারখানা ঘুরে দেখেন। পরিদর্শনে কয়েকটি ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। পোশাক কারখানায় সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহার ও শতভাগ নিয়ম মানার চর্চা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করার অংশ হিসেবে এ আয়োজন করা হয়। এতে সহায়তা দিয়েছে পোশাক খাতের নিট পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএ। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কারখানা দুটির কর্মপরিবেশ, শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, কারখানা অবকাঠামো ও জ্বালানি সাশ্রয়ী বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।
সকালে ৩০টি গাড়ির বিশাল বহর নিয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের দুপতারায় মিথিলা টেক্সটাইল মিলসে এসে পৌঁছায় প্রতিনিধি দলটি। এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এবং মিথিলা টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আজহার খান প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান। এরপর কারখানার বিভিন্ন বিভাগের উৎপাদন কার্যক্রম ঘুরে দেখেন তাঁরা। কারখানাটি জ্বালানি এবং পরিবেশবান্ধব হিসেবে লিডারশিপ ইন এনার্জি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইনের (লিড) মধ্যে সর্বোচ্চ মান প্লাটিনাম সনদপ্রাপ্ত। কারখানার ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, তাদের অধিকার চর্চার সুযোগ- এসব সূচকে যাচাই-বাছাই করে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) লিড সনদ দিয়ে থাকে। আড়াইহাজার উপজেলায় মিথিলা গ্রুপের কারখানা পরিদর্শন শেষে বিকালে প্রতিনিধি দলটি যায় রূপগঞ্জের ফকির ফ্যাশনের কারখানা দেখতে। সেখানে কারখানার ছাদে সৌর বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, কোম্পানির নিজস্ব ডিজাইন ল্যাব, পরিবেশবান্ধব সেলাই ও কাটিং ফ্লোর, ডে কেয়ার সেন্টার ও বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট ঘুরে দেখেন দলের সদস্যরা। প্রতিনিধি দলটি কারখানা চত্বরে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। পরিদর্শন শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস বলেন, পরিবেশ সুরক্ষা, শ্রমিক-কর্মচারীদের যতœসহ উৎপাদন কার্যক্রমের সব ক্ষেত্রে এত সহায়ক পরিবেশ আমি আগে কখনো কোথাও দেখিনি। এ উদাহরণ পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর জন্য প্রকৃতই অনুপ্রেরণার। হোহাইটলি আরো বলেন, বাংলাদেশের পোশাকের প্রধান বাজার হিসেবে ইইউ গর্বিত। ইইউভুক্ত দেশগুলো গত বছর বাংলাদেশ থেকে ১৯ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক নেয়ার তথ্য জানান তিনি। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের নিরাপত্তা মানের যে উন্নয়ন তা বিশ্ববাসীকে জানানো হবে। এর অংশ হিসেবে, ক্রেতা প্রতিনিধি ও মিডিয়াকে নিয়ে এই আয়োজন করা হয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা জানান তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জানান, উৎপাদন কার্যক্রমে সবুজ এবং বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। সারা বিশ্বে পোশাক খাতে সবচেয়ে বেশি লিড সনদের কারখানা এখন বাংলাদেশে। এ পর্যন্ত ১৮৪টি কারখানা লিড সনদ পেয়েছে। পাইপলাইনে রয়েছে আরো ৫০০ কারখানা। মিথিলা টেক্সটাইলের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ধান থেকে তুষ এবং তুষ পুড়িয়ে স্টিম উৎপাদন করে তা গ্যাসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের এই প্রযুক্তিই তার বড় প্রমাণ। বস্ত্র ও পোশাক উৎপাদনে আগামীতে এ ধরনের বিকল্প জ্বালানির আরো কারখানা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ সময় স্থানীয় সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু ও মিথিলা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
মিথিলা টেক্সটাইল বাংলাদেশের প্রথম লিড কারখানা হিসাবে বিশ্বের স্বীকৃতি পেয়েছে জানিয়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজহার খান বলেন, কারখানার ডায়িং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং লাইনে প্রতি মাসে আমরা প্রায় ৬ মিলিয়ন মিটার কাপড় উৎপাদন করি। আমরা প্রাকৃতিক আলো ও বাতাসের পরিবেশে কর্মীদের কাজ করার ব্যবস্থা করেছি। ফলে এখানকার কর্মপরিবেশ অত্যন্ত পরিবেশ সম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত।
প্রতিনিধি দলে ঢাকায় জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার, ব্রুনাই দারুসসালামের হাইকমিশনার হারিস বিন ওসমান, ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ফাম ভিয়েত চিয়েন, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার-সভেন্ডসেন, সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসেফ ইসা আল দুহাইলান, নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভাণ্ডারী, থাই রাষ্ট্রদূত মাকাওয়াদে সুমিতমোর উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, চীন, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা প্রতিনিধি দলে ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়