আ.লীগ নেতা টিপু হত্যার প্রতিবেদন পেছাল

আগের সংবাদ

মাদকের বিরুদ্ধে ‘নতুন যুদ্ধ’ : তালিকায় ৯৩ শীর্ষ মাদক কারবারি, এক লাখ মাদকাসক্ত, জনসচেতনতা বাড়াতে প্রস্তুত অ্যাপ

পরের সংবাদ

জন্মদিন : বহুমাত্রিক লেখক অজয় দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সত্তর দশকে ছড়া দিয়ে শুরু। সদ্য স্বাধীন দেশে ছড়া সাহিত্যের অন্যতম রূপকার তিনি। তখনকার দেশের দৈনিক, সাপ্তাহিক সাময়িকীতে দু’হাত ভরে লিখতেন। এমন হয়ে গেছিল তিনি ও তার ছড়া ছাড়া ছড়া জগৎ ছিল অসম্পূর্ণ। সে সময় ছোট একটি ছড়া লিখে দেশ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন, সংস্কৃতি মানে যদি লাকী খান নাচা/ দেশ তবে দেশ নয় বানরের খাঁচা। ওই টুকুতেই ধরা পড়েছিল দেশের পরিস্থিতি। এরপর যখন দালাল, রাজাকাররা গদীতে তখন লিখলেন-
যারা করে চাষ হৃদয়ের ঘাস/ফোটালো গোলাপ গালিচায়/ সে বাগান থেকে কোথা থেকে উড়ে / উটকো লোকেরা তালি চায়?
এমন প্রতিবাদী ছড়া লিখতে লিখতে হঠাৎ লিখে ফেলতেন প্রেমময় ছড়া ও কবিতা। এমনি একটা পদ্যও পেয়েছিল বিপুল জনপ্রিয়তা।
ভালোবাসাহীন শহর গাঁয়ে ভালোবাসা চাওয়া পাপ নয়/ ভালোবাসা মানে পুষে রাখা কোন ফণা তোলা লোভী সাপ নয়।
এমন অজ¯্র ছড়া, কবিতার পাশাপাশি একটু একটু করে গদ্য লিখছিলেন। কম বয়সেই এম এন রায়, নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক নিবন্ধগুলো সুধিজনের নজর কেড়েছিল। হয়ে উঠেছিল সাহিত্য সাময়িকীগুলোর খোরাক। কিন্তু হঠাৎই পথ বদলে গেল তার।
এরশাদের ৯ বছরে দেশ, দেশের মিডিয়া ছিল অবরুদ্ধ। সবকিছু সামরিক জান্তার দখলে। তার গুণগান ও প্রশংসা ছাড়া কিছুই ছিল না। এরশাদ পতনের পর খুলে গেল মিডিয়া জগৎ। নাইমুল ইসলাম খানের পরিকল্পনায় আজকের কাগজ কলাম লেখার দুর্গ হয়ে উঠেছিল সে সময়। অজয় দাশগুপ্তও জড়িয়ে পড়েন সে প্রক্রিয়ায়। নব্বই দশকে শুরু বিগত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এক এক করে সব কটি দৈনিকে লিখেছেন। হয়ে উঠেছেন অনিবার্য এক কলাম লেখক। এখন তিনি দেশ-বিদেশের বাঙালির ঘরে ঘরে পরিচিত এক নাম। এই পরিচয় তার প্রবাস জীবনও থামাতে পারেনি। বরং সিডনি নামটিকেও তিনি পপুলার করে তুলেছেন তার কলামের ভেতর দিয়ে। প্রবাসী অজয় দাশগুপ্ত হয়ে উঠলেন আরো দেশপ্রেমী। অসাম্প্রদায়িকতার বাতিঘর ছায়ানটের গুরু রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ প্রয়াত ওয়াহিদুল হক তার কলামে লিখেছিলেন, অজয় একজন খাঁটি দেশপ্রেমী।
কলাম বা ছড়া, কবিতার পাশাপাশি গানেও আসক্তি আছে তার। এটা জানা কথা, গান বোঝেন গান ভালোবাসেন। কিন্তু সামাজিক মিডিয়া চালু হওয়ার পর দেখা গেল গাইতেও পারেন। অজয় দাশগুপ্ত দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যিক শহর সিডনিতে। দেশ-বিদেশের নামকরা সব পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। তার সব লেখালেখি যদি গ্রন্থিত হতো, তাহলে পুরো একটি লাইব্রেরিতে শুধু তার বইই থাকত। তবু আমরা পেয়েছি তার রচিত ‘নারীর হৃদয় সবখানি’, ‘কৃঞ্চ সংস্কৃতির উত্থান পর্বে’; ‘ছড?ায় গড?ায় ইতিহাস’; ‘শুধু ছড?া পঞ্চাশ’; ‘কলামগুচ্ছ’; ‘কালো অক্ষরে রক্তাভ তুমি’; ‘তৃতীয় বাংলার চোখে’ সহ মূল্যবান কয়েকটি গ্রন্থ। এ বছরের বইমেলায় আরও আসছে তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ ।
লেখালেখির মতোই প্রাঞ্জল তার কথা বলা। অনেকে মনে করেন, কথায় তিনি অধিক সাবলীল ও আকর্ষণ তৈরিতে পারঙ্গম। গান গাওয়া যে শখ তা বোঝা কঠিন নয়। কখনো কখনো কণ্ঠে গানও তোলেন তিনি। তুখোড় বক্তা হিসেবে পরিচিত তিনি বাংলাদেশের নামকরা কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে নিয়মিত টকশোতে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
