মাছরাঙা টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকা ডা. নাতাশার মৃত্যু

আগের সংবাদ

৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উদযাপনকালে বিশ্বব্যাংক এমডি : বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের সর্ম্পক নতুন মাইলফলকে

পরের সংবাদ

লাভজনক ‘সরিষা’ চাষে পূরণ হবে ভোজ্যতেলের চাহিদা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দ মনির আহমদ, ফেনী : প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কৃষিক্ষেত্রে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নিত্যনতুন গবেষণার মাধ্যমে কৃষিকে এগিয়ে দিচ্ছেন দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা। অন্য সব ফসলের ক্ষেত্রে ভালো অগ্রগতি থাকলেও তেলজাতীয় ফসল উৎপাদনে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তাছাড়া এ খাতেও রয়েছে অপার সম্ভাবনা।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের দাবি, দেশের ২২ লাখ হেক্টর পতিত (দুই ফসলের মাঝের সময়) জমিতে বিনাসরিষা-৪ ও বিনাসরিষা-৯ আবাদ করা যায় তাহলে বছরে ১৮ হাজার কোটি টাকার তেল আমদানি সাশ্রয় করা সম্ভব। দেশে এখন ভোজ্যতেলের চাহিদা বছরে ২৫ লাখ টন। এর মধ্যে সরিষার তেল উৎপাদিত হয় ৭ লাখ টন। বাকি থাকে ১৮ লাখ টন। সয়াবিন ৪ লাখ টন, পাম অয়েল ১২ লাখ টন ও সরিষা দুই লাখ টন আমদানি করতে হয়। অর্থাৎ পতিত ২২ লাখ হেক্টর জমি চাষের আওতায় আনতে পারলে বছরে তেলের উৎপাদন আট থেকে ১০ লাখ টন বাড়বে। এতে এখন যে ১৮ হাজার কোটি টাকার ভোজ্য তেল আমদানি করতে হয় সেটা আর লাগবে না।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বিনা সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ভোজ্যতেল হিসেবে প্রধানত সরিষা আবাদ করা হয়। এতে প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ তেল এবং ২০-২৫ শতাংশ প্রোটিন থাকে। দেশের তেলবীজ আবাদি জমির প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকায় সরিষা চাষ করা হয়, তারপরও ২০২২ সালে প্রায় এক লাখ টন সরিষা আমদানি করা হয়েছে। আমাদের দেশে সাধারণত রবি মৌসুমে সরিষা চাষ করা হয়। দেশের প্রায় সব এলাকাতেই সরিষা আবাদ করা সম্ভব।
ফেনীতে গত ২০২১-২২ মৌসুমে ১ হাজার ৮৩৭ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত সরিষা আবাদ হয়েছিল। ২০২২-২৩ মৌসুমে তিন হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে সরিষা। এর মধ্যে সোনাগাজী উপজেলায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুন এবং গত মৌসুমের চেয়ে প্রায় তিনগুন বেশি। প্রতিবছর এই হারে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হলে ২০৩০ সালে মোট সরিষা উৎপাদন হবে প্রায় ৫০ লাখ টন, যা থেকে প্রায় ১৭ লাখ টন তেল পাওয়া যাবে।
সোনাগাজীর সব সরিষাক্ষেতে ফুল ফুটেছে। সুন্দর বীজও আসতে শুরু করেছে। এতে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় চাষিরা। কম খরচে অধিক লাভের আশায় তাদের মুখে এখন সর্ষে ফুলের হলদে হাসি। উপজেলার প্রায় সব গ্রামে জমির পর জমিতে সরিষার আবাদ দেখা গেছে। মাঠের পর মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য। ফুলে মধু আহরণে ভিড় করছে মৌমাছি। তবে অনেক জমিতেই ফুল শেষ হয়ে বীজ দেখা গেছে।
নবাবপুর গ্রামের সরিষা চাষি আনোয়ার লিটন ভোরের কাগজকে জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় গত বছর এক একর জমিতে সরিষার চাষ করে খরচের তুলনায় দ্বিগুণ লাভবান হওয়ায় এ বছর দুই একর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। জমি তৈরি করা থেকে ফলন ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় এক একর জমিতে সরিষা আবাদে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক একর জমিতে প্রায় ১০ মণ সরিষাবীজ উদপাদন হতে পারে। যার বাজার মূল্য ৫০ হাজার টাকা।
উত্তর চর ছান্দিয়ার কৃষক মো. ইলিয়াছ বলেন, নিজস্ব এক একর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। মৌসুম ভালো থাকায় এখন পর্যন্ত জমিতে কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। সরকারের পক্ষে উপজেলা কৃষি বিভাগ স্বাস্থ্যবান বীজ দিয়েছে তাই ভালো ফলন পাওয়া যাবে। ডিসেম্বরের শুরুতে বীজ বুনেছি। মাত্র তিন মাসের মধ্যে ফলন ঘরে আসবে। কম খরচে অধিক লাভ হয় সরিষা আবাদে।
সোনাগাজী সদর ইউপি চেয়ারম্যান উম্মে রুমা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আমদানি কমাতে এবং অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা এবং উদ্বুদ্ধ করে সরিষা চাষ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সদর ইউনিয়নের প্রায় সবকটি গ্রামে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় সরিষা চাষাবাদ করেছেন কৃষক। সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে লাভজনক সরিষা আবাদ আগামী মৌসুমে আরো দ্বিগুণ হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, কৃষকের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ হলেও টরি ৭, বারি ১৪, বীন৪ ও বীনা ৯সহ কয়েক জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এবার উপজেলার ৬ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে সার ও সরিষাসহ বিভিন্ন রবি শষ্যের বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। এবার সরিষা আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪০ হেক্টর কিন্তু অর্জিত হয়েছে ১ হাজার ২২০ হেক্টর। এর মধ্যে কৃষি বিভাগের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরিষা আবাদ হয়েছে প্রায় ৩৯০ হেক্টর ।
তিনি আরো বলেন, অন্যান্য ফসলের মতো সরিষা আবাদে তেমন শ্রমের প্রয়োজন হয় না। জমি থেকে পাকা সরিষা সংগ্রহ ও মাড়াই করে ফসল ঘরে তোলার জন্য পরিবারে পুরুষের পাশাপাশি নারী, বৃদ্ধ ও শিশু সদস্যরাও নিয়মিতভাবে কাজ করতে পারেন। অল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে সরিষার ফলন ঘরে তোলা যায়। ঝড় বৃষ্টি না হওয়ায় চলতি মৌসুমে সরিষার ফলনও হয়েছে বেশ।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আকরাম উদ্দিন বলেন, গত মৌসুমে (২০২১-২২) জেলায় সরিষা চাষাবাদ করা হয় ১ হাজার ৮৩৭ হেক্টর জমিতে। কৃষকেরা ভালো মূল্য পেয়েছেন। সরকারের কৃষি বিভাগ সার ও বীজ সরবরাহ থেকে শুরু করে সবধরণের সহযোগিতা করেছে। চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষা চাষ করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ। প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার তেল আমদানি করতে হয়। তবে আমদানি কমাতে কৃষি প্রণোদনা বাড়িয়েছে সরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়