পদ্মা সেতু : মোটরসাইকেল চলাচল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

আগের সংবাদ

আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ : বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য টাইগ্রেসরা

পরের সংবাদ

রেস্তোরাঁ ব্যবসায় আশার আলো

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেজুঁতি : দেশে দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। এ খাতে কর্মসংস্থান যেমন বাড়ছে, তেমনি জাতীয় আয়েও অবদান বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে দেখা যায়, গত এক দশকে হোটেল-রেস্টুরেন্টের সংখ্যা বেড়েছে ৫৮ শতাংশের বেশি। সেইসঙ্গে এ খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। মূলত, দেশের রেস্তোরাঁ ব্যবসার প্রসার ঘটেছে গত দুই দশকে। বিশেষ করে গত এক দশকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহর এবং জেলা উপজেলা শহরে এ ব্যবসায় বড় পরিবর্তন এসেছে। উচ্চ শিক্ষিত যুবকরা বর্তমানে রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। রাজধানীর অলিগলিতে উন্নত মানের রেস্তোরাঁ তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইউরোপ আমেরিকাসহ উন্নত দেশের আদলে অনেক চেইন রেস্তোরাঁও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে দেশে। তবে এতদিন এ ব্যবসাটিকে শিল্পের মর্যাদা দিতে আবেদন জানিয়ে আসছিলেন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি সরকার রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে শিল্পের মর্যাদা দেয়ায় এ ব্যবসায় সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। শিল্প ঘোষণার ফলে রেস্তোরাঁ ব্যবসার আরো প্রসার ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান জানান, দ্রুতই সরকারের এ ঘোষণার বাস্তবায়ন হবে। ট্যাক্স-ভ্যাট থেকে শুরু করে এ ব্যবসায় যেসব সমস্যা রয়েছে সেসবের সমাধান হবে। ব্যাংক লোন সহজলভ্য হবে। বাণিজ্যিক খরচে যে গ্যাসের লাইন আমরা ব্যবহার করি তা শিল্প সুবিধায় আসবে। দ্রুতই হোটেল- রেস্তোরাঁয় গ্যাস সংযোগ পাওয়া যাবে। অন্য শিল্প সুবিধাগুলোও যাতে দ্রুত পাওয়া যায়, আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ পরিস্থিতিতে আগামী ১০ বছরে এ শিল্প আরো তিনগুণ এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সচিব মো. আকতারুজজামান। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, সরকারের উদ্যোগে রেস্তোরাঁকে শিল্প ঘোষণা করা হয়েছে। এতে এ খাতের অনেক সমস্যা সমাধান হবে। বর্তমানে এ শিল্প যে অবস্থায় রয়েছে, আগামী ১০ বছরে তা আরো তিনগুণ বাড়বে। তিনি বলেন, পৃথিবীজুড়ে এখন এ শিল্প সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশেও সেটা হবে। এছাড়া আগামীতে এ শিল্প থেকে প্রচুর প্রশিক্ষিত কর্মী রপ্তানি সম্ভব হবে। সেটি অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে। আবার বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত প্রবাসীরাও এ খাতে জড়িয়ে পড়ছে ব্যাক টু ব্যাক শিল্পের মতো। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে বিশ্বব্যাপী হসপিটালিটি খাতে দুই কোটি কর্মী রপ্তানি সম্ভব।
বেশ কয়েকজন রেস্তোরাঁ মালিক জানান, এতদিন রেস্তোরাঁ ব্যবসা শিল্পের মর্যাদা না পাওয়ার কারণে বেশ সমস্যা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের সরকারি সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে চড়ামূল্য দিতে হতো। ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে অনেকে। তাছাড়া ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে যে সব প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসার প্রসার করেছেন, তারা প্রতিনিয়ত চড়াসুদ গুনেছে। ঋণ পরিশোধ সব সময়ই আর্থিক চাপ, এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠান টিকতে পারেনি। শিল্প না হওয়ার কারণে এতদিন রেস্তোরাঁ ব্যবসা দেশের পুঁজিবাজার, বিশেষ করে সম্ভাবনাময় বন্ড মার্কেট গড়ে ওঠার ক্ষেত্রেও কোনো ভূমিকা নেয়নি।
আল-কাদেরিয়া রেস্টুরেন্টের কর্ণধার ফিরোজ আলম সুমন বলেন, এ খাত শিল্প হওয়ায় এখন অনেক সমস্যা কেটে যাবে। বড় বিনিয়োগ আসবে। কয়েক বছরের মধ্যে এ খাত পাল্টে যাবে। যেসব তরুণ উদ্যোক্তা রেস্তোরাঁগুলোতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগিয়ে যাচ্ছেন তারা আরও উদ্যমী হবেন। ব্যাংকগুলো সব ব্যবসায় ঋণ দিলেও রেস্তোরাঁ ব্যবসায় ঋণ দিতে চাইত না। সহজ শর্তে ঋণ পেলে তরুণরা আরো ভালো করবেন।
রেস্তোরাঁ ব্যবসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি বলেন, এত বড় হওয়া সত্ত্বেও এতদিন রেস্তোরাঁ ব্যবসায় কোনো স্বীকৃতি ছিল না। সেটা না থাকায় সরকারের সুবিধাগুলো আমরা পাইনি, রেস্তোরাঁ ব্যবসা সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে উঠতে পারেনি। এখন সে বাধা কেটেছে। রেস্তোরাঁকে অন্যান্য শিল্পের মতো সুবিধা দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ থেকে বিভিন্ন সেবায় আমরা সুবিধা পাব। শিল্প সহায়তা পাব। শিল্প না হওয়ার কারণে ব্যাংক লোন না পাওয়ার সমস্যারও সমাধান হবে। তিনি বলেন, আমরা চাই, সরকার যে আন্তরিকতা নিয়ে এ খাতটি শিল্প ঘোষণা করেছে, সেরকমভাবে প্রজ্ঞাপনভিত্তি করে এ বিষয়ে একটি ব্যবসাবান্ধব বিধি বা প্রবিধি প্রণয়ন করবে। যাতে এ শিল্পের অবদান দ্রুততম সময়ে অর্থনীতিতে অন্যতম সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠে।
এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নীতি, আইন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা) শেখ ফয়েজুল আমীন বলেন, মোটাদাগে এখন অন্যান্য শিল্পের মতো সব সুবিধাপ্রাপ্ত হবে রেস্তোরাঁগুলো। তাতে এ ব্যবসায় সরকারের সহায়তা বাড়বে। বড় বড় বিনিয়োগ আসবে। ব্যাংকগুলোও বিনিয়োগকারীদের সহায়তা দেবে। এমনকি এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারোর (বিবিএস) হোটেল ও রেস্টুরেন্ট সার্ভে-২০২১ এর তথ্য বলছে, গত ১১ বছরে দেশে হোটেল ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার। ২০০৯-১০ সালে যেখানে দেশে রেস্তেরাঁর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার, তা গত বছর বেড়ে ৪ লাখ ৩৬ হাজার হয়েছে। এ সময়ে সেখানে কর্মরত মানুষের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়েছে। ২০০৯-১০ সালে হোটেল ও রেস্তোরাঁয় কর্মরত ছিলেন ৯ লাখ ৪ হাজার মানুষ- যা গত বছর বেড়ে ২০ লাখ ৭২ হাজার হয়েছে। ফলে এক দশকে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে মূল্য সংযোজন বেড়ে হয়েছে আট গুণ। এক দশক আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে হোটেল- রেস্তোরাঁ থেকে মূল্য সংযোজন হয়েছিল মাত্র ১১ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। যা সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে হয়েছে ৮৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়