প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চাকরি মেলা

আগের সংবাদ

গুচ্ছের ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়নি : অনিশ্চয়তায় ২১ হাজার শিক্ষার্থী

পরের সংবাদ

কারবারি কৌশল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২৩ , ১:৪৭ পূর্বাহ্ণ

কিছুক্ষণ পূর্বে এক অদেখা পাখির রিনরিন ডাকে ভোর ফুটেছে। কুয়াশা-ধোঁয়াশার মায়াজাল সরিয়ে পৃথিবীতে আরো একটি নতুন সকাল জন্ম নিচ্ছে। চাকরিসূত্রে ছিলাম গুজরাটের রাজকোট শহরে। কয়েক মাস হলো অবসর নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মফস্বল শহরের পৈতৃক ভিটেতে এসেছি। শহরে যখন ছিলাম আকাশ দেখতে পেতাম না। এখন দেখতে পাই, এই ছড়ানো প্রকৃতিতে গাছেদের মাথার ওপরকার বিরাট আকাশের ক্যানভাসে কত রঙের সমাহার। দেখতে পাই, ধান কাটা মাঠ শুয়ে আছে অনাবাদি মেয়ের মতো। খাঁ খাঁ শরীর দেখলে হঠাৎ করে বুকটা অবশ্য একটু কেঁপে ওঠে। দূর থেকে খাল-বিলের ধারে ফোটা কাশফুল দেখলে মনে হয়, একসঙ্গে অনেক বালিকা সাদা কাপড় পরে নিজেদের হেলিয়ে-দুলিয়ে নেচে চলেছে তাদের হাসিটুকু দিয়ে।
যদিও বাংলার ষড়ঋতুর পরিক্রমা অনুযায়ী শীতকাল এখনো আসেনি, কড়া নারছে দ্বারে। তবে এই মফস্বল শহরে এখনই গায়ে জড়াতে হয় মোটা চাদর, মাথায় মাঙ্কিটুপি সকাল-সন্ধ্যায়। এখানে আসার পর রোজ সকালে বাজার করাটা হয়ে গেছে একটা নেশা। রাজকোটে তো করতাম সপ্তাহে একদিন বাজার। সারা সপ্তাহ ধরে রান্না করা হতো ঠাণ্ডা মেশিনে রাখা সবজিগুলো। আর এখানে! গ্রাম থেকে আসে সেদিনকেরই তোলা টাটকা সবজি। খেয়েও আরাম, কিনেও সুখ। আর এখন তো বাজার ভর্তি শীতকালীন ছোট্ট ছোট্ট ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল মুলা, পুঁই ডাঁটা, পালং শাক- আরো কত কী। আর মাছের কথা ভাবলেই জিভে জল চলে আসে- সোনালি ট্যাংরা, কাজলি, বাঁশপাতা, পুঁটি, দেশি কই, শোল। সব মাছের নাম লিখতে গেলে পাতাটাই হয়তো ভরে যাবে।
সকালের চা পানের পর মাথায় মাঙ্কিটুপি পরে বাজারের থলি হাতে বেরোতে যাব, গিন্নির আবদার নরম তুলতুলে বড় বড় বেগুন নিয়ে আসার জন্য। জলখাবারে পেঁয়াজ-লঙ্কা-টমেটো সহযোগে করবে বেগুন ভর্তা। নরম নরম আটার রুটি দিয়ে খাওয়া হবে। একটু বেশি করেই আনতে হবে। লাঞ্চের জন্য করবে চাকা চাকা গোল বেগুন ভাজা। গিন্নির খুব প্রিয় বেগুন ভাজা, গরম ভাতের সঙ্গে ঘি মেখে। রাজকোটে তো এই সুখ পায়নি। ওখানে পাওয়া যেত ছোট ছোট সাইজের বেগুন, ওরা বলে রিঙ্গন। ওর ভেতর মসলা ভরে সবজি বানাত। মাঝে মাঝে পেঁয়াজ দিয়ে মাখামাখা তরকারি।
রতনকে দেখি দুই বস্তা নধর লোভনীয় বেগুন মাটিতে পাতা কাপড়ের ওপর সবেমাত্র ঢেলেছে। খেয়াল করেছি ও প্রত্যেকদিন একটি অথবা দুটি সবজি আনে। কোনোদিন ফুলকপি, কোনোদিন ওলকপি কিংবা বেগুন অথবা ঢেঁড়শ। এক মহিলা উবু হয়ে বসে বেগুন হাত দিয়ে টিপে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে ছোট ঝুড়িতে রাখছিলেন। পোকায় কাটা কোনো কালচে সরু ফুটো আছে কিনা কিংবা নিজের পছন্দমতো বিচিবিহীন পর্যাপ্ত নরম তুলতুলে কিনা। রতনের নজরে পড়তেই সে বলে ওঠে
– আরে মাসিমা, করছেন কী? ছাড়ুন, ছাড়ুন, আমি বেছে দিচ্ছি। আপনি কেন কষ্ট করবেন?
– দেখ বাবা, যেন কানা পোকা না হয়। দু’একটাতে বিচিও আছে, শক্ত।
– আপনি চিন্তা করবেন না, মাসিমা। একটা বেগুনও ফেলা যাবে না। ভর্তা খান, ভাজা খান- শরীর জুড়িয়ে যাবে। এই শীতকালই তো মনের সুখে সবজি খাওয়ার মৌসুম।
মহিলার কেনা হয়ে গেলে আমি রতনকে এক কেজি বেশ বড় বড় দেখে বেগুন দিতে বলি।
– রতন, তোমার ভরসায় নিচ্ছি। পোকায় কাটা বেগুন দেখলে কিন্তু গিন্নি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠবে।
– জেঠামশাই, আপনাকে কোনোদিন খারাপ সবজি দিয়েছি? আর বেগুনে পোকা থাকলে বুঝবেন, জৈবসারের ফলন। একটু কেটে বাদ দিতে হবে ঠিকই, কিন্তু তার স্বাদ দেখবেন কী মিষ্টি। জিভে দিলেই গলে যাবে।
যাই হোক রতনের ভরসায় এক কেজি বেগুন থলেতে ঢুকিয়ে গেলাম মাছের বাজারে। এছাড়া আলু, পেঁয়াজ, অন্যান্য সবজিও কিছু কিনতে হবে।
প্রায় চল্লিশ মিনিট পর বাজার সেরে বাড়ির অভিমুখে হাঁটা দিতেই চোখ পড়ল রতনের দিকে। একটা বেগুনও নেই। দাঁড়িপাল্লা, বস্তা, ঝুড়ি গুটিয়ে উঠে বসেছে নিজের ভ্যানরিকশাতে। উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করি, তোমার শেষ খদ্দেরকে কোন বাছা বেগুন দিলে ? ঝড়তি-পড়তিগুলো গছালে কী করে?
– জেঠামশাই, দেড় কেজির একটু বেশি ছিল। কেজির দামে দিয়ে দিলাম। এখন বাড়ি গিয়ে মালপত্র নামিয়ে, বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে ভ্যানরিকশা চালাব।

সুপ্রিয় দেবরায়
বারাসাত, পশ্চিমবঙ্গ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়