কাগজ প্রতিবেদক : দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আবারো বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ দাম বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩ হাজার টাকায় দাঁড়াল।
গতকাল সবচেয়ে ভালোমানের স্বর্ণের দাম ভরিতে দুই হাজার ৬৮৩ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভালোমানের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছে ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা। গতকাল থেকে স্বর্ণের এ নতুন দাম কার্যকর করা হবে- এমনটিই জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
জানা গেছে- গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে। এতে দেশের বাজারেও দফায় দফায় বেড়েছে দামি এই ধাতুটির মূল্য। এর মধ্যে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেশের বাজারে এক ভরি স্বর্ণের দাম ৯০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আরো জানা গেছে- দেশের বাজারে সর্বশেষ দাম বাড়ার পর এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৫০ ডলারের ওপরে বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও তেজাবী স্বর্ণের দাম বেড়েছে। এ কারণে দেশের বাজারে আবারো স্বর্ণের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বাজুস।
হঠাৎ দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে- মূল কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আর আমাদের দেশে দাম বাড়ার কারণ ডলারের দাম বেড়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধি।
চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি দেশের বাজারে সবশেষ স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। সোনার পাশাপাশি সে সময় বাড়ানো হয় রুপার দাম। তার আগে গত বছরের ৩০ ও ৪ ডিসেম্বর এবং ১৮ ও ১৩ নভেম্বর স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। এভাবে দফায় দফায় দাম বাড়ানোর কারণে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে উঠে গেছে মূল্যবান এ ধাতুটির।
গত ৮ জানুয়ারি সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়িয়ে ৯০ হাজার ৭৪৬ টাকা করা হয়। এর আগে দেশের বাজারে কখনো এক ভরি স্বর্ণের দাম ৯০ হাজার টাকা হয়নি।
ভালো মানের স্বর্ণের পাশাপাশি বাড়ানো হয় সব ধরনের স্বর্ণের দাম। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ২১৬ টাকা বাড়িয়ে ৮৬ হাজার ৬০৫ টাকা করা হয়। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৯২৪ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৭৪ হাজার ২৪১ টাকা। এছাড়া সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ভরিতে এক হাজার ৫৭৫ টাকা বাড়িয়ে ৬১ হাজার ৮৭৮ টাকা করা হয়। স্বর্ণের পাশাপাশি বাড়ানো হয় রুপার দামও। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ১৯৯ বাড়িয়ে এক হাজার ৭১৫ টাকা, ২১ ক্যারেটের রুপার দাম ১৯৮ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৬৩৩ টাকা করা হয়। এছাড়াও ১৮ ক্যারেটের রুপার দাম ১৭৫ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৪০০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ১১৭ টাকা বাড়িয়ে ভরি এক হাজার ৫০ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস। বর্তমানে এ দামেই দেশের বাজারে স্বর্ণ ও রুপা বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বড়ানোর পর গত এক সপ্তাহে বিশ্বাবাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৫০ ডলার। এতে এক আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৯২০ দশমিক ২৯ ডলার। গত বছরের ২১ এপ্রিলের পর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের এত দাম আর হয়নি।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে দুই মাসের বেশি সময় ধরে স্বর্ণের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গত বছরের ৩ নভেম্বর এক আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল এক হাজার ৬২৯ দশমিক ১৫ ডলার।
সেখান থেকে দফায় দফায় দাম বেড়ে এখন এক হাজার ৯২০ দশমিক ২৯ ডলার হয়েছে। অর্থাৎ দুই মাসের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২৯১ দশমিক ১৪ ডলার।