আ.লীগ নেতা টিপু হত্যার প্রতিবেদন পেছাল

আগের সংবাদ

মাদকের বিরুদ্ধে ‘নতুন যুদ্ধ’ : তালিকায় ৯৩ শীর্ষ মাদক কারবারি, এক লাখ মাদকাসক্ত, জনসচেতনতা বাড়াতে প্রস্তুত অ্যাপ

পরের সংবাদ

অর্থবছরের ৬ মাস : তলানিতে নেমেছে ভোমরা স্থলবন্দরের রাজস্ব আয়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মসিউর রহমান ফিরোজ, সাতক্ষীরা থেকে : চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে তলানিতে নেমেছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের রাজস্ব আয়। এই ৬ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ২৫৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুল্ক স্টেশন ভোমরা থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মাসে নির্ধারিত রাজস্ব ৫৩০ কোটি ৫১ লাখের বিপরীতে অর্জিত হয়েছে মাত্র ২৭৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
জানা গেছে, আমদানি-রপ্তানিকারকরা ভোমরা বন্দর ব্যবহারে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করলেও এই বন্দর দিয়ে সব পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ না থাকায় বন্দরের প্রকৃত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, সব পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ এবং বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে এ বন্দর থেকে সরকারের বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় সম্ভব। কারণ ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে সাতক্ষীরা থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৭৫ কিলোমিটার। বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি বাণিজ্যের ওপর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ১ হাজার ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। ৬ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৫৩০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে জুলাইয়ে ৬৬ লাখ ১৫ হাজার, আগস্টে ৮৪ লাখ ৪১ হাজার, সেপ্টেম্বের ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার, অক্টোবরে ১ কোটি ৫৮ লাখ, নভেম্বর ৯৮ লাখ ৫৬ হাজার ও ডিসেম্বর ৮৪ লাখ ১২ হাজার টাকা। আদায়ের ঘাটতি ২৫৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।
জানা গেছে, সাতক্ষীরার ভোমরা শুল্ক স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা করার পরও সব পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছেন না বন্দর ব্যবহারকারীরা। আর এ কারণে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা থাকলেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বিগত অর্থবছরগুলোতে এ বন্দর দিয়ে সরকার প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব আদায় করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক মন্দা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডলার সংকটসহ নানা কারণে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু থাকলেও ফেরেনি স্বাভাবিক গতি। যার কারণে চলতি অর্থবছরে অর্জিত হয়নি ৬ মাসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা। একদিকে ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন, অন্যদিকে সরকারও হারিয়েছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব। এছাড়া ভোমরা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহও রাজস্ব ঘাটতির আরেকটি কারণ। আমদানিকারকরা ভোমরা বন্দর ব্যবহার কমিয়ে দেয়ার কারণ সম্পর্কে আজাদ ক্লিয়া পোর্ট এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যেখানে সুবিধা পাবে সেখানেই পণ্য আমদানি করবে। ভোমরা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে কোনো ছাড় দেয়া হয় না। তাই ভোমরা বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। রাজস্ব খাতেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে কাঁচামাল পণ্য আমদানি করলে ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়, ভোমরা বন্দরে তা দেয়া হয় না। এ বন্দরে ট্রাকপ্রতি কাঁচামাল আমদানিতে এক থেকে তিন টন ছাড় দেয়া হয়। সেখানে ভোমরা বন্দরে এক কেজিও ছাড় দেয়া হয় না। আমদানিতে সময় ক্ষেপণসহ নানা অব্যবস্থাপনাও রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা বেনাপোল বন্দরের ঝুঁকছে। রাজস্ব ঘাটতির কারণ ব্যাখ্যায় তিনি আরো বলেন, বৈশ্বিক মন্দার কারণে ডলারের সংকট থাকায় কাঁচামালের এলসি না পাওয়াসহ পাশাপাশি দুটি পোর্টের বিগত তিন বছর অসম প্রতিযোগিতাকে অন্যতম কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
এ ব্যাপারে ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন ভোমরা বন্দর প্রতিষ্ঠা লাভ করে তখন রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক কোটি টাকা। এখন হাজার কোটি টাকার বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়। মূলত বন্দর দিয়ে ৭৫টি পণ্য আমদানির সুযোগ থাকলেও বাস্তবে ২৫-৩০টি পণ্য আমদানি হয়। তিনি বলেন, দ্বৈতনীতি, অবকাঠামো উন্নয়নের ধীরগতি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের অবহেলার কারণে ভোমরা স্থলবন্দরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আরো একটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। পার্শ্ববর্তী বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে ভোমরা বন্দরের প্রতিযোগিতা চলে শুরু থেকেই। এই দুই বন্দরে ব্যবসায়ীদের যে পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়, তুলনামূলকভাবে ভোমরা বন্দর ব্যবসায়ীরা কোনো সুযোগ সুবিধা পায় না।
তিনি আরো বলেন, বেনাপোলে কাস্টম হাউস আছে। ওখানে কমিশনার নিজে অফিস করেন। রাজস্ব আদায়ের এনবিআরের জবাবদিহিতা থাকায় তিনি নিজের মতো করে বন্দর পরিচালনা করেন। যার ফলে ব্যবসায়ীরা সুযোগ-সুবিধা পায়। পক্ষান্তরে ভোমরা বন্দরে কাস্টম হাউস না থাকায় খুলনা কমিশনার কর্তৃক পরিচালিত হওয়ায় রাজস্ব আদায়ে তার কোনো জবাবদিহিতা নেই। ফলে ডেপুটি কমিশনার দ্বারা পরিচালিত হওয়া ভোমরা বন্দর রাজস্ব আদায়ের ঘাটতির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
ভোমরা স্থলবন্দর কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার নেয়ামুল হাসান লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার কারণ হিসেবে ভোরের কাগজকে বলেন, ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানি অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া বৈশ্বিক মন্দা ও রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এ ঘাটতি হয়েছে। তবে সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। তিনি আরো বলেন, দ্বৈতনীতি না হয়ে যদি সব বন্দর ব্যবসায়ীদের একই নীতিমালা থাকত তাহলে ভোমরা বন্দরে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হতো কয়েক গুণ বেশি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়