প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চাকরি মেলা

আগের সংবাদ

গুচ্ছের ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়নি : অনিশ্চয়তায় ২১ হাজার শিক্ষার্থী

পরের সংবাদ

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন : রেমিট্যান্স আসায় শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসার দিক থেকে সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে শীর্ষে চলে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রবাসীরা ১৯৬ কোটি ৬৭ লাখ (১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন) ডলার বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন। আর সৌদি আরব থেকে এসেছে ১৯০ কোটি ৯১ লাখ (১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন) ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে- চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১ হাজার ৪৯ কোটি ৩২ লাখ (১০.৪৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ২২ শতাংশ।
অথচ সৌদি আরব থেকে এ ছয় মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এসেছিল ২ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের একই সময়ে এসেছে ১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের চার মাসেই রেমিট্যান্স আসায় সৌদিকে পেছনে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। সবশেষ সদ্য সমাপ্ত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে সৌদি আরব থেকে এসেছে ৩০ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। অথচ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ৪২ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।
সব মিলিয়ে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সৌদি আরবের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ছয় মাসের হিসাবে আমেরিকা থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স দেশে এলো। আর এর ওপর ভর করেই রেমিট্যান্স-প্রবাহে ইতিবাচক ধারা ধরে রেখেছে বাংলাদশ। অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) গত বছরের একই সময়ের চেয়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে।
এ ব্যাপারে অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমেরিকা থেকে প্রবাসীরা দেশে যে রেমিট্যান্স পাঠান, তার পুরোটাই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠান। ওই দেশ থেকে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। অথচ বরাবরই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। তিনি বলেন- ব্যাংকের চেয়ে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম অনেক বেশি হওয়ায় স¤প্রতি তা আরো বেড়ে গেছে। সে কারণেই সৌদি থেকে রেমিট্যান্স কমছে আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাড়ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অবশ্য রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেশ বেড়েছে। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে দেশটি থেকে ১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৪ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ৮১ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ৯১ কোটি ১১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ৮৮ কোটি ডলার, বেড়েছে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
প্রতি বছর দেশে যে রেমিট্যান্স আসে, তার প্রায় অর্ধেক পাঠান সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। স্বাধীনতার পর থেকেই সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন সৌদি আরবে থাকা বাংলাদেশিরা। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত।
২০২০-২১ অর্থবছরে আরব আমিরাতকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে যুক্তরাষ্ট্র। ওই অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে ৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে ৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার, আরব আমিরাত থেকে আসে ২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। আর যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিল ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন। ওই অঙ্ক ছিল আগের অর্থবছরের (২০২০-২১) চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ২৬ শতাংশ কমে ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়নে নেমে আসে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় সমান ৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। গত অর্থবছরে আরব আমিরাত থেকে ২ দশমিক ০৭ বিলিয়ন এবং যুক্তরাজ্য থেকে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। ২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর পরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স-প্রবাহ বাড়ছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১ কোটি ২৫ লাখ বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তাদের বড় অংশই রয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করছেন বিভিন্ন শ্রমঘন পেশায়।
২০১২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসত কুয়েত থেকে। একক দেশ হিসেবে কুয়েত থেকে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ এখন ষষ্ঠ অবস্থানে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশির সংখ্যা সব মিলিয়ে ১২ লাখের মতো হবে। এর মধ্যে নিউইয়র্কেই থাকেন প্রায় চার লাখ। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকায় বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির বসবাস।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়