ইউনেসকোর প্রতিবেদন : দেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ ভাগ বহন করে পরিবার

আগের সংবাদ

তীব্র শীতে জবুথবু জনজীবন

পরের সংবাদ

নতুন বছরে আবাসন খাতে শঙ্কা কাটছে না

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : করোনা মহামারির বড় ধাক্কা সামাল দিয়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল আবাসন খাতে। সদ্য বিদায়ী বছরের শুরুতে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল এ শিল্প। বছরের শুরুতেই আবাসন মেলা বাবদ অর্ডার আসে ৪০০ কোটি টাকার বেশি। তবে এ স্বস্তি বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেনি। হঠাৎ করেই বৈশ্বিক অস্থিরতার কবলে পড়ে হু হু করে বেড়ে যায় নির্মাণসামগ্রীর দাম। নির্মাণের অন্যতম উপাদান রডের দাম (প্রতি টন) ইতিহাসে প্রথমবার ৯০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হয় বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল। টাইলসের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। সিমেন্টের বাজারেও অস্থিরতা দেখা দেয় বছরজুড়েই। তেমন প্রভাব না পড়লেও দাম বাড়ার সুযোগে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয় ইট, বালু ও পাথরের। দামের এসব প্রভাব পড়ে ফ্ল্যাটের ওপর। মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায় আবাসন খাত। দাম বেড়ে যায় ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্টের। বর্ধিত দামের কারণে বিক্রি কমে অর্ধেকে নেমে আসে। নতুন বছরেও এ ধারা অব্যহত থাকবে এমনটাই শঙ্কায় রয়েছে খাত ব্যবসায়িরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে যে মুদ্রাস্ফীতি তৈরি হয়েছে তার একটা বড় প্রভাব আছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও কমেছে। নতুন ড্যাপে ভবনের উচ্চতা এবং পরিধি এলাকা ভেদে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। ফলে আবাসন ব্যবসায়ীরাও বাধ্য হচ্ছেন অ্যাপার্টমেন্টের দাম বাড়াতে। নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি, চলমান মুদ্রাস্ফীতি এবং নতুন ড্যাপের (ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান) কারণে ফ্ল্যাটের দর এক বছরে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয়ের পরিমাণ গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে কম বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
এতে বিনিয়োগ করেও টাকা আটকে যায় আবাসন ব্যবসায়ীদের। আবাসন ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই লোকসানে পড়েন। এদিকে বছরের শেষ সময়ের আবাসন মেলা সংকট কিছুটা কমিয়ে দেয়। রেডি ফ্ল্যাটের বুকিংয়ে বিক্রি বাড়ে। চলমান কোনো প্রকল্প না থাকায় নতুন বছরে বাড়তি দামেই নির্মাণসামগ্রী নিয়ে তৈরি করতে হবে ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট, দামও অর্ধেক বেড়ে যাবে। এতে বিক্রি কমবে ফ্ল্যাটের, টাকা বিনিয়োগ করেও অলস পড়ে থাকবে প্রকল্প। সব মিলিয়ে আবাসনে আগামীতে নানা শঙ্কা আছে ব্যবসায়ীদের। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজউকের কারণে চার-পাঁচ মাস প্ল্যান পাস নেই। ব্যবসায়ীদের রেডি কোনো ফ্ল্যাট নেই, সব বিক্রি হয়ে গেছে। নির্মাণসামগ্রীর চড়া দামের কারণে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা আগের মতো নতুন প্রকল্প শুরু করতে পারছেন না। যারা নতুন করে প্রকল্প শুরু করেছেন সবাই বেশি দামে নির্মাণসামগ্রী কিনেছেন। ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপসংক্রান্ত রাজউকের নতুন নীতিমালার কারণে নতুন ভবনের আয়তন সংকুচিত হয়ে আসছে। ভবনে ফ্ল্যাটের সংখ্যাও কমছে।
সব মিলিয়ে সামনের এ বছরে আরো বাড়তে পারে ফ্ল্যাটের দাম। এতে ক্রেতার ওপর চাপবে বর্ধিত দামের বোঝা। ফ্ল্যাটের দাম বেশি হওয়ায় বিক্রিও কমে যাবে। অন্যদিকে ফ্ল্যাটের দাম বাড়ার প্রভাব পড়বে ভাড়াটিয়াদের ওপরও। তাদের বেশি ভাড়া দিয়েই বসবাস করতে হবে। আবার নিত্যপণ্যের দামও বেশি। এসব কারণে নতুন বছরে টাকা সঞ্চয়ে সাবলেটকে বেছে নিতে পারে একটা বড় অংশ। এতে বলা যায় এ বছর সাবলেটের সংখ্যাও বেশি হবে।
এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউজিং এসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) সহসভাপতি (প্রথম) কামাল মাহমুদ বলেন, নতুন ড্যাপের প্রজ্ঞাপন জারির পর প্রায় চার মাসে রিহ্যাব সদস্যরা জমির মালিকের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে যেতে পারেনি। কেউ নতুন করে প্ল্যান পাস করেনি। পুরনো প্রকল্পগুলো নিয়েই অনেকে কাজ করছেন। যদিও রেডি প্রকল্প অনেকটাই শেষ হয়েছে। ফলে নতুন বছরে ফ্ল্যাটের সংকট তৈরি হবে এবং দাম বাড়বে। তিনি বলেন, নতুন ড্যাপের ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) হ্রাসের ফলে মূল ঢাকায় বেশির ভাগ ভবন হবে চার থেকে পাঁচতলা। ফলে নতুন বছরে আবাসন সংকট আরো প্রকট হবে। উচ্চহারে বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম এবং আকাশচুম্বি হবে বাড়িভাড়া। কারণ ফ্ল্যাটের চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে। ব্যবসা কমে যাবে, বলা যায় আবাসন খাতে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
২০২২ সালে কমেছে কেনা-বেচা : ডিরেক্টরেট অব রেজিস্ট্রেশনের দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের সবগুলো সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয় চুক্তির নিবন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার আওতাধীন এলাকায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বিক্রয় চুক্তির নিবন্ধন হয়েছে।
গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয় চুক্তির নিবন্ধন হয়েছে। ২০২০ সালে প্রায় ৩১ হাজার ৫০০ কোটি, ২০১৯ সালে প্রায় ৩৮ হাজার কোটি এবং ২০১৮ সালে প্রায় ২৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকার অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয় চুক্তির নিবন্ধন হয়েছে।
অর্থের উৎস অপ্রকাশিত থাকার সুযোগ উঠিয়ে দেয়ার প্রভাব : ২০২২ অর্থবছরে রাজস্ব বোর্ড আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ করে দেয় টাকার উৎস কোথা থেকে এসেছে তাতে নজর না দিয়েই। রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামীন কাজল মনে করেন, এ অর্থবছরের বাজেটে এই সুযোগ বাদ দিয়ে দেয়ায় আবাসন খাতের বিক্রি ধীর হয়ে পড়েছে।
২০১২ সাল থেকে প্রতি বছর আবাসন খাতে গড়ে দেড় লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। ২০২২ অর্থবছরে অতিরিক্ত আরো ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে টাকার উৎস গোপন রাখা বিনিয়োগকারীদের ক্ষমা ঘোষণা করায়। সব মিলিয়ে এ বছর আবাসন খাতে নতুন বিনিয়োগ এক লক্ষ কোটি টাকার নিচে নেমে আসতে পারে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়