অজয় দাশগুপ্তের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে দৈনিক পয়গাম পত্রিকার শিশুদের পাতায়। পরের সপ্তাহেই ছাপা হয় ‘প্রথম লেখার আনন্দ’ নামে ছোট একটি গদ্য। লেখালেখি অনেক করলেও তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তেমন নয় এই প্রসঙ্গে অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘আমার খুব বেশি বই নাই। যখন তখন হাতে পায়ে ধরে বই বের করা আমার দ্বারা সম্ভব ছিল না। তবে এখন বেরুচ্ছে বেশ কয়েকটি বই, যা প্রকাশকদের আগ্রহের কারণেই সম্ভবপর হয়ে উঠেছে।
১৯৮৪ সালে তখনকার সময়ে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃত গণগ্রন্থাগার পুরস্কার ছিল দেশের অন্যতম সেরা পুরস্কার। কবিতায় শীর্ষ পুরস্কার বিজয়ী অজয় দাশগুপ্ত আরো কিছু সম্মান ও পুরস্কারে ভূষিত। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস পার্লামেন্ট বহুজাতিক ও আদিবাসী পদক চালু করে। বাংলা বাঙালির তরফে গেল বছর প্রথম এই পদকে ভূষিত হন তিনি। এটি প্রশান্তপাড়ের অভিবাসী অনাবাসী সব বাংলা ভাষাভাষীর জন্য গৌরবের।
স্ত্রী দীপা ও সন্তান অর্ককে নিয়ে তিনি বাস করছেন সিডনিতে। কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক হিসেবে। তার একমাত্র সন্তান অর্ক দাশ বলিউড, হলিউড এবং অস্ট্রেলিয়ার মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় কাজ করছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার মূলধারায় অভিনয় করেন। মঞ্চে অভিনয়ের পরে তিনি অভিনয় করছেন টিভি সিরিয়াল ও সিনেমায়। এ দেশের বড় বড় ব্যাংকসহ নানা প্রতিষ্ঠানসহ রপ্তানি বাণিজ্যের স্তম্ভ ভেড়ার মাংসের বিজ্ঞাপনেও ছিল মূল ভূমিকায়। এখন সে ছবি নির্দেশনা, চিত্রনাট্য লেখা ও ছবির গল্প লেখে। সম্প্রতি তার ছবি ‘খানা খাজনা’ সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছে। তিনি ডিজনি মুভি ‘মুলান’ এ অভিনয় করেছেন।
অজয় দাশগুপ্তের প্রিয় লেখক যেমন রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ কিংবা সৈয়দ মুজতবা আলী তেমনি কাল যে মানুষ নতুন কিছু লিখে চমকে দিয়েছেন তিনিও প্রিয় লেখক। তিনি বলেন, উপনিষদ, রবীন্দ্রনাথের গান আর জীবনানন্দের কবিতার সঙ্গে ওমর খৈয়াম। তার বড় সম্পদ পঠিত বিষয়ে সম্যক উপলব্ধি ও নিরন্তর চর্চা। নিঃসন্দেহে সামাজিক মিডিয়ার চলমান এই সময়কালে তিনি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলা এক লেখক। সামাজিক মিডিয়ায় তার প্রবল ও প্রাণবন্ত উপস্থিতি প্রেরণাদায়ক। একজন বাঙালি এখন কোন দেশে থাকেন সেটা বড় ব্যাপার নয়, ব্যাপার হলো তিনি কতটা দেশ ও দেশের মানুষের সঙ্গে থাকেন। সে জায়গায় অজয় দাশগুপ্ত নিয়ত সচল। এবারের জন্মদিনে তাকে নিয়ে লেখা বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশু সাহিত্যিক রাশেদ রউফের মূল্যায়ন ছিল যৌক্তিক। রাশেদ রউফ লিখেছেন :
অনেক জনপ্রিয় ছড়ার নির্মাতা অজয় দাশগুপ্ত। আমাদের ছড়া-অঙ্গন তোলপাড় করা লেখক তিনি। বর্তমানে প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন মিডিয়ায় অত্যন্ত সচল ও সক্রিয় লেখক। সমকালীন বিষয়ে কলাম লিখে তিনি পেয়েছেন ব্যাপক পরিচিতি ও খ্যাতি। দীর্ঘদিন প্রবাস জীবনযাপন করলেও নিরন্তর লেখালেখির জন্য দেশে তার অনুপস্থিতি অনুমান করা যায় না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে তার মূল্যায়ন মূলধারার পাঠককে মোহিত করে। সমসাময়িক বিষয়ে তার যৌক্তিক ও মননধর্মী বিশ্লেষণের কারণে তিনি সক্ষম হয়েছেন তার নিজস্ব পাঠক ভুবন তৈরি করতে।
অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার তাৎক্ষণিক শিল্পসম্মত প্রকাশ রীতিমতো অভাবনীয় বিষয়। দেশের যে কোনো সংকট সমস্যায় তিনি উচ্চকণ্ঠ, অন্যায় অনাচার অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার। প্রায় প্রতিদিনই তিনি লিখেন। প্রতিটি লেখায় ফুটে ওঠে তার সমকালীন ভাবনা। আমরা তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি দীর্ঘায়ু কামনা করি। সিডনির অজয় দাশগুপ্ত সত্যি একক ও অনন্য।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়