‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান স্মরণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজন

আগের সংবাদ

মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ : জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়েছে, কর্মসংস্থান ও আয় বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

ঈশ্বরদীতে সরিষার বাম্পার ফলন : মিটবে ভোজ্যতেলের চাহিদা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোস্তাক আহমেদ কিরণ, ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে : যেদিকে চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। মৌমাছিদের গুনগুন শব্দে এখন মুখরিত সরিষার মাঠগুলো। গত মৌসুমে স্থানীয় বাজারগুলোতে দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা চলতি মৌসুমে সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়েছেন। ফলে পাবনার ঈশ্বরদীতে এই বছর লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ জমিতে চাষ হচ্ছে সরিষা। বর্তমানে এ উপজেলার মাঠে মাঠে সরিষার ফল শোভা পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরদীতে এ বছর সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫০ হেক্টর। আবাদ বেড়ে চাষ হয়েছে ১১৯৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪৮০ টন। গত বছর সরিষা চাষের আওতাধীন জমির পরিমাণ ছিল ৬৮০ হেক্টর। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সরিষা চাষে খরচ কম, ফলন বেশি এবং চাষিদের লাভ বেশি, তাই বাড়ছে আবাদের পরিমাণ।
সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষা গাছে হলুদ রং ছড়িয়ে পড়েছে। কোনো কোনো মাঠে সরিষার গাছে ফুল ফুটেছে। মৌমাছিরা ফুল থেকে অমৃত সংগ্রহ করে মধু তৈরি করছে মধু সংগ্রহকারীরা। কোথাও সরিষা ফুলের হলুদ রং অপরূপ শোভা ধারণ করে আছে। আগাম আবাদ করা জমিতে শোভা পাচ্ছে সরিষার ফল। কেউ আবার মাঠ থেকে সরিষা উঠাতে শুরু করেছেন। কোথাও সরিষা মাড়ায়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক।
এ ব্যাপারে উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের সরিষা চাষি আমিরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, কম খরচ, কম সময় আর কম পরিশ্রমে সরিষা চাষ করা যায় বলে এটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল।
প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় ৩৫০০ টাকা। জমি থেকে চলতি মৌসুমে বিঘাপ্রতি ৪-৫ মণ সরিষা পাওয়া যাবে। উপজেলার সাহাপুর এলাকার আমজাদ হোসেন বলেন, এবার ২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক শাহিনুজ্জামান বলেন, ধান কাটার পর এবার আড়াই বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক বিঘা জমিতে ৬ মণ বা তার বেশি সরিষা চাষ করা যায়। তার আড়াই বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ মণ। তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩ হাজার টাকা। আড়াই বিঘায় তার খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকা। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী এক মণ সরিষা ৩ হাজার টাকা, ১৫ মণ সরিষার দাম পড়বে ৪৫ হাজার টাকা। সে অনুযায়ী আড়াই বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদন করে শাহিনুজ্জামানের লাভ হবে ৩৭ হাজার টাকা।
কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুজন রায় বলেন, সরিষা খুবই লাভজনক ফসল। শ্রম খরচ অত্যন্ত কম, তবে লাভ বেশি। আমন ধান কাটার পর সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ মণ সরিষা লাগালে এবং জমি প্রস্তুত করে চাষ করলে ওই জমিতে ৫-৬ মণ সরিষা উৎপন্ন হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার ভোরের কাগজকে জানান, বেশি লাভ হওয়ায় ঈশ্বরদীতে সরিষা চাষ বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর আবাদি জমির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছর ৬৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল।
এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং মাঠ ঘুরে যাওয়ায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে। সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
তিনি জানান, সরিষা চাষের নির্ধারিত সময়ে কৃষকদের হাতে সরিষা বীজ ও সার হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা সব ধরনের ফসলের আবাদ দ্বিগুণ করার চেষ্টা করছি। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়